SA vs IND: জোহানেসবার্গের নিউ ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামেই দিনকয়েক আগে টি-২০’র আসরে মুখোমুখি হয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত (SA vs IND)। তুলনামূলক নতুনদের নিয়ে গড়া দল নিয়েই প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ১০৬ রানের বিশাল জয় আদায় করে নিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া। সেই নিউ ওয়ান্ডারার্সেই আজ শুরু হলো ওডিআই সিরিজ। কুড়ি-বিশের ম্যাচের দাপট একদিনের খেলাতেও বজায় রাখলো ভারতীয় দল। ব্যাটং, বোলিং হোক বা ফিল্ডিং-ক্রিকেটের তিন বিভাগেই প্রতিপক্ষকে অনেকখানি পিছনে রেখে জয় হাসিল করে নিলো তারা। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মত ওডিআই ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা দুই তারকা ছিলেন না দলে। ছিলেন না হার্দিক পান্ডিয়াও। তা সত্ত্বেও এইডেন মার্করামের দলের বিরুদ্ধে ৮ উইকেটের ব্যবধানে জয় আটকালো না ‘মেন ইন ব্লু’র।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতীয় পেসারদের বিপক্ষে বিশেষ সুবিধা করতে পারলেন না রিজা হেনড্রিকস, টোনি দে জর্জি’রা। ইনিংসের গোড়া থেকেই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে তারা। আর্শদীপ সিং ও আবেশ খানের দাপটে মাত্র ৫৮ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে বসেছিলো তারা। শেষমেশ আন্দিলে ফেলুকায়েও’র লড়াকু ইনিংসের সুবাদে ১০০ রানের গণ্ডী পেরোয়া দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের ইনিংস থামে ১১৬ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে হারিয়েছিলো ভারত। কিন্তু অভিষেককারী সাই সুদর্শন ও তিনে নামা শ্রেয়স আইয়ার জুটি গড়ে নিশ্চিত জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান টিম ইন্ডিয়াকে। শেষবেলায় শ্রেয়স ফিরলেও ম্যাচের ফলাফলে বিশেষ প্রভাব পড়ে নি তার। ১৬.৩ ওভারের মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করে ফেলে দল। সিরিজে এগিয়ে যায় ১-০ ফলে।
Read More: SA vs IND: দক্ষিণ আফ্রিকায় সমস্যার সম্মুখীন টিম ইন্ডিয়া, সিরিজের মাঝপথে দল ছাড়লেন তারকা ক্রিকেটার !!
আর্শদীপের ৫, আবেশের ৪, ভরাডুবি প্রোটিয়াদের-
শামি, বুমরাহ, সিরাজ- ভারতের পেস বিভাগের তিন তারকাই নেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে। আর্শদীপ, মুকেশ’রা নতুন বল হাতে কেমন পারফর্ম করেন তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন ক্রিকেটবিশেষজ্ঞদের একাংশ। আজ যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিলেন টিম ইন্ডিয়ার তরুণ বোলাররা। জোহানেসবার্গে সুইং-এর সাম্রাজ্য বিস্তার করতে দেখা গেলো আর্শদীপ ও আবেশ খানকে। রিজা হেনড্রিকসকে বোল্ড করে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিলেন আর্শদীপ’ই। পরের বলেই রাসি ফান দার ডুসেনকে এলবিডব্লু করে প্রোটিয়া ব্যাটিং-এর মেরুদণ্ডে আঘাত করেন তিনি। এরপর আর্শদীপের বিরুদ্ধে পরাস্ত হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় টোনি দে জর্জি ও ধুন্ধুমার ব্যাটিং-এর জন্য প্রসিদ্ধ হেনরিখ ক্লাসেনকে।
