বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পরে ব্যাপক রদবদলের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের ক্রিকেট দল। নতুন কোচিং স্টাফ, নতুন অধিনায়ক- দলের খোলনলচে বদলে ফেলার কোনো প্রচেষ্টাই বাকি রাখে নি জাকা আশরাফের বোর্ড। বিদেশী কোচিং স্টাফে আপত্তি ছিলো পাক ক্রিকেটমহলের অনেকের। মিকি আর্থার (Mickey Arthur), মর্ণি মর্কেলদের (Morne Morkel) বিদেশীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বদলে কোচের পদে জায়গা দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ হাফিজকে (Mohammad Hafeez)। পরামর্শদাতা হিসেবে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তনী উমর গুল ও সঈদ আজমল’ও। সাথে ডায়রেক্টর অফ ক্রিকেট পদ তৈরি করেছে পিসিবি। কোচিং-এর পাশাপাশি ডায়রেক্টর অফ ক্রিকেট পদেও দায়িত্ব পেয়েছেন হাফিজ’ই। দেশের ক্রিকেটকে নতুন দিশা দেখানোর গুরুভার ন্যস্ত হয়েছে তাঁর কাঁধে।
গত কয়েক বছর পাকিস্তানের অধিনায়ক ছিলেন বাবর আজম (Babar Azam)। কিন্তু নেতৃত্বের ভার তাঁর ব্যাটিং-এ বিরূপ প্রভাব ফেলছিলো। এশিয়া কাপ ও ওডিআই বিশ্বকাপের হতাশাজনক পারফর্ম্যান্সের পর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ডের মত মাল্টিপল ক্যাপ্টেন পলিসি নিয়েছে পাকিস্তান। টেস্টে নেতা করা হয়েছে শান মাসুদ’কে (Shan Masood)। টি-২০তে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি’কে। ওডিআই-তে কে নেতা হবেন, তা এখনও ঘোষণা করে নি পিসিবি। নেতৃত্ব থেকে বাবরের বিদায়ে আশার সঞ্চার’ও হয়েছিলো পাক সমর্থকদের মধ্যে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সেই আশা মিলিয়ে গিয়েছে শূন্যে। টিম পাকিস্তানের পারফর্ম্যান্সের গ্রাফ উপরের দিকে ওঠার কোনো লক্ষণ মেলে নি এখনও।
Read More: “আইপিএলে যদি ভালো কিছু…”, টি-২০ বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করে বড় খোলসা করলেন মহম্মদ শামি !!
টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হলো পাকিস্তান-
নতুন অধিনায়ক শান মাসুদের নেতৃত্বে টেস্ট সিরিজ খেলতে গত বছরের শেষ দিকে পাকিস্তান দল উড়ে গিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। পারথের অপটাস স্টেডিয়ামে ডিসেম্বরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই বেকায়দায় পড়তে হয় পাকিস্তানকে। নিজের শেষ টেস্ট সিরিজ খেলতে নেমে পছন্দের প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে চড়াও হন ডেভিড ওয়ার্নার (David Warner)। তাঁর ১৬৪ ও মিচেল মার্শের ৯০ রানের ইনিংসের সৌজন্যে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৪৮৭ রান। জবাবে পাকিস্তান গুটিয়ে যায় ২৭১ রানে। ২১৬ রানের লিড সামনে রেখে তৃতীয় ইনিংসে নেমেছিলো অজিরা। তারা ৫ উইকেটে ২৩৩ রান তুলে ডিক্লেয়ার করে দেয়। চতুর্থ ইনিংসে স্টার্ক-হ্যাজেলউডদের সামনে টিকতেই পারে নি পাকিস্তান। শেষ হয়ে যায় ৮৯ রানে। হার দিয়েই শুরু হয় মাসুদের (Shan Masood) অধিনায়কত্ব অধ্যায়।
