বিরাট কোহলি, নিঃসন্দেহে শচীনোত্তর ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টারবয়। ২০০৮ সালে অধিনায়ক হিসেবে যখন অনূর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তখন থেকে লাইমলাইটে রয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালে ভারতীয় দলে অভিষেক হয় কোহলির (Virat Kohli)। দীর্ঘ দেড় দশকের কেরিয়ারে ব্যাট কথা বলেছে তাঁর হয়ে। একের পর এক রেকর্ড গড়েছেন, ভেঙেছেন আপন খেয়ালে। রানের পাহাড় গড়েছেন। শতরানের পর শতরান করে আদায় করে নিয়েছেন ‘কিং কোহলি’ ডাকনাম। বর্তমানে ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাট মিলিয়ে ৭৫টি আন্তর্জাতিক শতরান তাঁর। রান ছাড়িয়েছে ২৫০০০-এর গণ্ডী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে আইপিএলের মত প্রতিযোগিতাতেও কোহলির (Virat Kohli) রমরমা। টুর্নামেন্টের সফলতম ব্যাটার তিনি। এক মরসুমে সবচেয়ে বেশী রান করার কৃতিত্বও তাঁর। তাঁকে ‘মডার্ন মাস্টার’ বলে মেনে নিতে তাই অসুবিধা নেই কারও।
ক্রিকেটার হিসেবে যেমন নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছেন কোহলি (Virat Kohli), তেমনি অধিনায়ক হিসেবেও ভারতের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ঠাঁই হতে পারে তাঁর। প্রথম কোহলির নেতৃত্বেই অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হারিয়ে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি জিতেছিলো ভারত। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতকে দীর্ঘসময় র্যাঙ্কিং-এ পয়লা নম্বরে রাখতে সাহায্য করেছিলো তাঁর আগ্রাসী অধিনায়কত্ব। পরিসংখ্যানের হিসেবেও দেশের সেরা টেস্ট ক্যাপ্টেন তিনিই। যদিও সাদা বলের খেলায় বড় প্রতিযোগিতাগুলিতে কোহলির (Virat Kohli) নেতৃত্বাধীন ভারত বেশ কয়েকবার দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছে। দীর্ঘ অধিনায়ক জীবনে বেশ কিছু নতুন প্রতিভার সাথে ভারতীয় দলকে পরিচিত করে দিয়েছেন কোহলি। পাশাপাশি তাঁর জন্যই কেরিয়ারে ইতি পড়েছে বেশ কয়েকজন তারকার। তেমনই পাঁচ জনের হদিশ রইলো এই প্রতিবেদনে।
IPL 2023 | CSK Squad | KKR Squad | MI Squad | RCB Squad | SRH Squad | RR Squad | GT Squad | LSG Squad | DC Squad | PBKS Squad | IPL All Team Squad | WPL 2023 | Asia Cup 2023
যুবরাজ সিং-

তালিকায় প্রথমেই যাঁর নাম আসবে তিনি যুবরাজ সিং (Yuvraj Singh)। ভারতের সর্বকালের সেরা ম্যাচ উইনারদের তালিকায় অবশ্যই জায়গা করে নেবেন যুবরাজ। ২০০৭ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ জয় বিশেষ অবদান রেখেছিলেন তিনি। ১২ বলে অর্ধশতক করেছিলেন, স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় বলে হাঁকিয়েছিলেন ৬ ছক্কা। ২০১১ সালের একদিনের বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষেত্রেও বিশেষ অবদান ছিলো তাঁর। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে জিতে নিয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের তকমা। শরীরে দুরারোগ্য ক্যান্সার বাসা বাঁধার পরেও মাঠে জাতীয় দলের প্রতি নিজের কর্তব্যে অবিচল ছিলেন তিনি। কর্কট রোগকে হারিয়ে মাঠে ফিরে আসেন তিনি। খেলা চালিয়ে যান ভারতের হয়ে।
IPL 2023 | CSK Squad | KKR Squad | MI Squad | RCB Squad | SRH Squad | RR Squad | GT Squad | LSG Squad | DC Squad | PBKS Squad | IPL All Team Squad | WPL 2023 | Asia Cup 2023
তবে ২০১৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে যুবরাজের (Yuvraj Singh) মন্থর ব্যাটিং বেশ সমালোচিত হয়েছিলো। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২১ বলে ১১* রান করেন তিনি। এরপর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জায়গা নড়বড়ে হতে শুরু করে যুবির। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বেশ কয়েকটি ভালো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সেই বছরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষবার ভারতের জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন তিনি। বাদ পড়ার আগে বেশ ভালো পারফর্ম করেছিলেন।
তিনি নিজেই জানিয়েছেন, “ আমি ভাবতেও পারি নি যে শেষ ৮-৯ ম্যাচের মধ্যে দুটিতে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরষ্কার পেয়েও আমি বাদ পড়ে যাবো দল থেকে। চোট পেয়েছিলাম। আমায় বলা হয়েছিলো শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য প্রস্তুত হতে। তারপরই হঠাৎ ইয়ো-ইয়ো টেস্টের কথা শোনা যেতে লাগলো। সেই জন্য নাকি আমি বাদ। ৩৬ বছর বয়সে আমাকে আবার ইয়ো-ইয়ো টেস্টের জন্য প্রস্তুত হতে হয়েছিলো। যখন সেই পরীক্ষায় পাস করলাম, বলা হলো ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে।” ম্যানেজমেন্টের পছন্দের তালিকায় যুবি যে ছিলেন না তা স্পষ্ট তাঁর বয়ান থেকেই। তৎকালীন অধিনায়ক হিসেবে কোহলি (Virat Kohli) যদি যুবির পাশে দাঁড়াতেন তাহলে হয়ত তাঁর কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হতে পারত। ২০১৯ সালে অবসর ঘোষণা করেন যুবরাজ।
গৌতম গম্ভীর-

