গত দেড় দশক, ভারত তথা বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। দিল্লীর ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক আঙিনায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ২০০৮ সালে। অধিনায়ক হিসেবে জিতে নিয়েছিলেন অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ (U19 World Cup)। সেই বছরই সিনিয়র দলের হয়ে অভিষেকও হয় তাঁর। খেলেন ওডিআই। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি তাঁকে। তিন ফর্ম্যাটেই হয়ে উঠেছেন বিশ্বসেরা। কেড়ে নিয়েছেন প্রতিপক্ষ বোলারের রাতের ঘুম। গড়েছেন একের পর এক রেকর্ড। বিশ্বের সকল প্রান্তে রানের রংমশাল জ্বলেছে তাঁর ব্যাটে। ইতিমধ্যেই ২৫০০০ রানের মাইলস্টোন পেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক শতরানের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৮০। ওডিআই ক্রিকেটে শতকের নিরিখে তিনি পিছনে ফেলেছেন খোদ শচীন তেন্ডুলকরকেই।
৯০-এর দশক ও নয়া শতাব্দীর শুরুর দিকে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে ক্রিকেটদুনিয়া কাঁপিয়েছেন শচীন তেন্ডুলকর। তিনি বিদায় নেওয়ার পূর্বেই ভারত বিরাট কোহলির (Virat Kohli) মধ্যে খুঁজে নিয়েছিলো তাঁর উত্তরসূরিকে। দেখতে দেখতে ৩৫ ছুঁয়েছেন বিরাট (Virat Kohli)। ইতিমধ্যেই সরে দাঁড়িয়েছেন টি-২০ থেকে। বাকি দুই ফর্ম্যাটেও হয়ত ইতি টানবেন আর বছর খানেকের মধ্যে। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন? এখন এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে ক্রিকেটমহলের অলিন্দে। পৃথ্বী শ-এর উপর আশা রেখেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু মূলস্রোত থেকে একপ্রকার হারিয়েই যাওয়ার পথে তিনি। সম্ভাবনা ছিলো ঈশান কিষণের (Ishan Kishan) মধ্যেও। অনেকেই ভেবেছিলেন বিরাটের (Virat Kohli) জুতোয় পা গলাতে পারবেন প্রতিভাবান তরুণ। কিন্তু বিসিসিআই-এর রাজনীতির শিকার হয়ে হারিয়ে যাওয়ার পথে তিনিও।
Read More: IPL 2025: গুজরাট নয় বরং SRH’এ সামিল হচ্ছেন যুবরাজ সিং, নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা !!
অনবদ্য ব্যাটিং-এ মন জিতেছিলেন ঈশান-
সাড়া জাগিয়ে ক্রিকেটের দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ঈশান কিষণ (Ishan Kishan)। কোহলির মতই তিনিও অধিনায়ক হিসেবে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে। মালয়েশিয়াতে ২০০৮-এ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছিলো বিরাটের দল। ঠিক ৮ বছর পর, অর্থাৎ ২০১৬তে পূর্বসূরিকে আর স্পর্শ করা হয় নি কিষণের নেতৃত্বাধীন ‘বয়েজ ইন ব্লু’র। ঢাকা’র মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৫ উইকেটে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁদের। যদিও এই টুর্নামেন্টই ঝাড়খণ্ডের উইকেটরক্ষক-ব্যাটারকে জায়গা করে দিয়েছিলো দেশের ক্রিকেটীয় মানচিত্রে। এরপরেই আইপিএলে (IPL) সুযোগ পান তিনি। শুরু হয় বড় মঞ্চে তাঁর জাত চেনানোর কাহিনী। গুজরাত লায়ন্স, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জার্সিতে প্রতিথযশা বোলারদের মহড়া নেন সহজেই।
২০২১ সালে ডাক এসেছিলো জাতীয় দলের। আহমেদাবাদে প্রথম সুযোগ পান ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচে। অভিষেক ম্যাচেই ৫৬ রান করে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন ঈশান (Ishan Kishan)। জুটি বেঁধেছিলেন বিরাটের (Virat Kohli) সাথেই। ঐ একই বছরের জুলাই মাসে অভিষেক হয় একদিনের ক্রিকেটে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজেকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের তরুণ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মাঠে ঝড় তোলেন তিনি। সেই সময় কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে ওডিআই-তে দ্বিশতরানের নজির গড়েছিলেন তিনি। একই দিনে দ্রুততম দ্বিশতকের রেকর্ডও নিজের নামে করে নিয়েছিলেন তিনি। ২০২৩-এ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতিতে বড় ইনিংস খেলে কুড়িয়েছিলেন তারিফ।
বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্বে ‘একঘরে’ তরুণ তুর্কি-
টি-২০ ও ওডিআই ক্রিকেটে টিম ইন্ডিয়াতে নিয়মিত হয়ে ওঠার পর বাকি ছিলো কেবল টেস্ট খেলা। সেই মাইলফলক’ও ঈশান কিষণ (Ishan Kishan) স্পর্শ করেন ২০২৩-এ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি অর্ধশতরানও করেন। কিন্তু এরপরেই ওলটপালট হয়ে যায় তাঁর কেরিয়ার। বোর্ডের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে কার্যত একঘরে হয়ে পড়েন তিনি। ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩-এর ডিসেম্বর মাসে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের মাঝপথেই মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ানোর আবেদন করেছিলেন তিনি। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে তাঁর আবেদন মঞ্জুরও করেছিলো বোর্ড। কিন্তু এরপর থেকে ঈশানের (Ishan Kishan) কার্যকলাপ ভালো চোখে দেখে নি বিসিসিআই। দুই পক্ষের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়, তার ফল আজও ভুগে চলেছেন তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার।
বোর্ডের অনুমতি না নিয়েই দুবাইতে একটি বর্ষবরণের পার্টিতে চলে গিয়েছিলেন ঈশান। দেশে ফিরে অমিতাভ বচ্চন সঞ্চালিত একটি টিভি শো’তেও যান তিনি। এরপর জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন ঘটানোর জন্য তাঁকে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করার নির্দেশ দেওয়া হয় বিসিসিআই-এর তরফ থেকে। কিন্তু সেই নির্দেশ কার্যত উপেক্ষা করে আইপিএলের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। যা অন্ধকারে ঠেলে দেয় ঈশানকে (Ishan Kishan)। ক্ষিপ্ত বোর্ড আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ বা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাঁকে জায়গা তো দেয়ই নি, উলটে কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে ছেঁটে ফেলে ঈশানকে। শাস্তি যে এখনও সম্পূর্ণ হয় নি তার স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে টি-২০ বিশ্বকাপ বা শ্রীলঙ্কা সফরের দলেও তাঁকে জায়গা না দিয়ে। দ্রুত বিষয়টির নিষ্পত্তি না হলে ঈশানের ক্রিকেট কেরিয়ার যে ঘোর সঙ্কটে সে ব্যপারে নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা।