২০২৩-এর বিশ্বকাপে ক্রিকেটদুনিয়াকে চমকে দিয়েছিলেন মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। প্রথম চার ম্যাচে সুযোগই পান নি বাংলার ফাস্ট বোলার। টিম কম্বিনেশনের জন্য শামিকে রিজার্ভ বেঞ্চে রেখেছিলেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়। সুযোগ মেলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হার্দিক পান্ডিয়া গোড়ালিতে চোট পাওয়ার পর। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ধর্মশালার মাঠে পাঁচ উইকেট নিয়ে শামি (Mohammed Shami)বুঝিয়ে দেন যে আর বাইরে বসিয়ে রাখা যাবে না তাঁকে। শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড-প্রতিপক্ষকে রীতিমত গুঁড়িয়ে দিয়ে এগোতে থাকে শামির বিজয়রথ। শোরগোল ফেলে দেন তিনি। ১০.৭০ গড়ে ৭ ম্যাচে ২৪ উইকেট নিয়ে হন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। খাতায়-কলমে টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কার বিরাট কোহলি পেলেও অনেকেই শামিকে সেরা বলে মেনে নেন।
বিশ্বকাপে ২৪ উইকেট নেওয়ার পথে জাভাগাল শ্রীনাথ, জাহির খানদের পিছনে ফেলে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হওয়ার নজির গড়েন শামি। প্রথম ভারতীয় হিসেবে ওডিআই বিশ্বকাপে ৫০-এর বেশী উইকেট নেওয়ার রেকর্ড’ও নিজের নামে করেন তিনি। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টিম ইন্ডিয়া হারলেও মহম্মদ শামির অসামান্য বোলিং-কে স্বীকৃতি দিতে ভুল করে নি কেন্দ্রীয় সরকার। তারা অর্জুন পুরষ্কারে সম্মানিত করেছে তাঁকে। দিনকয়েক আগে রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান পেয়েছেন শামি (Mohammed Shami)। বিশ্বকাপের পর জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও চোটের কারণে ক্রিকেট মাঠ থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। আগামীতে কি অপেক্ষা করছে শামি’র জন্য? অবসরের সিদ্ধান্ত কবে নিতে পারেন? টিভি-১৮ নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অকপটে সব প্রশ্নের জবাব দিলেন ভারতীয় পেসার।
Read More: IND vs ENG: টিম ইন্ডিয়ার জন্য বড় ধাক্কা, গোটা ইংল্যান্ড সিরিজ থেকেই আউট বিরাট কোহলি !!
অবসর নিয়ে অকপট মহম্মদ শামি-
বর্তমানে শামির (Mohammed Shami) বয়স ৩৩। চোট-আঘাত সমস্যা বেশ কিছুদিন ধরে ভোগাচ্ছে তাঁকে। কাঁধের সমস্যার কারণে ২০২২-এর শেষের দিকে খেলতে পারেন নি। দলে ফেরেন ২০২৩-এর গোড়ায়। এরপর গোড়ালির চোট ভুগিয়েছে তাঁকে। ইঞ্জেকশন নিয়ে বিশ্বকাপ খেললেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ বা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে পারেন নি তিনি। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক টেস্ট দলে তাঁকে রাখা হলেও পরে নাম প্রত্যাহার করে নেন শামি (Mohammed Shami)। খেলেন নি ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ বা ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই টেস্ট ম্যাচ’ও। চোটে বিব্রত শামি’র ক্রিকেটীয় কেরিয়ারের আয়ূ আর কতদিন? কবে তুলে রাখতে পারেন বুটজোড়া? টিভি-১৮ নেটওয়ার্কের তরফে এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। চাঁচাছোলা ভাষাতেই উত্তর দিয়েছেন তিনি।
শামি বলেন, “যেদিন ক্রিকেট খেলার ইচ্ছেটা চলে যাবে, সেদিনই আমি ছেড়ে দেব। আমার কোনো বোঝা বওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই, কাউকে কোনো কৈফিয়ত’ও দেওয়ার নেই, পরিবারের কেউও আমায় কিছু বলবে না। যেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হবে যে ‘আবার মাঠে যেতে হবে!’ সেদিনই আমি ট্যুইট করে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।” ক্রীড়াবিদদের বায়োপিকের চল রয়েছে বর্তমানে। শচীন তেন্ডুলকর, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, মহেন্দ্র সিং ধোনি, মিথালী রাজদের ‘বায়োপিক’ এসেছে। মুক্তি পেতে চলেছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বায়োপিক। উত্তরপ্রদেশের আমরোহা থেকে কলকাতা হয়ে শামি’র (Mohammed Shami) জাতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোতে উঠে আসার গল্প চলচ্চিত্রের পর্দায় ফুটে উঠবে? কে থাকছেন মুখ্য ভূমিকায়? প্রশ্ন ছিলো শামির কাছে। মজা করে ক্রিকেট তারকা জানিয়েছেন, “বায়োপিক অবশ্যই আসবে। কোনো অভিনেতা পাওয়া না গেলে ক্রিকেট ছাড়ার পর নিজেই অভিনয় করে নেব।”
সেরা অধিনায়ক বেছে নিলেন শামি-
সাক্ষাৎকারে বিরাট কোহলি (Virat Kohli) আর রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) মধ্যে কে বেশী বিধ্বংসী তা জানতে চাওয়া হয় শামির কাছে। উত্তরে হিটম্যানকেই বেছে নেন তিনি। জানান, “বিরাট কোহলি কোমল হাতে শট মারে। বরং রোহিত লম্বা লম্বা শট মারে। ও বেশী ভয়ঙ্কর।” অধিনায়ক হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনি’কেই (MS Dhoni) একমেবাদ্বিতীয়ম বলে মানছেন শামি। জানান, “আমার ধোনিকেই বেশী ‘স্পেশ্যাল’ মনে হয়। কারণ উনি দেশের জন্য তিনটি ট্রফি জিতেছেন। ধোনি যা অর্জন করেছেন, হয়ত কেউ তার সমপরিমাণ অর্জন করতে পারেন নি।”