বিরাট কোহলি (Virat Kohli) যেদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শতরান করেছিলেন সেইদিন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচের সেরার পুরষ্কার গিয়েছিলো গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) ঝুলিতে। সেই পুরষ্কার তরুণ সতীর্থকে দিয়ে দিয়েছিলেন গৌতি। এই সুসম্পর্ক সময়ের সাথে সাথে মুছে গিয়েছে। বর্তমানে কোহলি ও গম্ভীরের অবস্থান একে অন্যের সম্পূর্ণ উল্টোদিকে। ২০১৩ সালে মাঠের মধ্যে বাদানুবাদে জড়িয়েছিলেন দুজনে। কোহলি (Virat Kohli) তখন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে। গম্ভীর কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) অধিনায়ক। এরপর গম্ভীর খেলা থেকে অবসর নিলেও ধারাভাষ্যকার হিসেবে বেশ কয়েকবার বিরাটের সমালোচনা করেছে। দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বীতার আগুন যে নেভেনি তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে দিনকয়েক আগের লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস (LSG) বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) ম্যাচে। লক্ষ্ণৌ মেন্টর গম্ভীরের সাথে ঝামেলা লাগে কোহলির।
২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল জয়ের নায়ক গম্ভীরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার খতম হওয়ার পিছনেও মনে করা হয় হাত রয়েছে কোহলির (Virat Kohli)। অধিনায়ক হিসেবে বিরাট সাদা বলের ক্রিকেটে ওপেনার হিসেবে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) এবং শিখর ধাওয়ানকেই (Shikhar Dhawan) গুরুত্ব দেওয়ার পথে হাঁটেন। টেস্টে কখনও মুরলী বিজয় আবার কখনও কে এল রাহুলকে তুলে আনা হয় ওপেনার হিসেবে। ধীরে ধীরে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় গম্ভীরকে (Gautam Gambhir)। ২০১৬ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর সুযোগ পান নি গম্ভীর।
সুরেশ রায়না-

এই তালিকায় তৃতীয় নাম সুরেশ রায়না (Suresh Raina)। বাঁ-হাতি মিডল অর্ডার ব্যাটার নিজের ধুন্ধুমার ব্যাটিং-এর পাশাপাশি চমকপ্রদ ফিল্ডিং-এর জন্যও প্রসিদ্ধ ছিলেন। প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্ট-একদিনের ক্রিকেট ও টি-২০ তে শতরানকারী ক্রিকেটার হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন রায়না। ২০১১ সালে ভারতের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni) অধিনায়ক থাকাকালীন যথেষ্ট ভরসা করতেন রায়নার ওপর। পাঁচ বা ছয় নম্বরে নেমে বহু ম্যাচে ভারতীয় দলকে জয় এনে দিয়েছেন রায়না। ‘টিম ইন্ডিয়া’র জার্সিতে খেলেছেন ২০০’র বেশী একদিনের ম্যাচ। ৭৮টি টি-২০। ২০১১ এবং ২০১৫ বিশ্বকাপেও অংশ নিয়েছেন তিনি।
ধোনি জমানা শেষ হয়ে বিরাটের (Virat Kohli) নেতৃত্বকাল শুরু হওয়ার পর থেকেই জাতীয় দলে জায়গা হারাতে শুরু করেন রায়না। আইপিএলের মত প্রতিযোগিতায় নিয়মিত ভালো পারফর্ম্যান্স করা সত্ত্বেও ভারতের নীল জার্সিতে খেলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। অবশেষে মহেন্দ্র সিং ধোনি যখন ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন, একই সাথে ভারতীয় দলকে বিদায় জানান রায়নাও (Suresh Raina)। ভারত যে আর কখনও তাঁকে ডাকবে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন তিনি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই ‘মেন ইন ব্লু’র থেকে বিদায় চেয়ে নেন তিনি।
রাহুল চাহার-

