কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপের (T20 World Cup) আসরে আজ সম্মুখসমরে ভারত ও পাকিস্তান (IND vs PAK)। উপমহাদেশের দুই ক্রিকেটীয় শক্তির দ্বৈরথ উপভোগ করতে দলে দলে মাঠ ভরিয়েছেন দর্শকেরা। মূলত এই ম্যাচের জন্যই নিউ ইয়র্কের উপকন্ঠে নাসাও কাউন্টির আইজেনহাওয়ার পার্কে গড়ে তোলা হয়েছিলো নতুন স্টেডিয়াম। এর আগের ম্যাচগুলিতে বিশেষ লোক হয় নি। চিন্তার ভাঁজ পড়েছিলো আইসিসি কর্তাদের কপালে। কিন্তু আজ ৩৪০০০ আসনবিশিষ্ট গ্যালারি কানায় কানায় পূর্ণ দেখে নিশ্চয়ই স্বস্তির শ্বাস ফেলবেন তাঁরা। তবে স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারবে না ভারতীয় শিবির। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে আজ টসে হেরেছিলেন রোহিত শর্মা। প্রথমে বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নেন বাবর আজম। কঠিন পিচে নাসিম, শাহীন’দের বিরুদ্ধে খড়কুটোর মত উড়ে গেলো ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপ।
প্রথম ওভার খেলা হওয়ার পরেই বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয়বার স্থগিত হয়ে গিয়েছিলো ম্যাচ। আধঘন্টার বিরতির পর যখন ফের খেলা শুরু হয়, তখন থেকেই রাশ হাতে তুলে নেয় পাকিস্তান। প্রথমেই আউট হন বিরাট কোহলি। চলতি টি-২০ বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে ওপেন করতে নেমে দুই অঙ্কের গণ্ডী পেরোনর আগেই ফিরলেন সাজঘরে। এরপর বেশীদূর এগোতে পারেন নি রোহিত শর্মা’ও। দুই মহাতারকা ফেরার পর অক্ষর প্যাটেল ও ঋষভ পন্থের জুটি গড়ে তুলেছিলেন প্রতিরোধ। কিন্তু অক্ষর ফেরার পর যেন খুলে যায় উইকেটের লক-গেট। সূর্যকুমার, শিবম দুবে, হার্দিক পান্ডিয়ারা চূড়ান্ত ব্যর্থ আজ। একা কুম্ভ হয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা চালিয়েও শেষে ফিরতে হয় ঋষভ পন্থকেও। শেষবেলায় আর্শদীপ ও মহম্মদ সিরাজ মিলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ রান যোগ করায় ভারত ১৯ ওভারে থামে ১১৯ রানে।
Read More: “বিশ্বকাপের আসা ছেড়ে দাও…” পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১১৯ রানে শেষ হলো ভারতের ব্যাটিং, সমাজ মাধ্যমে উঠলো নিন্দার ঝড় !!
