২০০৭ সালে প্রথমবার ভারতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। ঝাড়খণ্ডের উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের হাত ধরে নবজন্ম লাভ করেছিলো দেশের ক্রিকেট। টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) জিতিয়ে নেতা হিসেবে প্রথমেই নিজের আলাদা ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। এরপর ধোনি (MS Dhoni) জমানায় ভারত জিতেছে ওডিআই বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও (Champions Trophy)। একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে আইসিসি আয়োজিত তিনটি সীমিতি ওভারের টুর্নামেন্টই জেতার নজির তৈরি করেছেন তিনি। এছাড়াও প্রথম অধিনায়ক হিসেবে টিম ইন্ডিয়াকে টেস্ট বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ পয়লা নম্বরে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্বও রয়েছে ধোনিরই। নেতা হিসেবে তাঁর ট্রফি ক্যাবিনেট যেমন ধোনির (MS Dhoni) হয়ে কথা বলে, তেমনই যেভাবে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারকে ভরসা যুগিয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় ম্যাচ উইনার হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি, তাও ‘ব্যান্ড ধোনি’র অন্যতম বড় বিজ্ঞাপন।
রোহিত, বিরাটদের মত যুজবেন্দ্র চাহালকেও (Yuzvendra Chahal) আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরিচিত নাম করে তোলার কৃতিত্বের অনেকখানিই দাবী করতে পারেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। হরিয়ানার লেগস্পিনার ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন ২০১৬ সালে। তখনও অধিনায়ক ছিলেন ধোনিই। অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর বিশেষ পছন্দের পাত্র হয়ে উঠেছিলেন চাহাল। চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদবের (Kuldeep Yadav) সাথে চাহালের জুটি যে ঘাতক হয়ে উঠতে পারে, প্রথম তা ভেবেছিলেন ধোনিই। মায়েস্ত্রোর ‘মাস্টারস্ট্রোকে’ লাভবান হয় টিম ইন্ডিয়া। ৩৪ একদিনের ম্যাচে দুজনে জুটিতে উইকেট তোলেন ১১৮টি। ৭০.৫ শতাংশ ম্যাচ এর মধ্যে জেতে ‘মেন ইন ব্লু।’ ধোনি অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরেও যতদিন দলে ছিলেন, ততদিনই চাহালকে নিয়মিত ব্যবহার করেছেন একাদশে। ২০১৯-এ তিনি সরার পর থেকেই অন্ধকারে হরিয়ানার লেগস্পিনার।
Read More: ডিভোর্স মিটতেই নতুন সম্পর্কে হার্দিক? সোশ্যাল মিডিয়ায় মিললো প্রমাণ !!
চাহালের কেরিয়ার নিয়ে ছেলেখেলা রোহিত-বিরাটদের-
ভারতীয় দলে ধোনি (MS Dhoni) জমানার অবসান ঘটার পরেই কঠিন সময় শুরু হয় যুজবেন্দ্র চাহালের (Yuzvendra Chahal) জন্য। হরিয়ানার লেগস্পিনারকে প্রথম একাদশ থেকে বাদ দেওয়া হয়। যে কুল-চা জুটি একটা সময় ভারতকে একের পর এক ম্যাচে সাফল্য এনে দিয়েছে তা ভেঙে দেওয়ার পথে হাঁটতে দেখা গিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়াকে (Team India)। স্কোয়াডে জোড়া লেগস্পিনার রাখা যাবে না, এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট। খাঁড়া নেমে আসে চাহালের উপরেই। দেশের অন্যতম সেরা স্পিনার হওয়া সত্ত্বেও বিরাটের (Virat Kohli) নেতৃত্বে ২০১৯-এর ওডিআই বিশ্বকাপে একের পর এক ম্যাচে মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। এমনকি ২০২১-এর টি-২০ বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও রাখা হয় নি তাঁকে।
২০২১-এর শেষের দিকে সাদা বলের দুই ফর্ম্যাটে অধিনায়কত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিলো রোহিত শর্মা’র (Rohit Sharma) হাতে। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরেও ভাগ্য ফেরে নি যুজবেন্দ্র চাহালের। ২০২২-এর টি-২০ বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু মূল টুর্নামেন্টে রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের (Ravichadran Ashwin) উপর আস্থা রেখেছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট। রিজার্ভ বেঞ্চে সময় কাটাতে হয় চাহালকে। ২০২৩-এর এশিয়া কাপ (Asia Cup) ও ওডিআই বিশ্বকাপ-দুই বড় টুর্নামেন্টেই দলের বাইরে রাখা হয়েছিলো তাঁকে। হতাশায় ডুবেছিলেন তারকা লেগস্পিনার। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে মিলেছিলো তেমনই ইঙ্গিত। ২০২৪-এর টি-২০ বিশ্বকাপও (T20 World Cup) আগাগোড়া চাহালের কেটেছে রিজার্ভ বেঞ্চে। দলে তাঁর ভূমিকা যে স্পষ্ট নয়, তা বোঝা গিয়েছে শ্রীলঙ্কা সিরিজে তাঁর বাদ পড়া থেকেই।
যুজবেন্দ্র চাহালের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার-
২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ে সিরিজে ভারতের হয়ে টি-২০ ও ওডিআই অভিষেক হয়েছিলো যুজবেন্দ্র চাহালের (Yuzvendra Chahal)। এখনও অবধি আন্তর্জাতিক আঙিনায় ৭২টি একদিনের ম্যাচে তিনি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২৭.১৩ গড় ও ৫.২৬ ইকোনিমি রেটে তুলে নিয়েছেন ১২১টি উইকেট। অন্যদিকে টি-২০তে তিনি ভারতের সফলতম বোলার। ৮০ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৯৬টি উইকেট। ধোনি’র (MS Dhoni) উপস্থিতি তাঁর কেরিয়ারে কতটা প্রভাব ফেলেছে তা বোঝা যায় পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই। ২০১৬ থেকে ২০১৯-অর্থাৎ ধোনি মাঠে থাকাকালীন তিনি খেলেছেন ৫০টি একদিনের ম্যাচ। আর ধোনির অবসরের পর পাঁচ বছরে সুযোগ পেয়েছেন কেবল ২২টি ম্যাচে।