IPL 2024: গতকাল হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সাক্ষী থাকলো এক ঐতিহাসিক ম্যাচের। আইপিএলের (IPL) আসরে মুখোমুখি হয়েছিলো সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। মরসুমের প্রথম ম্যাচে হেরেছিলো দুই শিবিরই। তাই প্রথম পয়েন্টের সন্ধানে মরিয়া হয়েই মাঠে নেমেছিলো তারা। ধুন্ধুমার লড়াই শেষে বিজয়ীর তকমা নিয়ে মাঠ ছাড়লো ‘হোম টিম’ সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ’ই। টসে জিতেছিলো মুম্বই। প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। মুম্বই বোলিং নিয়ে ছেলেখেলা করে স্কোরবোর্ডে ২৭৭ রান তুলে দেন ট্র্যাভিস হেড, অভিষেক শর্মা, হেনরিখ ক্লাসেনরা। গড়েন নতুন আইপিএল রেকর্ড। রান তাড়া করতে নেমে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছিলো মুম্বই’ও। ২৪৬ করে থামে তারা। পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের ৩১ রানের ব্যবধানে হারের ময়নাতদন্ত করতে বসে অধিনায়ক হার্দিককেই ভিলেন ঠাওরাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। হার্দিকের এই তিন ভুল উঠে আসছে পরাজয়ের নেপথ্যে কারণ হিসেবে।
Read More: IPL 2024: “নিজেদের এই বড় ভুলের জন্যই…”, হায়দরাবাদের কাছে লজ্জাজনক হারের পর বড় রহস্য ফাঁস হার্দিক পান্ডিয়ার !!
বুমরাহ’কে সঠিক ভাবে ব্যবহার না করা-
গুজরাতের বিরুদ্ধে মরসুমের প্রথম ম্যাচেও জসপ্রীত বুমরাহ’কে পাওয়ার-প্লে’তে সঠিকভাবে ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছিলো অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার বিরুদ্ধে। প্রথমে লুক উড এবং নিজে বোলিং-এর দায়িত্ব নিয়েছিলেন হার্দিক। বুমরাহের হাতে বল তুলে দিতে দেরী করেন তিনি। শুরুর ওভারে ঋদ্ধিমান সাহা ও শুভমান গিল দ্রুত যে রান তুলে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা শেষে তফাৎ গড়ে দেয় দুই শিবিরের মধ্যে। সানরাইজার্সের বিরুদ্ধেও সেই ভুল আরও একবার করলেন হার্দিক। রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও বুমরাহ’কে বোলিং-এ আনতে বেশ দেরী করেন তিনি। দলের সেরা পেস অস্ত্র আক্রমণে আসার আগেই ৪০ রান স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলেছিলো সানরাইজার্স। এরপর আর উইকেট তুলে মুম্বইকে সাফল্য এনে দেওয়া সম্ভব হয় নি বুমরাহ’র পক্ষে।
হার্দিক, মাপাখা, পীয়ূষ চাওলা, শামস মুলানি-গতকালের ম্যাচে সকলের ইকোনমি রেট ১৫ ছুঁইছুঁই বা তার বেশী। ব্যতিক্রম কেবল জসপ্রীত বুমরাহ। নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ৫ রান খরচ করেছিলেন তিনি। তার পর কোনো অজ্ঞাত কারণে তাঁকে সরিয়ে দেন হার্দিক। বাকি ৩ ওভার তিনি করেন ইনিংসের শেষ দিকে। উইকেট না পেলেও গতকালের ব্যাটিং সহায়ক পিচে ৯ ইকোনমি রেটে তাঁর ৪-০-৩৬-০’র স্পেল’কে চমৎকার আখ্যা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সাথে থাকছে আক্ষেপ’ও। যদি শুরুতেই বুমরাহ বোলিং করে কিছু উইকেট এনে দিতে পারতেন, তাহলে হয়ত মুখ থুবড়ে পড়তে হত না মুম্বইকে। ম্যাচের বিশ্লেষণ করতে বসে সরাসরি হার্দিকের দিকে আঙুল তুলেছেন ইরফান পাঠান ও ব্রেট লি। দুজনেরই মত পাওয়ার-প্লে’তে অন্তত ২ ওভার করা উচিৎ বুমরাহ’র।
আক্রমণের মুখে এগিয়ে দিলেন তরুণ কোয়েনা’কে-