টপ-অর্ডারের ব্যর্থতার মাঝে উজ্জ্বল একা ঋষভ-
আইপিএলে ওপেনার হিসেবে ৭৪১ রান করেছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। এরপর তাঁকে টি-২০ বিশ্বকাপেও (T20 World Cup) ওপেনার হিসেবে খেলানোর দাবী জোরালো হয়েছিলো সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু আয়ারল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরাটের যা পারফর্ম্যান্স, তাতে আগামী ম্যাচগুলিতে একাদশ নির্বাচনের সময় কোচ দ্রাবিড়কে যে আলাদা কিছু চিন্তা করতে হতে পারে তা বলাই বাহুল্য। আজ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেছিলেন। কিন্তু নিউ ইয়র্কের পিচ ঘায়েল করলো তাঁকে। নাসিম শাহের (Naseem Shah) বলে কাট করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাউন্স অনুধাবন করতে পারেন নি তিনি। পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বসেন উসমান খানের হাতে। একটি দুর্দান্ত ছক্কা হাঁকালেও বেশী দূর এগোতে পারেন নি অধিনায়ক রোহিত (Rohit Shrma)। শাহীনকে ফ্লিক করতে গিয়ে ধরা পড়েন হারিস রউফের হাতে। ১২ বলে তাঁর সংগ্রহ ১৩ রান।
চারে অক্ষর প্যাটেলকে (Axar Patel) নামিয়েছিলো ভারত। ঋষভ পন্থের সাথে জুটি বেঁধে দলকে লড়াইতে ফেরানোর চেষ্টা করেন তিনি। ১৮ বলে ২০ রান করে নাসিম শাহের শিকার হন তিনি। অহেতুক এগিয়ে এসে বড় শট মারতে গিয়ে খুইয়ে বসেন উইকেট। বড় ম্যাচে আব আবারও শান্ত থাকলো সূর্যকুমার যাদবের (Suryakumar Yadav) ব্যাট। টি-২০’র আঙিনায় ‘মিস্টার ৩৬০’ নামে পরিচিত ভারতীয় তারকা একটি দৃষ্টিনন্দন স্ট্রেট ড্রাইভ মারা ছাড়া কিছুই করতে পারেন নি আজ। ৮ বলে করেন ৭ রান। ডুবতে থাকা ভারতীয় তরীর হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। তিনে নেমে একাই লড়াই চালালেন তিনি। হারিস রউফের বিরুদ্ধে বাউন্ডারির হ্যাট্রিক করেন। ৩১ বলে ৪২ করে মহম্মদ আমিরের বলে তিনি ফিরতেই আঁধার নামে টিম ইন্ডিয়ার ইনিংসে।
উজ্জ্বল পাকিস্তানের পেস চতুর্ভুজ-
শিবম দুবেকে (Shivam Dube) অনেকে আশা নিয়ে সামিল করা হয়েছিলো টিম ইন্ডিয়ার টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) স্কোয়াডে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নিজেকে মেলে ধরতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ তিনি। বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ডের পর আজ পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও রান পেলেন না তিনি। ৯ বল খরচ করে তাঁর সংগ্রহ আজ কেবল ৩। পাকিস্তানের বিপক্ষে চমকপ্রদ রেকর্ড থাকলেও আজ ব্যর্থ হয়েই ফিরতে হলো হার্দিক পান্ডিয়াকেও (Hardik Pandya)। ১২ বলে ৭ রান করে হারিস রউফের শিকার হন তিনি। রবীন্দ্র জাদেজা ও জসপ্রীত বুমরাহ দুজনেই করেন ‘গোল্ডেন ডাক।’ আর্শদীপ সিং (৯) ও মহম্মদ সিরাজ (৭) শেষবেলায় টিম ইন্ডিয়াকে পৌঁছে দেন ১১৯ রানে।
নিউ ইয়র্কের বোলিং বান্ধব বাইশ গজে সাদা কুকাবুরা বল হাতে জ্বলে উঠলেন পাকিস্তানের পেস চতুর্ভুজ। ৪ ওভারে ৫.২০ ইকোনমি রেটে ২১ রান খরচ করে ৩ উইকেট তুলে নেন নাসিম শাহ (Naseem Shah)। ২০২২ সালে বিরাট কোহলির বিরুদ্ধে জোড়া ছক্কা হজম করেছিলেন হারিস রউফ (Haris Ruaf)। সেই দুঃসহ স্মৃতি আজ মুছে ফেললেন তিনি। ৩ ওভারে ২১ রান খরচ করে নেন ৩ উইকেট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুপার ওভারে সাফল্য পান নি মহম্মদ আমির (Mohammad Amir)। আজ প্রায়শ্চিত্ত করলেন। ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে তুলে নেন ২টি উইকেট। একটি উইকেট নিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। নিউ ইয়র্কের পিচের যা মতিগতি তাতে ১২০ রানও জয়ের জন্য যথেষ্ট হতে পারে ভারতের জন্য। বুমরাহ, সিরাজ, আর্শদীপ’রা পাক পেসারদের দেখানো পথে হাঁটতে পারেন কিনা, প্রশ্ন এখন সেটাই।