IPL 2024: আজ আইপিএলের (IPL) আসরে মুখোমুখি সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। টুর্নামেন্টের সপ্তদশ মরসুমের শুরুটা দুই পক্ষই করেছে পরাজয় দিয়ে। মুম্বই হেরেছে গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে। আজ কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ’কে। আজ রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই দলের কাছেই চ্যালেঞ্জ মরসুমের প্রথম জয় ছিনিয়ে নেওয়ার। ব্যাট-বলের দ্বৈরথ শুরুর আগে টসের মুদ্রা পড়েছিলো মুম্বইয়ের পক্ষে। প্রথমে বোলিং বেছে নেন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। এরপর ম্যাচে এখনও পর্যন্ত আর কিছুই পক্ষে যায় নি পাঁচ বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়নদের। হার্দিক-বাহিনীর বোলিং রীতিমত বিধ্বস্ত হলো অভিষেক শর্মা, ট্র্যাভিস হেড, হেনরিখ ক্লাসেনদের ঝোড়ো ব্যাটিং-এ।
ওপেন করতে নেমেছিলেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল ও ট্র্যাভিস হেড। কর্ণাটকের মায়াঙ্ক খানিক সময় নিয়েছিলেন ক্রিজে থিতু হতে। হেড বরং সম্পূর্ণ উল্টো। প্রথম বল থেকেই আক্রমণাত্মক তিনি। মুম্বই বোলিং-কে ব্যাকফুটে ঠেলতে বেশী সময় খরচ করেন নি তিনি। দীর্ঘ সময় পর আইপিএল খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই করলেন দুর্দান্ত অর্ধশতক। মায়াঙ্ক বড় রান না পেলেও সানরাইজার্সের ইনিংসের ভিত গড়েন হেড’ই। পাঞ্জাবের তরুণ অভিষেক শর্মা এরপর যোগ দেন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, ওডিআই বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়কের সাথে। দুর্ধর্ষ অর্ধশতক করেন তিনিও। ইনিংসের গতি রুদ্ধ হতে দেন নি এইডেন মার্করাম ও হেনরিখ ক্লাসেন। দুই প্রোটিয়া ব্যাটারের জুটিতে এলো আরও ১১৬ রান। এতদিন পুণে ওয়ারিয়র্সের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর তোলা ২৬৩ ছিলো আইপিএলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তাদের টপকে নতুন রেকর্ড গড়ে সানরাইজার্স থামলো ৩ উইকেটের বিনিময়ে ২৭৭ রানে।
Read More: IPL 2024: হার্দিকের ছবি স্ক্রিনে ফুটে উঠতেই জুতো ছুঁড়লেন রোহিত ভক্তরা, মুহূর্তে ভিডিও হল ভাইরাল !!
হেড-অভিষেক যুগলবন্দী গুঁড়িয়ে দেয় মুম্বইকে-
প্রথম ম্যাচে সানরাইজার্সের কমলা জার্সিতে মাঠে নামেন নি ট্র্যাভিস হেড। ইডেনে তাঁকে না খেলানো যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো না, তা অস্ট্রেলীয় বাম হাতি প্রমাণ করলেন আজ। শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিং করেন তিনি। হেডের আগ্রাসনে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিলো মুম্বই বোলিং। সদ্য অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা কোয়েনা মাপাখা’র হাতে নতুন বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক হার্দিক। স্কুল ছাত্রের আত্মবিশ্বাস গুঁড়িয়ে দেয় হেডের ধুন্ধুমার ব্যাটিং। এক ওভারে কোয়েনা’কে দুটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি। এরপর নিজে বোলিং করতে আসেন হার্দিক। শর্ট বল অস্ত্রে মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে সাজঘরে ফেরালেও প্রতিপক্ষকে রুখতে পারেন নি তিনি। দলের সেরা বোলিং অস্ত্র জসপ্রীত বুমরাহ কেন পাওয়ার-প্লে’তে মাত্র ১ ওভার বোলিং করছেন, সেই রহস্যের জট কাটলো না আজও।