লুক উড চোট পাওয়ায় বদলি হিসেবে গতকাল অভিষেক হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়েনা মাপাখা’র। সম্প্রতি অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন মাপাখা। প্রতিভাবান তরুণের আইপিএল যাত্রাপথের সূচনাটা অবশ্য ভালো হলো না। তাঁর হাতেই নতুন বল তুলে দিয়েছিলেন হার্দিক। কিন্তু শুরু থেকেই ১৭ বর্ষীয় কিশোরের উপর চড়াও হন ট্র্যাভিস হেড। একই ওভারে দুটি চার ও দুটি ছক্কা মারেন তিনি। প্রচুর রান খরচ করে ফেলার পরেও বোলিং থেকে মাপাখা’কে সরান নি হার্দিক। বুমরাহ, পীয়ূষ চাওলা এমনি হার্দিকের নিজের ওভারও তখন বাকি ছিলো। কিন্তু তাও মাপাখা’কেই টানা বোলিং করিয়ে যান।
আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা তরুণের পক্ষে আর ম্যাচে ফেরাও সম্ভব হয় নি গতকাল। ৪ ওভারে ১৬.৫ ইকোনমি রেটে ৬৬ রান খরচ করেন তিনি। পান নি একটিও উইকেট। হেড, অভিষেক শর্মা’রা যখন বিধ্বংসী বোলিং করছিলেন, তখন বছর ১৭’র কিশোর’কে এগিয়ে দেওয়া আদৌ যুক্তিযুক্ত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। প্রোটিয়া তরুণের পাশে যদিও দাঁড়িয়েছে তাঁর ফ্র্যাঞ্চাইজি। এমনকি আইপিএলের অন্যান্য দলগুলিও ট্যুইট করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও বলা হচ্ছে যে তিনি মাঠে পাশে পান নি খোদ তাঁর অধিনায়ককে। গতকালের ম্যাচের পর ট্যুইট করে কিংবদন্তি ডেল স্টেইন লেখেন, “মাপাখা বুঝতে পারছে অনুর্দ্ধ-১৯ আর পেশাদার ক্রিকেটের তফাৎ কতটা। ব্যাপ্টিজিম অফ ফায়ার।”
ব্যাট হাতে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হার্দিক-
২৭৮ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে হত মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে। প্রতি ওভারে প্রয়োজন ছিলো প্রায় ১৪ রান। এমতাবস্থায় চেষ্টার ত্রুটি রাখেন নি ঈশান কিষণ, রোহিত শর্মা’রা। প্রথম ওভার থেকে মারমুখী ছিলেন দুজনেই। ঈশান মাত্র ১৩ বলে ২৬১.৫৪ স্ট্রাইক রেটে করেন ৩৪ রান। রোহিত’ও প্যাট কামিন্সের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ১২ বলে ২৬ রান। স্ট্রাইক রেট ছিলো ২১৭-এর কাছাকাছি। এরপর তিলক বর্মা, নমন ধির’রাও ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। তিলকের ৩৪ বলে ৬৪ রানের ইনিংসে স্ট্রাইক রেট ছিলো ১৮৯-এর কাছে। নমন ধির মাত্র ১৪ বলে করেন ৩০। এমনকি সাত ও আটে নামা টিম ডেভিড ও রোমারিও শেপার্ড’ও যথাক্রমে ১৯০.৯১ ও ২৫০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেন। ব্যতিক্রম কেবল হার্দিক। ১২০-র বেশী স্ট্রাইক রেট ওঠে নি তাঁর।
গুজরাতের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে সাত নম্বরে ব্যাটিং করেছিলেন হার্দিক। গতকাল টিম ডেভিডকে পিছনে ঠেলে দিয়ে নিজে নামেন ছয় নম্বরে। ব্যাটিং অর্ডারে হার্দিকের নিজেকে উপরে তুলে আনার সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরলো মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জন্য। প্রয়োজনের মুহূর্তে বড় শট খেলতে পারেন নি তিনি। বিশেষ করে জয়দেব উনাদকাটের স্লোয়ার বাউন্সারগুলিতে বেশ সমস্যায় পড়তে দেখা যায় তাঁকে। শেষমেশ ধৈর্য্য হারিয়ে ব্যাট চালাতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন। ২০ বলে ২৪ করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে হার্দিককে। কটাক্ষ করে প্রাক্তনী ইরফান পাঠান সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “গোটা দল যখন ২০০ স্ট্রাইক রেটে খেলছে, একজন অধিনায়ক কখনোই পারেন না ১২০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে।”