IND vs ENG: হায়দ্রাবাদের মাঠে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ হেরে খানিক পিছিয়ে পড়েছিলো ভারত। কিন্তু ঘুরে দাঁড়াতে এরপর বেশী সময় খরচ করে নি রোহিত শর্মা’র দল। প্রথমে বিশাখাপত্তনম, তারপর রাজকোট এবং শেষে রাঁচী-টানা তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ পকেটে পুরে নিয়েছিলো তারা। খাতায়-কলমে ধর্মশালার পঞ্চম টেস্টটি হয়ে দাঁড়িয়েছিলো নিয়মরক্ষার। তা সত্ত্বেও অ্যাক্সিলারেটর থেকে পা সরাতে দল যে রাজী নয়, তা প্রমাণিত হয়ে গেলো কুলদীপ যাদব, রবিচন্দ্রণ অশ্বিনদের পারফর্ম্যান্সে। প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডকে রীতিমত নাস্তানাবুদ করে মাত্র তিন দিনেই জয় ছিনিয়ে নিলো টিম ইন্ডিয়া। ইনিংস ও ৬৪ রানের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে ভারত বনাম ইংল্যান্ড (IND vs ENG) সিরিজকে বিদায় জানালো ‘মেন ইন ব্লু।’
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলো ইংল্যান্ড। কুলদীপ ও অশ্বিনের ঘূর্ণিতে অসহায় আত্মসমর্পণ করে তারা থামে ২১৮ রানে। প্রতিপক্ষের উপর এরপর রানের বোঝা চাপিয়ে দেয় ভারত। প্রথম ইনিংসে রোহিত বাহিনী করে ৪৭৭ রান। ২৫৯ রানের লিড সামলানো সম্ভব হয় নি আর ইংল্যান্ডের পক্ষে। ম্যাচের তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে অশ্বিনের স্পিনের জালে বন্দী হন ক্রলি, ডাকেট, পোপ’রা। ১০০তম ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ৯ উইকেট নিলেন অশ্বিন। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে দুই উইকেট জমা পড়লো কুলদীপ যাদবের ঝুলিতেও। জো রুটের লড়াকু ৮৪ রানের ইনিংস সত্ত্বেও ১৯৫-এর বেশী এগোতে পারে নি ইংল্যান্ড। পিছিয়ে পড়েও যেভাবে সিরিজ মুঠোবন্দী করলো দল, তাতে তৃপ্ত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। খেলা শেষে জানালেন এভাবেই সামনের দিকে এগোতে চান তিনি ও তাঁর সতীর্থেরা।
Read More: IND vs ENG: “অনেক পরিশ্রম করেছি তারই ফল…”, ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয় বড় খোলসা কুলদীপ যাদবের !!