১৫ রান করে মায়াঙ্ক আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন অভিষেক শর্মা। হেডের সাথে ধ্বংসযজ্ঞে যোগ দেন পাঞ্জাবের তরুণ। ২৪ বলে ৯টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে হেড করেন ৬২। স্ট্রাইক রেট ২৫৮.৩৩। প্রোটিয়া পেসার জেরাল্ড ক্যুৎসিয়ে’র বলে শেষমেশ আউট হন। স্ট্রাইক রেটের নিরিখে আজ তাঁকে ছাপিয়ে গিয়েছেন অভিষেক। পাঞ্জাবের তরুণের ব্যাট থেকে আসে ২৩ বলে ৬৩ রান। পীয়ূষ চাওলার বলে নমন ধিরের হাতে ধরা পড়ার আগে ৩টি চার ও ৭টি বিশাল ছক্কা হাঁকান তিনি। স্ট্রাইক রেট অবিশ্বাস্য- ২৭৩.৯১। হেড ও অভিষেকের জুটিতে আসে ৬৮ রান। অস্ট্রেলীয় তারকা আউট হওয়ার পর এইডেন মার্করামের সাথেও জুটি গড়েন অভিষেক। স্কোরবোর্ডে যোগ করেন আরও ৫৮ রান।
প্রোটিয়া পাওয়ারে রানের শিখরে সানরাইজার্স-
ট্র্যাভিস হেড ও অভিষেক শর্মা’র উইকেট তুলে নেওয়ার পরেও বিন্দুমাত্র স্বস্তি পান নি মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বোলাররা। তাঁদের উপর স্টিমরোলার চালালেন এইডেন মার্করাম ও হেনরিখ ক্লাসেন। সানরাইজার্সের প্রাক্তন অধিনায়ক করেন ২৮ বলে অপরাজিত ৪২ রান। আজকের ম্যাচের নিরিখে ১৫০ স্ট্রাইক রেটে খেলা তাঁর এই ইনিংসকে নিতান্ত সাধারণ মনে হতে বাধ্য। কারণ অপর প্রান্ত থেকে হেনরিখ হারিকেন আছড়ে পড়ে মুম্বই শিবিরে। কলকাতার বিরুদ্ধে দুরন্ত ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেন নি হেনরিখ ক্লাসেন। আজ যেন সেই আক্ষেপ ব্যাট হাতে সুদে-আসলে মিটিয়ে নিলেন তিনি। ৩৪ বলে ৪টি চার ও ৭টি ছক্কার সাহায্যে ৮৪ রান করে থাকেন অপরাজিত। নির্ধারিত ২০ ওভারে ২৭৭ রান করে এক দশকেরও বেশী সময় টিকে থাকা RCB-র রেকর্ড চুরমার করলো সানরাইজার্স।
আজ রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে বেহাল দশা মুম্বই বোলিং-এর। অভিষেক ম্যাচে কোয়েনা মাপাখা খরচ করেছেন ৪ ওভারে ৬৬ রান। ইকোনমি রেট ১৬.৫০। পান নি একটিও উইকেট। অধিনায়ক হার্দিক একটি উইকেট পেলেও ৪ ওভারে খরচ করেছেন ৪৬ রান। ইকোনমি রেট ১১.৫০। দক্ষিণ আফ্রিকার জেরাল্ড ক্যুৎসিয়ে আউট করেছেন ট্র্যাভিস হেড’কে। কিন্তু তাঁর খরচের খাতায় রানের সংখ্যা ৫৭। ইকোনমি ১৪.২০। অবস্থা বিশেষ সুবিধার নয় স্পিনারদেরও। শামস মুলানি ২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৬.৫০ ইকোনমি রেটে খরচ করেছেন ৩৩ রান। শেষ ওভারে তাঁর বিরুদ্ধে ঝোড় তোলেন ক্লাসেন। ১৭ ইকোনমি রেটে ২ ওভারে ৩৪ খরচ করেছেন পীয়ূষ চাওলা’ও। বোলারদের বধ্যভূমিতেও ব্যতিক্রম একমাত্র বুমরাহ। ১০ পেরোয় নি তাঁর ইকোনমি রেট। ডেথ ওভারে বোলিং করলেও ৪ ওভারে ৯ ইকোনমি রেটে ৩৬ রানই খরচ করেছেন তিনি।