WTC Final: ১৯৯৯-এর ওয়ান ডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে স্টিভ ওয়া’র ক্যাচ হাতছাড়া করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শেল গিবস। অজি অধিনায়ক সেদিন গিবস’কে নাকি বলেছিলেন, “ওহে তুমি তো বিশ্বকাপটাই হাত থেকে ফেলে দিলে।” মিলে গিয়েছিলো স্টিভের ভবিষ্যদ্বাণী। সেদিন ট্রফির দৌড় থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিলো দক্ষিণ আফিকাকে। সেই ঘটনার ঠিক ২৬ বছর পর প্রোটিয়াদের পাল্টা দেওয়ার সুযোগ করে দিলেন ক্রিকেট ঈশ্বর। কাকতালীন ভাবে এই ঘটনার সাথেও জড়িয়ে রইলো এক স্টিভের নাম। তিনি স্টিভ ওয়া নন, স্টিভ স্মিথ। গতকাল স্লিপে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক তেম্বা বাভুমার সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেছিলেন তিনি। সেদিন ওয়া যেমন তফাৎ গড়ে দিয়েছিলেন, তেমন লর্ডসের বাইশ গজে এইডেন মার্করামকে সাথে নিয়ে তফাৎ গড়ে দিলেন বাভুমাই। ৫ উইকেটের ব্যবধানে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) মুকুট ছিনিয়ে নিলো দক্ষিণ আফ্রিকা।
Read More: আইসিসির মাথায় বসে দেশকে ধোঁকা দিচ্ছেন জয় শাহ, ভারতে হবে না কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল !!
ম্যাচ জেতালেন মার্করাম-বাভুমা-

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনালের প্রথম দুই দিন ছড়ি ঘুরিয়েছিলো ‘ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন’ অস্ট্রেলিয়াই। ব্যাগি গ্রিনদের তোলা ২১২-এর জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিলো মাত্র ১৩৮ রানে। ৭৪ রানের লিড পান প্যাট কামিন্সরা (Pat Cummins)। দ্বিতীয় ইনিংসে খানিক সমস্যার মুখে পড়েছিলো অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং। কিন্তু লোয়ার অর্ডারে অ্যালেক্স ক্যারি (৪৩) ও মিচেল স্টার্কের (৫৬*) রানের সুবাদে ২০৭ অবধি পৌঁছে যায় তারা। চতুর্থ ইনিংসের জয়ের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮২। ২০০৫-এর পর লর্ডসে ২০০’র বেশী রান তাড়া করে জয়ের কোনো নজির ছিলো না এতদিন। কঠিন পরিস্থিতিতে রান তাড়া করতে নেমে জোড়া ধাক্কাও খেয়েছিলো প্রোটিয়ারা। শুরুতেই রায়ান রিকলটন ও উইয়ান মুল্ডারকে সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক (Mitchell Starc)।
৭০ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে বসা প্রোটিয়াদের লড়াইতে ফেরান এইডেন মার্করাম (Aiden Markram) ও তেম্বা বাভুমা (Temba Bavuma)। মার্করামের নেতৃত্বে অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্ট বিশ্বখেতাব জয়ের দিনেও তিনিই বসলেন নায়কের আসনে। স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজেলউড ত্রয়ীকে মুহূর্তের জন্যও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেন নি তিনি। স্যুইং, সিম, লর্ডসের ঢাল সামলে ২০৭ বলে করলেন ১৩৬ রান। অপর প্রান্তে তাঁকে যোগ্য সহায়তা করেন অধিনায়ক বাভুমাও (Temba Bavuma)। স্মিথ ক্যাচ ফস্কানোয় ইনিংসের শুরুতেই দ্বিতীয় জীবন পেয়েছিলেন তিনি। আর কোনো সুযোগ প্রতিপক্ষকে দেন নি তিনি। চতুর্থ দিনের শুরুতে ৬৬ করে যখন ফেরেন সাজঘরে ততক্ষণে ম্যাচ প্রায় হাতের মুঠোয়। মার্করাম-বাভুমার ১৪৭ রানের জুটিই টেস্ট বিশ্বখেতাব (WTC) কেড়ে নিলো অস্ট্রেলিয়ার মুঠো থেকে।
ট্রফি খরা কাটিয়ে উঠলো দক্ষিণ আফ্রিকা-

২০২৫ যেন খেতাব খরা কাটিয়ে ওঠার বছর। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত কয়েকমাসে পরপর ট্রফির স্বাদ পেয়েছে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড, ক্রিস্টাল প্যালেস, টটেনহ্যাম হটস্পার, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) মত দল। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো দক্ষিণ আফ্রিকার নাম’ও। ‘চোকার্স’ তকমা ঝেড়ে ফেললো তারা। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিলো প্রোটিয়ারা। এরপর কেটে গিয়েছে আড়াই দশকেরও বেশী সময়। একের পর এক আইসিসি টুর্নামেন্টে কখনও সেমিফাইনাল আবার কখনও ফাইনালে উঠে খালি হাতে মাঠ ছেড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দু প্লেসি, গ্রেম স্মিথ, এবি ডিভিলিয়ার্সের মত কিংবদন্তি তারকারা যা পারেন নি সেই অসাধ্যসাধনই করে দেখালো বাভুমাবাহিনী। দেশকে তাঁরা উপহার দিলেন সাফল্যের স্বাদ। ‘ক্রিকেটের মক্কা’ লর্ডসে উড়লো রামধনু দেশের পতাকা।