এরপর মেলবোর্নের বক্সিং ডে টেস্টেও ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আসে নি। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার তোলা ৩১৮ রানের জবাবে পাকিস্তান থেমে গিয়েছিলো ২৬৪ রানে। চতুর্থ ইনিংসে লক্ষ্য ছিলো ৩১৭। পাকিস্তান গুটিয়ে যায় ২৩৭ রানে। দুই ইনিংসে ৫টি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)। ম্যাচের সেরা’ও হন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক। সিডনিতে সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং-এর সুযোগ পায় পাকিস্তান। তোলে ৩১৩ রান। জবাবে অস্ট্রেলিয়া শেষ হয় ২৯৯ রানে। ১৪ রানের লিড থাকলেও তৃতীয় ইনিংসে হ্যাজেলউডের একটি স্পেল’ই গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানকে। ১১৫তে শেষ হয়ে যায় তারা। সহজেই ৮ উইকেটের ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ৩-০ হোয়াইটওয়াশের লজ্জা বয়ে অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করে পাকিস্তান।
নিউজিল্যান্ডেও হতশ্রী পারফর্ম্যান্স পাকিস্তানের-
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচের বিপর্যয়ের পর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ খেলতে গিয়েছে পাকিস্তান। প্রথম পরীক্ষায় চূড়ান্ত ব্যর্থই বলতে হবে নয়া অধিনায়ক শাহীন শাহ আফ্রিদিকেও (Shaheen Shah Afridi)। পিএসএলে লাহোর কালান্দার্স’কে দুই বার চ্যাম্পিয়ন করেছেন শাহীন। তাঁর থেকে তাই আশা অনেকখানি ছিলো অনুরাগীদের। কিন্তু এখনও অবধি তিনটি ম্যাচেই বেশ হতদ্যম লেগেছে তাঁকে। অকল্যান্ডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ড তোলে ২২৬ রান। ১৮০ রানে শেষ হয়ে যায় পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচে হেরে পিছিয়ে পড়ার পরেও পাকিস্তানের পারফর্ম্যান্সে বিন্দুমাত্র উন্নতি দেখা যায় নি। হ্যামিলটনে দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ড তোলে ১৯৪ রান। ফের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। থামে ১৭৩ রানে। সিরিজে টিকে থাকতে গেলে ডুনেডিন-এর তৃতীয় ম্যাচটি জিততেই হত পাক দল’কে। কিন্তু মরণবাঁচন ম্যাচেও তাঁদের পারফর্ম্যান্সে কোনো বাড়তি ধার দেখা গেলো না।
টানা তৃতীয়বার প্রথম ব্যাটিং-এর সুযোগ পায় নিউজিল্যান্ড। ফিন অ্যালেনের (Fin Allen) ব্যাটিং তাণ্ডবে ছিন্নভিন্ন হতে দেখা গেলো পাক বোলিং-কে। হারিস রউফ ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে খরচ করেছেন ৬০ রান। অধিনায়ক শাহীনের পরিসংখ্যান’ও তথৈবচ। ৪ ওভারে ৪৩ রান বিলিয়েছেন তিনি। অ্যালেনের ১৩৭ রানের ইনিংস কিউইদের পৌঁছে দেয় ২২৪ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে একা কুম্ভ হয়ে লড়াই চালালেন বাবর আজম। ৩৭ বলে ৫৮ করেন তিনি। এই নিয়ে সিরিজের তিনটি ম্যাচেই অর্ধশতক করলেন তিনি। অপরপ্রান্তে সাহায্যকারী কাউকে না পাওয়ায় আজও দলকে সাফল্য এনে দিতে পারলেন না বাবর। দলের খেলায় যে তাঁরা হতাশ, ম্যাচ শেষে তা স্বীকার করেছেন শাহীন স্বয়ং। অস্ট্রেলিয়ার পর নিউজিল্যান্ডেও সিরিজ খোয়ানোর পর রোষের মুখে পাক দল। অধিনায়ক বদলে আদতে মিললো কি? উঠছে প্রশ্ন।