লেগস্পিনার রাহুল চাহারকে (Rahul Chahar) নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ’ই। কব্জীর মোচড়ে বলকে কথা বলাতে পারেন রাহুল। সমস্যায় ফেলতে পারেন ব্যাটারদের। ২০১৯ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলার সময় পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছিলেন তিনি। সেই বছর মুম্বইয়ের আইপিএল ট্রফি জয়ের পেছনে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিলেন তরুণ রাহুল চাহার (Rahul Chahar)। ১৩ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ইকোনমি রেট ছিলো মাত্র ৬.৫৫। অপ্রতিরোধ্য চাহারের মধ্যে ভবিষ্যতের তারকা হয়ে ওঠার সকল গুণ দেখেছিলেন ক্রিকেটলিখিয়েরা।
২০১৯ সালে ভারতের জার্সিতে টি-২০ অভিষেক হয়েছিলো তাঁর। একদিনের ক্রিকেটে দেশের জার্সি গায়ে চাপাতে অপেক্ষা করতে হয়েছিলো আরও দুই বছর। তবে ‘মেন ইন ব্লু’র হয়ে মাত্র ৬টি টি-২০ এবং একটি একদিনের ম্যাচ খেলারই সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর। কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে নিয়েছেন ৭ উইকেট। আর একদিনের ক্রিকেটে একমাত্র ম্যাচে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। পরিসংখ্যান খারাপ না হলেও ২০২১ এর পর থেকে জাতীয় দলে আর সুযোগ দেওয়া হয় নি রাহুল চাহার’কে (Rahul Chahar) । তৎকালীন অধিনায়ক কোহলি (Virat Kohli) ভরসা দেখাতে পারেন নি তাঁর ওপর।
আইপিএলে ধারাবাহিক সাফল্য এসেছে। ৬৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৬২ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চাহার নিয়েছেন ৭৩ উইকেট, লিস্ট-এ কেরিয়ারে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৮০ উইকেট এবং ঘরোয়া টি-২০তে ১১১ উইকেট। তবুও কামব্যাক করার সুযোগ পান নি রাহুল চাহার (Rahul Chahar)।
টি নটরাজন-

যেভাবে উল্কার গতিতে উত্থান হয়েছিলো, সেভাবেই যেন ভারতীয় ক্রিকেটের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গিয়েছেন টি নটরাজন (T Natarajan)। অস্ট্রেলিয়ায় পরিবর্ত বোলার হিসেবে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে সোজাসুজি ঢুকে পড়েন টেস্ট দলে। নটরাজনের স্বপ্নের সময় অবশ্য বেশীদিন স্থায়ী হয় নি। ২০২১ সালের পর আর ভারতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায় নি বাঁ-হাতি পেসারকে। কোহলি (Virat Kohli) অধিনায়ক থাকাকালীনই বাদ পড়েছিলেন। আর প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারেন নি তিনি।
ভারতের হয়ে একটি টেস্ট, ২ টি একদিনের ম্যাচ এবং ৪ টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ইয়র্কার দিতে পটু নটরাজন (T Natarajan) মাত্র ৪ টি-২০ খেলে নিয়েছেন ৭ উইকেট। একদিনের ক্রিকেট এবং টেস্ট ম্যাচে নিয়েছেন ৩ টি করে উইকেট। মাঝে চোটের কারণেও বেশ কিছুদিন মাঠ থেকে দূরে ছিলেন তিনি। এই মরসুমে সানরাইজার্স জার্সিতে আইপিএলে ভালো বোলিং করে পাদপ্রদীপের আলোয় ফেরার প্রচেষ্টায় রয়েছেন নটরাজন।
IPL 2023 | Australia Tour Of India 2023 | Cricket News Today | Fantasy Cricket | ICC T20 World Cup 2024 | ICC ODI World Cup 2023 | ICC Test Championship Final | IND vs AUS | WPL 2023 | Asia Cup 2023