অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে চারটে ভালো সিরিজের পর আবার টেস্টের আসরে নামছে টিম ইন্ডিয়া। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই ফের ম্য়াচ। তবে, দলটা প্রায় অর্ধেকের বেশিই আলাদা। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ১৬ নভেম্বর থেকে সিরিজের প্রথম ম্য়াচ শুরু হচ্ছে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা, উমেশ যাদব, মুরলি বিজয়, চেতেশ্বর পূজারা এবং ঋদ্ধিমান সাহাদের আবার খেলতে দেখা যাবে ভারতীয় দলের হয়ে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, ইডেন টেস্টে ভারতীয় দলের প্রথম একাদশ কেমন হতে চলেছে।
ওপেনিং জুটি
মুরলি বিজয়
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বছরের শুরুর দিকে টেস্ট সিরিজের পর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হোম সিরিজে দলে এলেন মুরলি বিজয়। তেত্রিশ বছরের এই ক্রিকেটার দলে ফেরায় তাঁর রাজ্য় তামিলনাডু় দলের ওপেনিং পার্টনার অভিনব মুকুন্দ জায়গা হারিয়েছেন। রঞ্জিতে এবার শুরুর দিকে ফর্মে না থাকলেও ওড়িশার বিরুদ্ধে সবর্শেষ ম্য়াচে শতরান করেছেন।
কান্নুর লোকেশ রাহুল
টেস্টের আসরে লোকেশের ফর্ম নিয়ে চিন্তার কথা নেই। কারণ, শ্রীলঙ্কা সফরের সময় টেস্ট সিরিজে দলে ফিরে স্পেশালিস্ট ওপেনার অভিনব মুকুন্দকে দলের বাইরে করে দেন। যদিও টানা ছ’টি অর্ধ-শতরানের নজির গড়া রাহুল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নির্বাচক মণ্ডলী ও টিম ম্য়ানেজমেন্টের আস্থা হারানোর পর কতটা পারফর্ম করতে পারেন, সেদিকেই নজর থাকবে। তবে, অধিনায়ক ও হেড কোচের তাঁর প্রতি দুর্বলতা কলকাতা টেস্টে তাঁকে জায়গা করে দিতে চলেছে ওপেনিং স্লটে।
মিডল অর্ডার
চেতেশ্বর পূজারা
দ্রাবিড়ীয় ঘরানার এই ক্রিকেটারের ব্য়াটিং টেকনিক নিয়ে কোনও দিন সন্দেহ ছিল না। ২০১৩ সাল অভিষেক হওয়ার পর এখন টেস্টের আসরে তিন নম্বর স্থানটা পূজারার দখলে। সত্য়িই রাহুল দ্রাবিড়ের যোগ্য় উত্তরসূরি তিনি। ২০১৬ এবং এই বছরে অনবদ্য় ফর্মে আছেন চেতেশ্বর। যে দলের বিরুদ্ধে মাঠে নামছেন রান করছেন। সম্প্রতি ইংল্য়ান্ডে গিয়ে কাউন্টি চ্য়াম্পিয়নশিপেও অংশ নেন। টেস্টের আসরে পাঁচটি শতরানের মধ্য়ে দু’টি শতরান শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই।
বিরাট কোহলি
দলের নেতা, সেরা ব্য়াটস্য়ান এবং মূল চালিকা শক্তি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে গত আড়াই বছর ধরে আধিপত্য় করে চলেছেন। এবছর টেস্টের আসরেও তাঁর ব্য়াটিং ভালো হচ্ছে। যদিও ব্য়াটসম্য়ান হিসেবে তাঁকে টেস্ট ক্রিকেটে সফল বলা যাবে না। শচীন তেন্ডুলকরের মতো একই আসনে বসতে গেলে বিরাটকে এদিকে নজর দিতেই হবে।
অজিঙ্কা রাহানে
