TOP 5: আগামী ৯ জুন টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) আঙিনায় মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত ও পাকিস্তান (IND vs PAK)। উপমহাদেশের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বৈরথ ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়েছে সুদূর মার্কিন মুলুকেও। নিউ ইয়র্ক অঞ্চলে উপমহাদেশের অনেকে বাস করেন। তাঁদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে টিকিটের। নতুন দেশে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয় তুলে নিতে মরিয়া যুযুধান দুই শিবিরও।
ভারত ইতিমধ্যেই গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচ খেলে ফেলেছে। আয়ারল্যান্ডকে দুরমুশ করে রবিবারের জন্য রণহুঙ্কার দিয়ে রেখেছে তারা। অন্যদিকে পাকিস্তান ৬ তারিখ নামছে আয়োজক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক ফর্ম এগিয়ে রাখছে ভারতকেই, কিন্তু ক্রিকেটের এল-ক্লাসিকোতে ফর্ম নয় বরং মানসিকতাই যে আসল, তা প্রমাণিত হয়েছে বহুবার। টুর্নামেন্টের ‘মার্কি’ ম্যাচের রং বদলে দিতে পারেন বেশ কয়েকজন দুরন্ত ক্রিকেটার।
Read More: T20 World Cup: ইতিহাস গড়লো উগান্ডা, পাপুয়া নিউ গিনি’র বিরুদ্ধে ছিনিয়ে নিলো প্রথম জয় !!
বিরাট কোহলি-হারিস রউফ-
২০২২-এর টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup) ভারত বনাম পাকিস্তান (IND vs PAK) ম্যাচের কথা মনে করলেই ক্রিকেটজনতার মানসপটে ভেসে আসবে হারিস রউফকে মারা বিরাট কোহলির (Virat Kohli) জোড়া ছক্কার কথা। ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলে মারা ঐ দুটি ছয়ই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। পিছিয়ে পড়া টিম ইন্ডিয়া জায়গা করে নেয় চালকের আসনে। বিশেষ করে ওভারের পঞ্চম বলে যেভাবে হারিসের শর্ট বল এগিয়ে এসে ঠিক তাঁর মাথার উপর দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন কোহলি, তা ‘শট অফ দ্য টুর্নামেন্ট’ আখ্যা পেয়েছিলো।
বিরাটের জোড়া ছক্কা হারিসের (Haris Rauf) আত্মবিশ্বাস চূর্ণ করেছিলো মেলবোর্নের মাঠে। এরপর এশিয়া কাপ ও ওডিআই বিশ্বকাপের আসরে দুজনের দেখা হলেও শেষ হাসি হেসেছেন বিরাটই। এর মধ্যে এশিয়া কাপে শতরান করেছিলেন তিনি। দুই বছরের ব্যবধানে এটাই তাঁদের টি-২০র ময়দানে প্রথম সাক্ষাৎ। দাপট বজায় রাখবেন কোহলি (Virat Kohli)? নাকি বদলা নিতে পারবেন রউফ? হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বীতা দেখতে মুখিয়ে সকলে।
রোহিত শর্মা-শাহীন আফ্রিদি-
২০২১ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ, মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান (IND vs PAK)। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইতে পাকিস্তানকে শুরুতেই অ্যাডভান্টেজ এনে দিয়েছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি (Shaheen Shah Afridi)। ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মাকে তিনি সাজঘরে ফেরার শূন্য রানে। শাহীনের গতি ও স্যুইং-এ বিপর্যস্ত রোহিতের পায়ে আছড়ে পড়েছিলো পাকিস্তানের বাম হাতি পেসারের নিখুঁত ইয়র্কার। এরপরেই দুইজনের দ্বৈরথ নয়া মাত্রা পায়।
২০২৩-এর এশিয়া কাপেও বাজিমাত করেছেন শাহীন’ই (Shaheen Shah Afridi)। তাঁর ইনস্যুইং-এ পরাস্ত হয়ে বোল্ড হয়েছিলেন রোহিত (Rohit Sharma)। করেছিলেন ২২ বলে মাত্র ১১ রান। ভারত অধিনায়ক বদলা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ওডিআই বিশ্বকাপে। আহমেদাবাদের মাঠে শাহীন-সহ গোটা পাক বোলিং-এর বিরুদ্ধেই চড়াও হন তিনি। করেন ঝোড়ো ৮৬ রান। তবে সেই যাত্রাতেও শাহীনের বলেই উইকেট হারিয়েছিলেন তিনি। ২০২৪-এর টি-২০ বিশ্বকাপ এই প্রতিদ্বন্দ্বীতার ইতিহাসে কোন নতুন অধ্যায় যোগ করে সেদিকেই থাকবে নজর।
