IND vs ENG: হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে খানিক অপ্রত্যাশিত ভাবেই ২৮ রানে হারতে হয়েছিলো ভারতকে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) পয়েন্ট তালিকায় নেমে যেতে হয়েছিলো পঞ্চম স্থানে। ঘুরে দাঁড়াতে তাই দ্বিতীয় টেস্ট জয়কেই পাখির চোখ করেছিলো টিম ইন্ডিয়া। বিরাট কোহলি, মহম্মদ শামি খেলবেন না, জানাই ছিলো। টেস্ট শুরুর আগে চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা ও কে এল রাহুলের মত দুই তারকা। বাধ্য হয়েই প্রথম একাদশে বেশ কিছু বদল করতে হয় ভারতকে। জাদেজার বদলি হিসেবে খেলেন কুলদীপ যাদব। মিডল অর্ডারে রাহুলের বদলি হিসেবে রজত পতিদারকে বেছে নেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। দেশের ৩১০তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেক হয় পতিদারের। এছাড়াও মহম্মদ সিরাজকে বিশ্রামে পাঠিয়ে সুযোগ দেওয় হয়েছিলো মুকেশ কুমারকে।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। প্রথম ইনিংসে বাকিরা বড় রান না পেলেও যশস্বী জয়সওয়ালের অসামান্য দ্বিশতকের সুবাদে ভারত পৌঁছায় ৩৯৬ রানে। জবাবে বুমরাহ’র ৬/৪৫-এর সৌজন্যে ইংল্যান্ডকে ২৫৩ রানেই গুটিয়ে দিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। তৃতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে ভারত’কে লড়াইতা রাখেন শুভমান গিল। তাঁর ১০৪ রানের ইনিংসের সৌজন্যেই প্রতিপক্ষকে ৩৯৯ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে পেরেছিলো দল। গতকাল দিনের তৃতীয় সেশনে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ধুন্ধুমার মেজাজেই করেছিলেন ইংল্যান্ড ওপেনার বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলি। অশ্বিনের বলে ডাকেট ফিরেছিলেন ২৮ বলে ২৭ রান করে। দিনের শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ছিলো ১ উইকেটের বিনিময়ে ৬৭ রান। আজ সকাল থেকে ক্রলি, হার্টলি, বেন ফোকসরা লড়াই করলেও বৈতরণী পার করাতে পারলেন না ইংল্যান্ডকে। ১০৬ রানে জিতেই মাঠ ছাড়লো ভারত।
Read More: IND vs ENG: ক্রলি ফিরতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেন রোহিত শর্মা, সমাজমাধ্যমে ভাইরাল ভারত অধিনায়কের সেলিব্রেশন !!
‘বাজবল’ই ডোবালো ইংল্যান্ডকে-
হাতে রয়েছে ৯ উইকেট। প্রয়োজন ৩৩২ রান। দিনের খেলা শুরু আগে এমনই ছিলো সমীকরণ। গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে জেমস অ্যান্ডারসন জানিয়েছিলেন, “ভারত ৬০০ রানের লক্ষ্য দিলেও আমরা তাড়া করতে চেষ্টা করতাম। সামনে ১৮০ ওভার রয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো ৬০-৭০ ওভারের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছতে।” টেস্টের আসরে দ্রুতগতির যে ক্রিকেট গত দেড়-দুই বছরে খেলে আসছে ইংল্যান্ড, তাই আজ সমস্যায় ফেললো তাদের। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে গতকাল মাঠে নেমেছিলেন রেহান আহমেদ। তরুণ স্পিনার ব্যাট হাতে সকালের সেশনে ভালোই সামলাচ্ছিলেন অশ্বিন-বুমরাহদের। বেশ কিছু বাউন্ডারিও হাঁকাতে দেখা যায় তাঁকে। শেষমেশ অক্ষর প্যাটেলের নিচু থেকে যাওয়া একটি ডেলিভারিতে ইনিংস শেষ হয় তাঁর। ৩১ বলে ২৩ করেন তিনি।
হায়দ্রাবাদের নায়ক অলি পোপকেও ক্রিজে সময় নিয়ে থিতু হতে দেখা গেলো না আজ। শুরু থেকেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন তিনি। ২১ বলে ২৩ করে ফেরেন তিনিও। স্ট্রাইক রেট ১০০’র বেশী হলেও ইনিংসকে দীর্ঘায়িত করা আর হলো না পোপের। রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। জো রুট’ও এগোলেন অলি পোপের পথেই। নেমেই পরপর দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন। একখানি ছক্কাও হাঁকান। কিন্তু ১০ বলে ১৬ করেই উইকেট ছুঁড়ে আসেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। ফের একবার টিম ইন্ডিয়াকে সাফল্য এনে দেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। অপরপ্রান্তে উইকেট পড়লেও মনঃসংযোগ বজায় রেখে লড়ছিলেন জ্যাক ক্রলি। লাঞ্চের আগে কুলদীপ ফেরালেন তাঁকে। ৭৩ করে বাম হাতি ওপেনার ফিরতেই জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছিলো ভারত।
ফোকস-হার্টলির প্রতিরোধ ভেঙে জয়ী ভারত-
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঠিক আগে জসপ্রীত বুমরাহ’র বলে লেগ বিফোর হন জনি বেয়ারেস্টো’ও। ২৬ রানে শেষ হয় তাঁর ইনিংস। দিনের প্রথম সেশনে ১২৭ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করলেও ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিলো ইংল্যান্ড। স্কোরবোর্ডে তখন ৬ উইকেটে ১৯৪। বাকি পথটা দলকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিলো অধিনায়ক বেন স্টোকসের কাঁধে। এর আগে হেডিংলে’তে জ্যাক লিচ’কে সঙ্গী করে এমন অসম্ভবকেও সম্ভব করেছিলেন স্টোকস। মাসখানেক আগের অ্যাসেজে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে লর্ডসেও প্রায় একই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন তিনি। তবে ইংল্যান্ডের ‘ক্রাইসিস ম্যান’ আজ আর অন্ধকার থেকে টেনে তুলতে পারলেন না দলকে। মাত্র ১১ করেই রান-আউট হয়ে ফেরেন সাজঘরে।
স্টোকস আউট হওয়ার পর ভারতের জয় অবশ্যম্ভাবী ধরে নিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে একটা সময় ম্যাচের ভারসাম্য ফিরিয়ে এনেছিলেন বেন ফোকস ও টম হার্টলি। উইকেটরক্ষক ফোকস আজ ব্যাট হাতেও লড়লেন দীর্ঘক্ষণ। হার্টলির সাথে ৫৫ রানের জুটি গড়েন তিনি। শেষমেশ জসপ্রীত বুমরাহ’র স্লোয়ার বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে থামলেন তিনি। করেন ৩৬ রান। সফরকারী দলের হয়ে চলতি সিরিজের আবিষ্কার বলা যেতে পারে হার্টলিকে। বাম হাতি স্পিনে নজর কেড়েছেন। দুই ম্যাচ মিলিয়ে ১৪ উইকেট নিয়েছেন। আজ ৩৬ রান করেন তিনি। নবাগত শোয়েব রানের খাতা খুলতে পারেন নি। ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন অ্যান্ডারসন। ৩৯৯-এর লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৯২তেই থামে ইংল্যান্ড। সমতা ফেরানোর পর রাজকোটে এবার ২-১ এগিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্প নিয়ে মাঠে নামবে ভারত।