নভেম্বর মাসের বিশ্বকাপ ফাইনালের পর থেকে জল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) ক্রিকেট ভবিষ্যৎ। বছর ছত্রিশের রোহিত টি-২০ ও ওডিআই ফর্ম্যাট থেকে ইতিমধ্যেই অব্যাহতি চেয়ে নিয়েছেন বোর্ডের থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সাদা বলের দুই ফর্ম্যাটেই ভারত তিনটি করে ম্যাচ খেললেও দেখা যায় নি রোহিতকে (Rohit Sharma)। আগামী জানুয়ারি’র ১১, ১৪ ও ১৭ তারিখ আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনটি টি-২০ রয়েছে টিম ইন্ডিয়ার। সেখানেও হিটম্যানকে দেখার সম্ভাবনা বেশ কম। আপাতত কেবল টেস্ট দলেই রয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে দেশের নেতৃত্বভার পেয়েছেন রোহিত শর্মা। কিন্তু সেঞ্চুরিয়নে প্রথম খেলায় যেভাবে পারফর্ম করেছেন তিনি, তাতে লাল বলের খেলাতেও কতদিন মেয়াদ তাঁর, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
Read More: India Womens Cricket Team: ‘ছয়ের ছক্কা’ মেরে ইতিহাস গড়লো ভারতের মহিলা ক্রিকেটাররা, ৫০ ওভারে তুললো ৪২০ রান !!
ব্যর্থ হয়ে সরতে পারেন জাতীয় দল থেকে-
একদিনের বিশ্বকাপে ভালো ফর্মে ছিলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। তিনি ধুন্ধুমার ইনিংস খেলেছেন প্রায় প্রতি ম্যাচেই। ৫৯৭ রান ছিলো তাঁর ঝুলিতে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তকমাও পেয়েছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষে ৩৫ দিনের বিরতির পর মাঠে ফিরে ছন্দে দেখায় নি রোহিতকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিয়নে দুই ইনিংসেই চূড়ান্ত ব্যর্থ তিনি। প্রথম ইনিংসে ট্রেডমার্ক পুল শটে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ স্কোয়্যার লেগে ধরা পড়েন নান্দ্রে বার্গারের হাতে। করেন মাত্র ৫ রান। আর দ্বিতীয় ইনিংসে খাতাই খুলতে পারেন নি তিনি। ৫ বল খেলে ০ রান করে ফেরেন সাজঘরে। দুই ইনিংসেই তাঁকে আউট করেন কাগিসো রাবাডা (Kagiso Rabada)। টপ অর্ডারে রোহিতের ব্যর্থতা চাপের মুখে ফেলে টিম ইন্ডিয়াকে। শেষমেশ তিন দিনের মধ্যে হারতে হয় ভারতকে।
গত বছরের টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর থেকে কুড়ি-বিশের ফর্ম্যাটে দেশের জার্সি গায়ে দেখা যায় নি রোহিত শর্মাকে (Rohit Sharma)। আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপেও তাঁর খেলা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সংবাদমাধ্যম সুত্রে জানা গিয়েছে যে বোর্ডকে রোহিত জানিয়ে দিয়েছেন যে টি-২০ ফর্ম্যাটে তাঁকে ভাবা না হলে, তাঁর আপত্তি নেই। গত ১৯ নভেম্বর ওডিআই বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরাজয়ের পর পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটেও অব্যাহতি নিয়েছেন রোহিত (Rohit Sharma)। খেলেন নি দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ভারত সিরিজ। একমাত্র টেস্ট খেলার ইচ্ছাই প্রকাশ করেছিলেন হিটম্যান। কিন্তু সেঞ্চুরিয়নে টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে তাঁর ব্যর্থতা, রোহিতের টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আগামী ৩ থেকে ৭ জানুয়ারি কেপ টাউনে রয়েছে দ্বিতীয় টেস্ট। ফের ব্যর্থ হলে তিন ফর্ম্যাট থেকেই অব্যাহতি চেয়ে নিতে পারেন রোহিত।
মুম্বই-রোহিত সম্পর্কে ঘনিয়েছে কালো মেঘ-
জাতীয় দলের পাশাপাশি রোহিতের IPL যাত্রাপথ নিয়েও রয়েছে সংশয়। ২০০৯ সালে ডেকান জার্সিতে ট্রফিও জেতেন তিনি। পরে ২০১১ সালের নিলামে তাঁকে দলে সামিল করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI)। ২০১৩ মরসুমের মাঝপথে রিকি পন্টিং-এর হাত থেকে নেতৃত্বের ব্যাটন পান রোহিত। এরপর গত এক দশকেরও বেশী সময় তিনিই অধিনায়ক থেকেছেন মুম্বইয়ের। ব্যাট হাতে যেমন একের পর এক মাইলস্টোন স্পর্শ করেছেন, তেমনই অধিনায়ক হিসেবেও গড়েছেন বহু নজির। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে পাঁচ আইপিএল ট্রফি জেতার রেকর্ড রয়েছে রোহিতের (Rohit Sharma)। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে পাঁচটি আইপিএল-সহ মোট ছয় ট্রফি জিতিয়েছেন তিনি। ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দুনিয়ায় একমাত্র মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়া সাফল্যের নিরিখে তাঁর ধারেকাছেও নেই কেউ।
দলের মুখ হয়ে ওঠা রোহিতের সাথে ২০২৩ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI) সম্পর্কের সমীকরণ নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। দলবদলের বাজারে মুকেশ আম্বানির দল সাড়া ফেলে দিয়েছিলো হার্দিক পান্ডিয়াকে ফিরিয়ে। ২০২২-এ মুম্বই ছাড়া হার্দিক’কে (Hardik Pandya) বিপুল অর্থ খরচ করে গুজরাত টাইটান্স (GT) থেকে ফিরিয়েছে তারা। আচমকাই রোহিতের হাত থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নিয়ে তা তুলে দেওয়া হয়েছে হার্দিকের হাতে। যেভাবে ট্রেডিং উইন্ডো বন্ধ হওয়ার এক দিন পর রোহিতকে বরখাস্ত করা হয়েছে তা পরিকল্পনামাফিক বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। যাতে অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিরা নিলামের আগে রোহিতের জন্য হাত বাড়াতে না পারেন তা নিশ্চিত করতেই এই পন্থা, বলছেন অনেকে।
হার্দিকের নেতৃত্ব লাভ নিয়ে এর আগেই আকারে-ইঙ্গিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সূর্যকুমার, জসপ্রীত বুমরাহ’রা। তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে চলেছে জল্পনা। প্রকাশ্যে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না দিলেও রোহিত (Rohit Sharma) মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের এই সিদ্ধান্তে বিশেষ খুশি নন বলেই খবর। ১৯ ডিসেম্বরের নিলামের পর কোনো দলের পক্ষেই রোহিত শর্মার চুক্তির ১৬ কোটি টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে ট্রেডিং উইন্ডো এখনও দুই মাস খোলা থাকলেও তাঁর দলবদলের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সেক্ষেত্রে প্রতিবাদ স্বরূপ অসন্তুষ্ট হিটম্যান সরে দাঁড়াতে পারেন দল থেকে। আগামী IPL-এর আগে তাঁর বয়স দাঁড়াবে ৩৭ ছুঁইছুঁই। ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত তার আগেই ঘোষণা করতে পারেন তিনি।