ঈশান কিষণ (Ishan Kishan) ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সংঘাত শুরু হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে। প্রায় আড়াই মাস কেটে যাওয়ার পরেও তা মেটার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না আপাতত। বরং মাঝেমধ্যেই নতুন মোড় নিচ্ছে সমস্যা। ঘটনার সূত্রপাত ডিসেম্বরের শেষ দিকে। টি-২০ সিরিজে একটি ম্যাচেও প্রথম একাদশে সুযোগ পান নি ঈশান (Ishan Kishan)। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে বিসিসিআই-এর কাছে অব্যাহতি চেয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ঝাড়খণ্ডের ক্রিকেটার জানিয়েছিলেন যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে তাঁর। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর ছুটি মঞ্জুর করেছিলো বোর্ড। কিন্তু এরপর কখনও তাঁকে দেখা গিয়েছে দুবাইয়ের বর্ষবরণের পার্টিতে আবার কখনও অংশ নিয়েছেন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে। এতেই চটেছিলো বোর্ড।
ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজে রাখা হয় নি ঈশান কিষণকে (Ishan Kishan)। সুযোগ দেওয়া হয় নি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের সিরিজেও। বিশাখাপত্তনমে সাংবাদিক সম্মেলনে ঈশানকে নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোচ রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) স্পষ্ট জানান যে দলে ফিরতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে পুনরায় যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে ঈশানকে। সচিব জয় শাহ’র (Jay Shah) তরফ থেকেও বার্তা পাঠানো হয়েছিলো তাঁর কাছে। অনুরোধ করা হয়েছিলো রাজ্য দল ঝাড়খণ্ডের হয়ে চলতি রঞ্জি ট্রফিতে অংশ নেওয়ার জন্য। কোনো কথাই কানে তোলেন নি তিনি। ঈশান উড়ে গিয়েছিলেন বরোদা। সেখানে হার্দিক (Hardik Pandya) ও ক্রুণাল পান্ডিয়ার সাথে শুরু করেছিলেন আইপিএলের প্রস্তুতি। কোচ ও বোর্ডে সচিবের নির্দেশ অমান্য করায় ঈশানের (Ishan Kishan) বিরুদ্ধে এবার ব্যবস্থা নেওয়ার পথে হাঁটছে বিসিসিআই।
Read More: IND vs ENG: “এর জন্য অবশ্যই বিরাটকে…”, আকাশদীপের দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কৃতিত্ব কোহলিকে দিলেন দীনেশ কার্তিক !!
শাস্তির মুখে শ্রেয়স আইয়ার’ও-
গত দেড়-দুই বছরে ক্রিকেট কেরিয়ারে বেশ ওঠানামার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer)। পিঠের বালজিং ডিস্কের সমস্যার কারণে লম্বা সময় ছিলেন মাঠের বাইরে। করাতে হয় অস্ত্রোপচারও। সেপ্টেম্বরে প্রত্যাবর্তনের পর ভারতীয় দলে নিজের জায়গা ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ খেলেছেন। বেশ কিছু টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজেও দলে ছিলেন। শ্রেয়সকে (Ishan Kishan) রেখেই ভারত ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও রণনীতি সাজিয়েছিলো প্রথম দুই টেস্টে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ছন্দ ফিরে পেলেও বাকি দুই ফর্ম্যাটে হতাশ করেছেন শ্রেয়স। বিশেষ করে লাল বলের ফর্ম্যাটে দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইংল্যান্ড-দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই রানের মুখ দেখেন নি তিনি। বাধ্য হয়েই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ তিন টেস্ট থেকে নির্বাচকেরা বাদ দেন তাঁকে।
শ্রেয়সকেও (Shreyas Iyer) নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো ছন্দ ফিরে পেতে রঞ্জির ময়দানে ফিরতে। কিন্তু এক মাস পরে রয়েছে আইপিএল। তার আগে আর ঘরোয়া ক্রিকেটের আঙিনায় ফিরতে রাজী হন নি তিনি। অসমের বিরুদ্ধে রঞ্জিতে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছিলো মুম্বইয়ের। সেখানে খেলেন নি শ্রেয়স। এমনকি কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সরে দাঁড়াতে পিঠের চোটের কথাও বোর্ডকে জানিয়েছিলেন তিনি। শ্রেয়সের ফিটনেস নিয়ে পরস্পরবিরোধী নানা তথ্য ভাসছে ক্রিকেটমহলের অন্দরে। জানা গিয়েছে যে শ্রেয়স (Shreyas Iyer) নিজে চোটের কথা জানালেও বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির (NCA) চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তেমন গুরুতর কিছু পান নি। তাঁরা শ্রেয়সকে মাঠে নামার ছাড়পত্রও দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও তিনি মাঠে না নামায় ক্ষোভ বেড়েছে বিসিসিআই-এর অন্দরে।
চুক্তি বাতিল হতে পারে ঈশান-শ্রেয়সদের-
দিনকয়েক আগে এক চিঠিতে ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে জয় শাহ (Jay Shah) লিখেছেন, “এখন একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যেটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু খেলোয়াড় ঘরোয়া ক্রিকেটের চেয়ে আইপিএলকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এই পরিবর্তনটা অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘরোয়া ক্রিকেটের ভিতের উপরেই বরাবর ভারতীয় ক্রিকেট দাঁড়িয়ে ছিলো। খেলা সম্পর্কে আমাদের যে দর্শন, তাতে কখনোই এর উপর থেকে গুরুত্ব কমানো হয় নি। আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে ঘরোয়া ক্রিকেটই ভারতের ক্রিকেটের মেরুদন্ড এবং সেটাই ভারতীয় দল’কে পুষ্ট করে। আমাদের দর্শন পরিষ্কার- প্রত্যেক ক্রিকেটার যাঁরা ভারতের হয়ে খেলতে চান, তাঁদের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেদের প্রমাণ করতেই হবে।”
কেন্দ্রীয় চুক্তির অধীনে থাকা ক্রিকেটারদের ফিট থাকলে অথবা জাতীয় দলের ম্যাচ না থাকলে ঘরোয়া ক্রিকেটে যে অংশ নিতেই হবে তা নিশ্চিত করেছেন বিসিসিআই সচিব। ঈশান কিষণ (Ishan Kishan) ও শ্রেয়স আইয়ার সেই নির্দেশ অবজ্ঞা করায়, শাস্তিস্বরূপ তাঁদের সাথে বোর্ডের চুক্তি বাতিল করা হতে পারে। আপাতত বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তির বি-গ্রেডে রয়েছেন শ্রেয়স (Shreyas Iyer)। বার্ষিক ৩ কোটি টাকা তিনি পান। ঈশান রয়েছেন সি-গ্রেডে। তিনি পান বার্ষিক ১ কোটি টাকা। চুক্তি বাতিল হলে সেই অর্থ আর পাবেন না তাঁরা। গত বছরের ২৬ মার্চ ২০২২-২০২৩ মরসুমের কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষণা করেছিলো বোর্ড। আগামী মার্চ মাসেই ২০২৩-২০২৪ মরসুমের কেন্দ্রীয় চুক্তি ঘোষিত হওয়ার সম্ভাবনা। তখনই অবসান ঘটবে যাবতীয় জল্পনার। তবে ঈশান ও শ্রেয়সের প্রত্যাবর্তনের রাস্তা যে কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে, তা নিশ্চিত করে বলাই যায়।