ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন যে ক্রিকেটার’রা, তাঁদের মধ্যে উপরের দিকেই থাকবেন দীনেশ কার্তিক (Dinesh Karthik)। তামিলনাড়ুর ক্রিকেটার ২০০৪ সালে টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে টেস্ট ও একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন। অনেকেই দস্তানা হাতে তাঁকে লম্বা রেসের ঘোড়া মনে করেছিলেন। দেশের মাঠের পাশাপাশি বিদেশেও তাঁর উপর আস্থা রেখেছিলো দল। কিন্তু নিজেকে জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠা আর করা হয় নি তাঁর। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেললেও আন্তর্জাতিক আঙিনায় ধারাবাহিকতার অভাব দেখা গিয়েছিলো তাঁর খেলায়। তাই বাধ্য হয়েই বিকল্পের সন্ধান করতে হয় দলকে। ধীরে ধীরে একাদশে নিজের জায়গা হারান কার্তিক (Dinesh Karthik)।
ভারতের জাতীয় দলে দীনেশ কার্তিকের (Dinesh Karthik) পায়ের তলার মাটি শক্ত না হওয়ার আরও একটি বড় কারণ মহেন্দ্র সিং ধোনির উত্থান। কার্তিক নাকি ধোনি, বাংলাদেশ সফরের আগে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ঝাড়খণ্ডের ‘মাহি’র উপরেই আস্থা দেখিয়েছিলেন সৌরভ (Sourav Ganguly)। সোনালী, লম্বা চুলের ধোনিই এরপর থেকে ভারতীয় দলের পয়লা নম্বর পছন্দ হয়ে ওঠেন। ব্যাট হাতে হোক বা উইকেটের পিছনে, ধোনির (MS Dhoni) একের পর এক দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্সের নীচে চাপা পড়ে যায় কার্তিকের জাতীয় দলে নিয়মিত হওয়ার স্বপ্ন। মাঝেমধ্যে ভারতের হয়ে খেললেও টানা সুযোগ কখনোই পান নি তিনি। ধোনি ২০১৯ সালে সরে যান টিম ইন্ডিয়া থেকে। কিন্তু ততদিনে নিজের সেরা সময়কে পিছনে ফেলে এসেছে কার্তিক’ও (Dinesh Karthik)। ধোনির ছায়াতেই কেটেছে তাঁর কেরিয়ারের দীর্ঘ সময়।
Read More: আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে T20 সিরিজ শুরুর আগেই দুঃসংবাদ, ছিটকে গেলেন শিভম দুবে, এই খেলোয়াড় নিচ্ছেন এন্ট্রি !!
কার্তিকের দশাই হবে কে এস ভরতের-
২০১৪ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। তামিলনাড়ুর দীনেশ কার্তিক (Dinesh Karthik) নয়, বরং সাদা জার্সিতে টিম ইন্ডিয়ার উইকেটরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো বাংলার ঋদ্ধিমান সাহা’কে। বেশ কয়েক বছর ঋদ্ধিই (Wriddhiman Saha) সামলেছেন দায়িত্ব। উইকেটের পিছনে তাঁর দুর্দান্ত সব ক্যাচ, স্টাম্পিং-এর কারণে ‘সুপারম্যান সাহা’ তকমাও দায় করে নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ঋষভ পন্থকে (Rishabh Pant) দেখা গিয়েছে উইকেটরক্ষকের ভূমিকায়। দেশে-বিদেশে ঋষভের ব্যাটিং বিক্রম বাড়তি শক্তি যুগিয়েছে ভারতকে। রিজার্ভ উইকেটরক্ষক হিসেবে কিছুদিন ছিলেন ঋদ্ধিমান। এরপর রাহুল দ্রাবিড় কোচ হয়ে আসার পর বাদ দেন তাঁকে।
ঋষভ (Rishabh Pant) যতদিন প্রথম পছন্দ ছিলেন, ততদিন উইকেটরক্ষক নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বিশেষ ভাবতে হয় নি ভারতকে। চিন্তা বাড়ে তিনি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ছিটকে যাওয়ার পর। ঋদ্ধিমানকে সরানোর পর কোচ রাহুল দ্রাবিড় রিজার্ভ কিপার হিসেবে দলে জায়গা করে দিয়েছিলেন কে এস ভরতকে (KS Bharat)। ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্ধ্রের হয়ে বেশ ভালো পরিসংখ্যান ছিলো তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে অভিষেক হয় তাঁর। খেলেন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ’ও। তবে পাঁচ টেস্ট খেললেও আন্তর্জাতিক মানের উইকেটকিপিং দেখা যায় নি তাঁর থেকে। বেশ কিছু ক্যাচ হাতছাড়া করেন, হজম করেন বাই রান। ব্যাট হাতেও চূড়ান্ত ব্যর্থ তিনি। ৫ টেস্টে ১৮.৪২ গড়ে করেছেন মাত্র ১২৯ রান।
ঈশান-রাহুলদের উপরেই আস্থা টিম ইন্ডিয়ার-
অন্ধ্রের জার্সিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রানের মধ্যে রয়েছেন ভরত (KS Bharat)। ৯৩ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। প্রায় ৩৭ গড় ও ৬০ স্ট্রাইক রেটে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে করেছেন ৪৮৭৮ রান। শতরানের সংখ্যা ৯ ও অর্ধশতক ২৭টি। উইকেটের পিছনে দস্তানা হাতে ৩১৩ টি ক্যাচ ও ৩৭টি স্টাম্পিং-ও করেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বল্প সুযোগে নিজেকে মেলে ধরতে না পারার সমস্যা এখনও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁকে। সুযোগ মিলছে না ভারতীয় দলের প্রথম একাদশে। সম্প্রতি ঈশান কিষণ ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার থেকে বিরতি চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝপথে দেশে ফেরায় অতিরিক্ত উইকেটরক্ষক হিসেবে ভরত’কে জায়গা দিলেও মাঠে নামানোর কথা ভাবে নি টিম ম্যানেজমেন্ট।
ভারতের জাতীয় দল থেকে ভরতের হারিয়ে যাওয়ার আরও একটি কারণ অবশ্যই উইকেটরক্ষক হিসেবে ঈশান কিষণ (Ishan Kishan) ও কে এল রাহুলদের (KL Rahul) উত্থান। সীমিত ওভারের খেলায় গত দেড়-দুই বছর ধরেই ছন্দে রয়েছেন ঈশান কিষণ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দ্বিশতরান’ও রয়েছে তাঁর। লাল বলের খেলাতেও ২ টেস্টে ৭৮ গড় রেখে ব্যাটিং করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাহুলের অভিষেক হয়েছিলো বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে উইকেটরক্ষক হিসেবেও মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে ৭৫ গড়ে ৪৫২ রান করেছেন তিনি। ডাইভ দিয়ে ক্যাচ ধরা বা স্টাম্পিং-এ কোনো জড়তা দেখা যায় নি তাঁর খেলায়। সম্প্রতি টেস্টেও দক্ষিণ আফ্রিকাতে ১০১ রানের একটি চমৎকার ইনিংস খেলেছেন। গতিশীল পিচে সিরাজ-বুমরাহদের বিরুদ্ধে কিপিং-ও করেছেন চমৎকার। আপাতত উইকেটরক্ষকদের ‘পেকিং অর্ডার’-এ ভরতকে অনেকখানি পিছনে ঠেলে দিয়েছেন তাঁরা।