অভিজ্ঞতা কম তবে প্রতিভা নয়, তরুণদের প্রশংসায় রোহিত-
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হার, ঘরের মাঠে ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালেও স্বপ্নভঙ্গ-সব মিলিয়ে গত বছর’টা একরাশ না পাওয়ার যন্ত্রণার মধ্যে দিয়েই কেটেছে ভারতীয় ক্রিকেটের। নতুন বছর নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস দেখা গিয়েছে দলের মধ্যে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ ড্র, আফগানিস্তানকে টি-২০তে হোয়াইটওয়াশ করার পর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে টেস্টের আঙিনায় স্রেফ উড়িয়ে দিলো টিম ইন্ডিয়া। দলের খেলায় খুশি রোহিত শর্মা। ধর্মশালায় সিরিজ শেষে হর্ষ ভোগলেকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় খোলামেলা মেজাজে পাওয়া গেলো ভারত অধিনায়ক’কে। প্রথমেই বলেন, “এইসব ম্যাচগুলো জিততে হলে, সব কিছু একদম ঠিকঠাক হওয়া প্রয়োজন। আজ সেটাই হয়েছে।”
কোহলি, শামি’রা ছিলেন না। মাঝপথে ছিটকে গিয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার, রবীন্দ্র জাদেজারা। তরুণ তুর্কিদের কাঁধে বড় দায়িত্ব চাপিয়েছিলো দল। প্রায় প্রত্যেকেই সেই দায়িত্ব পালন করেছেন দুর্দান্তভাবে। সঞ্চালক হর্ষ প্রশ্ন করেন রোহিতকে, “ব্যাটিং অর্ডারের দিকে তাকিয়ে তোমার কখনও মনে হয়েছে যে তোমার সাথে বাকিরা তো প্রায় সকলেই নবীন!” উত্তরে সরফরাজ, যশস্বী, ধ্রুব জুড়েলদের প্রাণখোলা প্রশংসা শোনা গিয়েছে ভারত অধিনায়কের গলায়। জানান, “একটা পর্বের পর কেউ কেউ ছেড়ে যাবে, নতুন কাউকে সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই হবে। আমি আগেও বলেছিলাম, যে ওদের অভিজ্ঞতা কম হতে পারে, কিন্তু ওরা যথেষ্ট ক্রিকেট খেলেছে। আমি এখানে দাঁড়িয়ে বলতেই পারি যে চাপের মুখে ওরা দুর্দান্ত ভাবে সাড়া দিয়েছে। এই (জয়ের) কৃতিত্ব গোটা দলের।”
সিরিজ জয়ে বোলারদের ভূমিকা নিয়ে অকপট অধিনায়ক-
ব্যাটারদের পাশাপাশি ইংল্যান্ডকে কোণঠাসা করতে বড় ভূমিকা নিয়েছেন বোলাররা। অশ্বিন-জাদেজার পরীক্ষিত স্পিন জুটির পাশাপাশি ঘাতক হয়ে উঠেছেন জসপ্রীত বুমরাহ, কুলদীপ যাদব, মহম্মদ সিরাজ, আকাশ দীপরাও। দলের ‘ফাইভ স্টার’ বোলিং পারফর্ম্যান্সকে কুর্ণিশ জানাতে ভোলেন নি রোহিত শর্মা। খেলা শেষে তিনি জানান, “এইসব সিরিজ জয়ের পর আমরা আলোচনা করি কে কত রান করলো, কে কটা শতরান করলো, কিন্তু টেস্ট জিততে গেলে (প্রতিপক্ষের) ২০টা উইকেট তোলাও গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে বোলাররা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে, তা আমার মন ভরিয়ে দিয়েছে।”
ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই নজর কেড়েছেন কুলদীপ যাদব। তাঁর পারফর্ম্যান্সের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে রোহিতের মন্তব্য, “আমরা ওর সাথে আলাদা করে কথা বলেছি। ওর মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। যখন প্রথম ইনিংসে দল খানিক চাপে ছিলো, ও দুর্দান্ত বোলিং করেছে। চোট সারিয়ে ফিরে ও এনসিএ-তে প্রচুর মেহনত করেছে। সবচেয়ে তৃপ্তির বিষয় অবশ্যই ওর ব্যাটিং-এ উন্নতি।” সিরিজে মোট ৭১২ রান করেছেন যশস্বী জয়সওয়াল। কোনো একটি সিরিজে কোনো ভারতীয়ের করা সর্বোচ্চ রান। মুম্বইয়ের তরুণ’কে নিয়ে রোহিত বলেন, “ওকে এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। যেখানে রয়েছে সেটা অসামান্য। ওর মত প্রতিভা যে কিনা (ইনিংসের) শুরু থেকেই প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর চাপ বাড়াতে সক্ষম, তাকে আগামীতে অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। তবে ও দৃঢ় মানসিকতাসম্পন্ন। চ্যালেঞ্জ ভালোবাসে। অবশ্যই ওর জন্য একটা দুর্দান্ত সিরিজ।”