টেস্টের আসরে দলের সহ-নেতা। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁকে রিজার্ভ বেঞ্চে বসানো গেলেও, টেস্টের আসরে রাহানেকে বাদ দেওয়া খুব মুশকিল। কলকাতা টেস্টে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সহ-অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে টেস্ট দলে জায়গা ফিরে পেতে অপেক্ষা করতে হবে এখনও। যদিও লোকেশ রাহুলকে ওপেনিং পজিশনে ছেড়ে দিয়ে মিডল-অর্ডারে নামতে হচ্ছে এই প্রতিভাবান ক্রিকেটারটিকে।
ঋদ্ধিমান সাহা
মহেন্দ্র সিং ধোনি অবসর নেওয়ার পর থেকে টেস্টের আসরে উইকেটকিপারের জায়গাতে জাঁকিয়ে বসে আছেন বাংলার ঋদ্ধি। ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্য়ে ভালো ব্য়াটিং ও কিপিং করে নির্বাচকদের ক্রমাগত প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অলরাউন্ডার/ স্পিনার
রবিচন্দ্রন অশ্বিন
২০১৭ সালটা অশ্বিনকে অনেক কিছু দেখিয়েছে। বছরের শুরুতে কেউ ভাবতে পারেননি, সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হবে এভাবে। যদিও যুজবেন্দ্র চহল, কুলদীপ যাদব ও অক্ষর প্য়াটেলরা পারফর্ম করে যাচ্ছেন। এমনটা নয় যে তাঁদের অযথা খেলিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় গিয়ে টেস্ট সিরিজের পর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হোম সিরিজে নিজেকে প্রমাণ করে দিতে মুখিয়ে রয়েছেন তামিলনাডু়র এই অভিজ্ঞ অফ-স্পিনারটি।
রবীন্দ্র জাদেজা
অশ্বিনের মতো সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জাদেজারও একই অবস্থা। ক্রমাগত উপেক্ষা করে যাওয়া হচ্ছে। অশ্বিনের মতো তাঁর বোলিংয়ে ধার কমেছে এমনটা মোটেই নয়। মাঝের এই সময়টা রঞ্জি খেলে কাটিয়েছেন। নির্বাচকদের উপেক্ষার জবাব জাদেজা কিভাবে দেন, সেটাই দেখার।
সিম বোলার
ভুবনেশ্বর কুমার
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ভুবিকে পাওয়া যাবে না। তবে, কলকাতা টেস্টে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন সাতাশ বছরের এই ফাস্ট বোলারটি। ইডেনের পিচ শুরুর দিক ফাস্ট বোলারদের সহায়তা দেয়, ফলে এই মুহুর্তে দেশের সেরা ফাস্ট বোলার ভুবিকে ছাড়া খেলতে নামা খুব মুশকিল।
উমেশ যাদব
অশ্বিন ও জাদেজার মতো উমেশকে রোটেশন পলিসি দেখিয়ে উপেক্ষা করা হচ্ছে একনাগাড়ে। অথচ ফর্ম হারাননি তিনি। ভালো বল করার পরেও তাঁর মতো একজন বোলারকে শুধুমাত্র টেস্টের আসরের জন্য় সীমাবদ্ধ করে দেওয়া অবিবেচকের মতো কাজ। উমেশ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে উইকেট পেয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কা সফরেও দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। সম্প্রতি রঞ্জি ট্রফিতেও বিদর্ভের হয়ে উইকেটের মধ্য়ে রয়েছেন।
মহম্মদ সামি
নির্বাচকদের রোটেশন পলিসির আরেকজন শিকার। ভালো পারফর্ম করেও নির্বাচকরা জোর করে শুধু টেস্টের আসরেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। সাতাশ বছরের এই ক্রিকেটারটি রঞ্জিতে এবার মারাত্মক ফর্মে বাংলার হয়ে। টেস্টের আসরে ফের সুযোগ পেয়ে সেই বিধ্বংসী ফর্ম নিয়েই মাঠে নামবেন নির্বাচকদের উপেক্ষার জবাব দিতে।