বল হাতে জাত চেনাতে দেখা গেলো আবেশকেও। তিনি প্রথমেই ফিরিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এইডেন মার্করাম’কে। এরপর একে একে আবেশের ঝুলিতে জমা পড়ে মুল্ডার, মিলার ও কেশব মহারাজের উইকেট। জোহানেসবার্গের বাইশ গজে সর্বনিম্ন রানের ইনিংস খেলার নজির রয়েছে শ্রীলঙ্কার। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধেই ১০৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো তারা। একটা সময় মনে হচ্ছিলো, সেই লজ্জার রেকর্ড নিজেদের নামে করে নেবে স্বাগতিক দেশ। কিন্তু তাদের রক্ষা করে আন্দিলে ফেলুকায়েও’র ব্যাট। ৩৩ রান করে দলকে খানিক দূর টেনে নিয়ে গেলেন তিনি। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এসে তাঁকে আউট করেন আর্শদীপ। তুলে নেন নিজের পঞ্চম উইকেট। এরপর কুলদীপ যাদব ফেরান নান্দ্রে বার্গারকে। ১১৬তে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা।
অভিষেকে অনবদ্য সাই, অর্ধশতক শ্রেয়সের’ও-
ভারতের হয়ে আজ অভিষেক হলো প্রতিভাবান তরুণ ব্যাটার সাই সুদর্শনের। ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের সাথে তাঁকে ইনিংসের সূচনা করতে পাঠান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ঋতুরাজ মাত্র ৫ রান করে ফিরলেন সাজঘরে। মাত্র ২৩ রানের মাথায় ভারত প্রথম উইকেট হারালেও কোনো রকম চাপ তাদের উপর তৈরি করতে পারেন নি প্রোটিয়া বোলাররা। নবাগত সাই সুদর্শনকে সঙ্গে নিয়ে দুর্দান্ত ভাবে ইনিংস সাজাতে দেখা গেলো শ্রেয়স আইয়ারকে। ৬টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে করলেন ৪৫ বলে ৫২ রান। ইনিংসের একদম শেষবেলায় আন্দিলে ফেলুকায়েও’র বলে বড় শট মারতে গিয়ে তিনি শর্ট থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন ডেভিড মিলারের হাতে। ১৭তম ওভারে নান্দ্রে বার্গারের ডেলিভারিকে ফাইন লেগের দিকে ঠেলে ভারতের জয় নিশ্চিত করতে তিলক বর্মাকে বিশেষ বেগ অবশ্য পেতে হয় নি। অভিষেক ম্যাচে ৫৫ করে অপরাজিত রইলেন সাই সুদর্শন।
জোহানেসবার্গে আজ ছিলো ‘পিঙ্ক ডে।’ গোলাপী জার্সিতে মাঠে নেমেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু মাঠে আগাগোড়া আধিপত্য বজায় রেখে ‘গোলাপি দিবস’কে ‘মেন ইন ব্লু’র নীলে রঙে রাঙিয়ে দিলো টিম ইন্ডিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতের ওডিআই সিরিজ জয়ের বিশেষ নজির নেই। মহম্মদ আজহারউদ্দীন থেকে মহেন্দ্র সিং ধোনি, হারতে হয়েছে সকলকেই। এমনকি বর্তমানে ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড় যখন অধিনায়ক ছিলেন, তিনিও হেরেছিলেন ৪-০ ফলে। জয়ী অধিনায়কের তালিকায় একমাত্র নাম রয়েছে বিরাট কোহলির। আজ ১-০ ফলে এগিয়ে গিয়ে কোহলির সাথে সেই তালিকায় নিজের নামটাও সামিল করে ফেলার দিকে একধাপ এগোলেন কে এল রাহুল। ১৯ তারিখ পরবর্তী ম্যাচ কেবের্হায়। সেখানেই টি-২০ ম্যাচে হেরেছিলো ভারত। পরাজয়ের স্মৃতিকে পিছনে ফেলে ইতিহাস লেখার সংকল্প নিয়েই মাঠে নামতে চাইবে টিম ইন্ডিয়া।
Also Read: SA vs IND: “ভয় ধরাবে এই বোলিং…” আবেশ-আর্শদীপে ছিন্নভিন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা, চুটিয়ে উপভোগ করলো নেটজনতা !!