IPL 2024: গত ২৬ নভেম্বর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (IPL) সপ্তদশ মরসুমের জন্য রিলিজ-রিটেনশন তালিকা প্রকাশ করেছিলো দশ ফ্র্যাঞ্চাইজি। এরপর ১৯ ডিসেম্বর সম্পন্ন হয়েছে নিলাম’ও। ৩৩ জন ক্রিকেটারের তালিকা থেকে প্রয়োজনমত ক্রিকেটার বেছে নিয়েছে দলগুলি। ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ শিবিরে যোগ দিয়েছেন তিনি। আরেক বিশ্বজয়ী মিচেল স্টার্কের জন্য কলকাতা নাইট রাইডার্স খরচ করেছে ২৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অস্ট্রেলিয়ার অনামী পেসার স্পেন্সার জনসনের জন্য ১০ কোটি খরচ করতে দুইবার ভাবে নি গুজরাত টাইটান্স। এই বিপুল অর্থের বৃষ্টির মাঝেও চর্চায় রয়ে গিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। গুজরাত টাইটান্স ছেড়ে যেভাবে তিনি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে ফিরেছেন, তাকে এক কথায় ‘রুদ্ধশ্বাস’ বলে ব্যাখ্যা করছে ক্রিকেটমহল।
রিলিজ-রিটেনশন তালিকা প্রকাশের দিনকয়েক আগে থেকেই হার্দিক পান্ডিয়ার দলবদলের জল্পনা ভাসছিলো ক্রিকেটমহলের অলিন্দে। ২০২২ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ছেড়েই তিনি যোগ দিয়েছিলেন গুজরাত টাইটান্স দলে। সেখানে অধিনায়ক হিসেবে হার্দিক (Hardik Pandya) ট্রফিও জেতেন। ২০২৩-এ নিজের দ্বিতীয় মরসুমেও দলকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। আচমকাই ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে মনোমালিন্যের খবর সামনে আসে। শোনা যায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গেই প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে কথা চালাচ্ছেন তিনি। ২৬ তারিখ গুজরাত (GT) দলের প্রাথমিক রিটেনশন তালিকায় হার্দিকের নাম দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন দলবদলের খবর আসলে গুজব। কিন্তু সেইদিনই সন্ধ্যেবেলায় ক্রিকবাজ সূত্রে জানা যায় মুম্বইয়ের (MI) সাথে চুক্তি সাক্ষর করে ফেলেছেন হার্দিক। পরদিন সরকারীভাবে ঘোষণা করা হয় দলবদলের খবর। হার্দিকের ‘ঘরে ফেরা’ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। আইপিএলের নিয়ম ভেঙেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। উঠছে অভিযোগ।
Read More: IPL 2024: মুজিবের পরিবর্তে এই ৩ স্পিনারকে সামিল করতে চলেছে KKR, তালিকায় রয়েছে বিশ্বের সেরাও !!
ব্যান হয়েছিলেন জাদেজা, বোর্ড নিশ্চুপ হার্দিকের ক্ষেত্রে-
হার্দিকের প্রত্যাবর্তনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে ক্রিকেটমহলে। অনেকেই মনে করছেন হার্দিককে হারিয়ে গুজরাত টাইটান্স ক্ষতির সম্মুখীন হবে। রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের মত অনেকে মনে করছেন ভারতীয় অলরাউন্ডারকে ফিরিয়ে ‘সোনার খনির’ সন্ধান পেয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI) ফ্র্যাঞ্চাইজি। অনেকে আবার দ্বিচারিতার অভিযোগ আনছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের উপর। আজ থেকে তেরো বছর আগে ২০১০ সালে রবীন্দ্র জাদেজার (Ravindra Jadeja) সাথে ঘটা একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে আনছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে তখন খেলতেন জাদেজা। ২০১০-এ তিনি চেয়েছিলেন দল বদলাতে। চুক্তিবদ্ধ থাকা অবস্থায় অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে দলবদলের কথা চালানো আইপিএলের (IPL) নিয়মিবিরুদ্ধ। এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এক বছর আইপিএল থেকে জাদেজাকে নির্বাসন দেয় ভারতীয় বোর্ড।
