IPL 2024: চলছে আইপিএলের (IPL) সপ্তদশ মরসুম। ব্যাট-বলের দ্বৈরথ শুরুর আগে থেকেই এবার চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ফ্র্যাঞ্চাইজি। নেপথ্যে তাদের নেতা বদল। ২০১৩ থেকে ২০২৩ অবধি দায়িত্ব সামলেছেন রোহিত শর্মা। দলকে জিতিয়েছেন পাঁচটি ট্রফি। এমনকি গত মরসুমেও প্লে-অফে গিয়েছিলো মুম্বই। তা সত্ত্বেও আচমকা রোহিতকে সরিয়ে হার্দিক পান্ডিয়াকে অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। ২০২২ সালে মুম্বই ছেড়েছিলেন হার্দিক। গিয়েছিলেন গুজরাত টাইটান্সে। সেখান থেকে বিপুল অর্থ খরচ করে ট্রেডিং পদ্ধতিতে দলে ফেরানো হয় তারকা অলরাউন্ডারকে। হার্দিক দলে ফিরতেই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেয় মুম্বই ফ্র্যাঞ্চাইজি।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের এই নেতা বদলের সিদ্ধান্তের সাথে একমত হতে পারে নি ক্রিকেটদুনিয়ার একটা বড় অংশ। মুম্বইয়ের নেতা হিসেবে যোগ্য রোহিতই, উঠছে রব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন অনেকে। মাঠেও হার্দিককে লক্ষ্য করে শোনা গিয়েছে কটূক্তি। আহমেদাবাদে মরসুমের প্রথম ম্যাচ চলাকালীন আগাগোড়া গ্যালারির রোষানলে ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। রোষের মুখে মুম্বই ফ্র্যাঞ্চাইজিও। প্রথম ম্যাচে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে দল হারায় ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়েছে মুম্বই সমর্থকদের মধ্যে। অনেকেই বলছেন যে তড়িঘড়ি হার্দিককে অধিনায়কত্ব দেওয়ার মত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেছে মুম্বই। অন্য কোনো দল এক্ষুণি তাঁর হাতে নেতৃত্ব সঁপে দিতে না।
Read More: “ও আমার অনুপ্রেরণা…” তরুণ তুর্কি রিঙ্কু সিং-কে কুর্নিশ দীনেশ কার্তিকের !!
দলকে সমস্যায় ফেলতে পারে হার্দিকের ইগো-
ইতিমধ্যে যে কয়টি ম্যাচে জাতীয় দল বা ফ্র্যাঞ্চাইজি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া, প্রায়শই তাঁকে দেখা গিয়েছে সতীর্থদের উপর মাথা গরম করতে। ভুলত্রুটির সময় তাঁদের পাশে থাকার বদলে মাঠের মধ্যেই তাঁদের রীতিমত আক্রমণ করেছেন তিনি। হার্দিকের কটাক্ষ বা কটূক্তি প্রায়শই ধরা পড়েছে স্টাম্প মাইকেও। যা দলের পরিবেশ ও একাত্মতার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেও জসপ্রীত বুমরাহ’র সাথে মতানৈক্য হওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গিয়েছে হার্দিকের মধ্যে। এছাড়া বারবার প্রাক্তন অধিনায়ক রোহিতকে বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করতে পাঠানোর মধ্যেও হার্দিকের ইগোর বহিঃপ্রকাশ দেখছেন অনেকে। বিষয়টি মাথায় রেখে অন্য কোনো দল হয়ত তাঁকে অধিনায়ক নির্বাচিত করত না।
নেতা হিসেবে দূরদর্শিতার অভাব স্পষ্ট-
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে নজর কাড়তে রীতিমত ব্যর্থ হার্দিক পান্ডিয়া। প্রশ্ন উঠেছে তাঁর একাধিক সিদ্ধান নিয়ে। ইরফান পাঠানের মত প্রাক্তনী চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ অবধি করেছেন তাঁকে। জানিয়েছেন, “হার্দিকের জন্যই হারতে হলো মুম্বইকে।” জসপ্রীত বুমরাহ ও জেরাল্ড ক্যুৎসি’র মত দুজন বিশ্বসেরা ফাস্ট বোলার থাকতেও নতুন বল হাতে ইনিংসের শুরু করেন তিনি নিজে। অপরপ্রান্ত থেকে নিয়ে আসেন অনামী লুক উড’কে। তাঁদের প্রথম স্পেলে যে পরিমাণ রান পান্ডিয়া ও উড খরচ করেন, তাই দিনের শেষে ব্যবধান গড়ে দেয় দুই দলের মধ্যে। এছাড়া ব্যাটিং অর্ডারে তাঁর সাত নম্বরে নামা নিয়েও চলছে আলোচনা। ইরফান পাঠান জানিয়েছেন, “রশিদ খানের বিরুদ্ধে ব্যাটিং এড়ানোর জন্যই আগে টিম ডেভিড’কে পাঠিয়েছে হার্দিক।” এই ভুলচুকগুলি নজর এড়াত না অন্য দলের। ফলে হার্দিকের হাতে দায়িত্ব দেওয়ার পথে হাঁটতেন না তাঁরা।
গুজরাতের সাফল্যের নেপথ্যে কোচ নেহরা-
অধিনায়ক হিসেবে হার্দিকের উত্থান গুজরাত টাইটান্স থেকে। সেখানে প্রথম মরসুমে তাঁর নেতৃত্বে ট্রফি জেতে গুজরাত টাইটান্স। দ্বিতীয় মরসুমে জোটে রানার্স-আপ তকমা। এরপর জাতীয় দলেও রোহিত শর্মা’র অনুপস্থিতিতে সাদা বলের খেলায় অধিনায়কত্বের সুযোগ পান তিনি। তবে নেতা হিসেবে তাঁর দক্ষতা চলতি আইপিএলের প্রথম ম্যাচেই প্রশ্নের মুখে। গত দুই মরসুমে গুজরাতের সাফল্যের পিছনে হার্দিকের চেয়েও কোচ আশিষ নেহরার কৃতিত্ব বেশী বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। যেভাবে ক্রিকেটারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তাঁদের থেকে সেরাটা বের করে আনেন নেহরা, সেটাই আদপে টাইটান্সদের ইউ এস পি বলে মন তাঁদের। চলতি মরসুমের প্রথম ম্যাচে নেতা হার্দিক যখন দিশাহারা, তখন নেহরাকে দেখা গিয়েছে বাউন্ডারির বাইরে দাঁড়িয়ে স্পেন্সার জনসন, মোহিত শর্মাদের সাথে নিয়মিত আলোচনা করতে। দুরন্ত বোলিং করে ম্যাচ জিতিয়ে নেহরাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন জনসন’ও।