বিরাট কোহলি-মহম্মদ আমির-
২০২৪-এর টি-২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তান বোলিং লাইন-আপে ফিরেছেন মহম্মদ আমির (Mohammad Amir)। বাম হাতি পেসারের সাথে ভারতের মহাতারকা বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ‘ডুয়েল’ ক্রিকেটদুনিয়ার অন্যতম সেরা প্রতিদ্বন্দ্বীতা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গত দশকে যতবার মুখোমুখি হয়েছেন তাঁরা, চেষ্টা করেছেন একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ায়। কখনও জিতেছেন ভারতের মহাতারকা, কখনও আবার শেষ হাসি হেসেছেন পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার।
২০১৬ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাত্র ৮৪ রান তাড়া করতে নেমে একটা সময় আমিরের (Mohammad Amir) স্যুইং-এর সামনেমুখ থুবড়ে পড়েছিলো ভারত। ত্রাতা হয়ে ওঠেন কোহলি। পাক পেসারকে সামলে দলকে এনে দেন জয়। এছাড়াও ২০১৬ সালেই ইডেন গার্ডেন্সে বৃষ্টিভেজা পিচে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা আমিরের সাথে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান তিনি। তাঁর অনবদ্য অর্ধশতক জেতায় ভারতকে। বিরাটের (Virat Kohli) বিপক্ষে আমির সফল হয়েছেন ২০১৭-র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে। তাঁর স্যুইং-এর দিশা খুঁজে না পেয়ে উইকেট হারান কোহলি। টি-২০ বিশ্বকাপেও নজর থাকবে তাঁদের দিকে।
বাবর আজম-আর্শদীপ সিং-
আগামী ৯ তারিখের ভারত-পাক ম্যাচে নজর থাকবে আর্শদীপ সিং (Arshdeep Singh) ও বাবর আজমের (Babar Azam) দ্বৈরথের দিকে। ভারতের তরুণ বাম হাতি পেসার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নিজের ওভারের প্রথম বলেই আউট করেছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ককে। মেঘলা আবহাওয়ায় আর্শদীপের স্যুইং-এর দিশা খুঁজে পান নি বাবর (Babar Azam)। তাঁর ব্যাটের নাগাল এড়িয়ে বল আছড়ে পড়েছিলো প্যাডে। মর্যাদার লড়াইতে ফিরতে হয়েছিলো ‘গোল্ডেন ডাক’ করে।
২০২২-এ ভারত-পাক (IND vs PAK) ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন আর্শদীপ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ বিশ্বকাপের গ্রুপ-এ’র প্রথম ম্যাচে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তিনি। পাওয়ার প্লে’তে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন নিউ ইয়র্কের পিচ’কে। মেলবোর্নের স্মৃতি যাত্র নিউ ইয়র্কে না ফেরে তা নিশ্চিত করতে হলে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে বাবরকে।
বাবর আজম-কুলদীপ যাদব-
পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমের (Babar Azam) কাছে ত্রাস হয়ে উঠতে পারেন ভারতের চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব। বাম হাতি স্পিনের বিরুদ্ধে এমনিতেই খানিক দূর্বলতা রয়েছে বাবরের। ইতিপূর্বে দুইবার কুলদীপ যাদবের (Kuldeep Yadav) ঘূর্ণির শিকার হয়েছেন তিনি। তারমধ্যে ২০১৯ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে ম্যাঞ্চেস্টারের মাঠে যে বলটিতে বাবরকে (Babar Azam) বোল্ড করেছিলেন কুলদীপ, তাঁকে ‘স্বপ্নের ডেলিভারি’ বলেছেন খোদ তিনিই।
পাক তারকার বিস্ফারিত চোখে পিচের দিকে চেয়ে থাকার দৃশ্যটি আজও মাঝেমধ্যেই ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। গত এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কুলদীপ (Kuldeep Yadav) ৫ শিকার নিলেও ঝুলিতে জমা পড়ে নি বাবরের উইকেট। নিউ ইয়র্কের যে মাঠে খেলা হতে চলেছে ভারত বনাম পাকিস্তান (IND vs PAK) ম্যাচটি, তাতে স্পিন কতদূর প্রভাব ফেলতে পারবে সে সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে, তবে কুলদীপের মুখোমুখি হওয়ার সময় বাবর যে বাড়তি সতর্ক থাকবেন তা নিশ্চিত।