হার্দিকের (Hardik Pandya) মত হাই প্রোফাইল দলবদল তারকা ক্রিকেটারকে অন্ধকারে রেখে সম্পূর্ণ হয়েছে, এমনটা মানতে রাজী নন অনেকেই। বিশেষত গত ১৩ ডিসেম্বর হার্দিককে মুম্বই অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করার পর এই দাবী জোরালো হয়েছে। গুজরাত টাইটান্সের (GT) সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকালীনই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সাথে দলবদলের শর্ত ঠিক করেছেন হার্দিক, উঠছে অভিযোগ। এই ঘটনায় বিসিসিআই কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দ্বিচারিতা দেখছেন অনেকে। গত দুই বছরে হার্দিককে (Hardik Pandya) সাদা বলের খেলায় পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে বোর্ড। বিসিসিআই-এর ‘ব্লু আইড বয়’ বলেই কি জাদেজার মত কঠোর হওয়া যাচ্ছে না হার্দিকের বিরুদ্ধে, প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
ক্ষোভ উগড়ে দিলেন প্রাক্তন KKR কর্তা-
হার্দিক পান্ডিয়ার (Hardik Pandya) দলবদল ও বোর্ডের নির্বিকার থাকা নিয়ে রীতিমত ক্ষুব্ধ প্রাক্তন কলকাতা নাইট রাইডার্স ডায়রেক্টর জয় ভট্টাচার্য্য (Joy Bhattacharya)। তিনি দলবদলের খবর প্রকাশিত হওয়ার পরদিনই ইউটিউব চ্যানেল ‘ওকট্রি স্পোর্টস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, “আমার মনে হয় নি এটা টুর্নামেন্টের জন্য ভালো হলো। কারণ ২০১০ সালে প্রায় একই রকম ঘটনা রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে ঘটেছিলো। তখন ও (রবীন্দ্র জাদেজা) একটা নির্দিষ্ট মরসুম খেলতে পারে নি কারণ ও চুক্তি থাকাকালীন দল ছেড়ে আসতে চেয়েছিলো। ও বলেছিলো রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলতে চায় না। ফলত এক বছর নির্বাসিত ছিলো। তখন বলা হয়েছিলো নিয়ম ভাঙা চলবে না।…”
জয় ভট্টাচার্য্যের (Joy Bhattacharya) বক্তব্য, “…নিলাম থেকে কাউকে নেওয়ার পর তার খেলতে রাজী না হওয়ার এই যে ধারা, এটাকে বাড়তে দিলে, তা পরে টুর্নামেন্টের জন্য বড় একটা ভালো হবে না।” তিনি আরও বলেন, “…২০১০ সালে এটা বন্ধ করা গিয়েছিলো। কিন্তু ২০২৩ সালে ফের এটা হতে দেওয়া হলো। সত্যি বলতে এমনটা যদি চলতে থাকে তাহলে খেলোয়াড়রা বুঝে যাবে যে যথেষ্ট বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো রাস্তা খোলা থাকবে না। এটা লীগের জন্য একটা ভালো বিজ্ঞাপন নয়।”
হার্দিকের (Hardik Pandya) দলবদলের প্রেক্ষিত জয় ভট্টাচার্য্য (Joy Bhattacharya) জানান, “গুজরাতের হাতে দুটি বিকল্প খোলা ছিলো। ওরা হার্দিককে ছেড়ে দিতে পারত। সেক্ষেত্রে কিছু অর্থ হাতে আসত, তা দিয়ে বিশ্বমানের কিছু খেলোয়াড়কে দলে ধরে রাখতে পারত ওরা। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ওরা হার্দিককে ধরে রাখতে পারত। এক মরসুমে হয়ত মধ্যমানের কিছু পারফর্ম্যান্স পেত। কিন্তু পরের মরসুমে যখন ও দল ছাড়ত, তখন গুজরাত কিছুই পেত না। সেই কারণেই ফ্র্যাঞ্চাইজির হাতে (হার্দিককে ছেড়ে দেওয়া ব্যতীত) অন্য কোনো বিকল্প খোলা ছিলো না।”