গত শনিবার বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে ইতিহাস লিখেছে রোহিত শর্মা’র (Rohit Sharma) নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ক্রিকেট দল (Team India)। ওয়েস্ট ইণ্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পর তৃতীয় দল হিসেবে তারা জিতে নিয়েছে দ্বিতীয় টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup)। ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ভারত যখন প্রথমবার ট্রফি জিতেছিলো, তখন রোহিত (Rohit Sharma) নেহাৎ একজন তরুণ তুর্কি। ফাইনালে সেদিন ১৬ বলে তাঁর ৩০ রানের ইনিংস টিম ইন্ডিয়াকে সাফল্য এনে দিয়েছিলো। সেই জয়ের সতেরো বছর পর যখন দ্বিতীয় খেতাব এলো, তখন তিনিই অধিনায়ক। গত বারো মাসে হিটম্যানের অধিনায়কত্বে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ও ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরেছিলো টিম ইন্ডিয়া। এবারের ফাইনালে জয় যেন দলের সাথে শাপমুক্তি ঘটালো অধিনায়কেরও। টি-২০ থেকে অবসর নেওয়ার আগে সর্বোচ্চ শৃঙ্গজয়ের স্বাদটুকু পেলেন রোহিত (Rohit Sharma)।
রোহিত (Rohit Sharma) ও তাঁর সতীর্থদের স্মরণীয় পারফর্ম্যান্সকে যখন কুর্নিশ জানাচ্ছে ক্রিকেটবিশ্ব, তখন ভারতের পড়শি দেশ পাকিস্তানের ক্রিকেটমহলে আক্ষেপের সুর। ২০২৩-এর এশিয়া কাপ, ওডিআই বিশ্বকাপে আশানুরূপ ফল হয় নি। একটি টুর্নামেন্টেরও ফাইনালে অবধি পৌঁছায় নি পাক দল। কুড়ি-বিশের বিশ্বযুদ্ধে তাদের থেকে প্রত্যাশা ছিলো ভালো ফলের। কিন্তু আবারও মুখ থুবড়ে পড়েছেন বাবর আজম (Babar Azam), শাহীন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ’রা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে হারই এক বিরাট ধাক্কা হয়ে দেখা দিয়েছিলো। এরপর নিউ ইয়র্কে ভারতের বিরুদ্ধে হারের অভিঘাত আর সামলাতে পারে নি বাবর বাহিনী। আমেরিকা বনাম আয়ারল্যান্ড ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় গ্রুপ পর্ব থেকে তাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়। ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য দেশে-বিদেশে সমালোচিত ক্রিকেটাররা। তোপের মুখে অধিনায়ক বাবর আজম।
Read More: শ্রেয়স-ধনশ্রীর পর ফোকাসে রিঙ্কু-রিভাবা, বার্বাডোজ গ্যালারির ভিডিও হলো ভাইরাল !!
বাবর’কে ‘দুর্বল’ বললেন আফ্রিদি-
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের জন্য কাঠগড়ায় অধিনায়ক বাবর আজম (Babar Azam)। অধিনায়ক ও ব্যাটার, দুই ভূমিকাতেই তিনি আশানুরূপ প্রদর্শন করতে পারেন নি, উঠছে অভিযোগ। প্রতিভা থাকলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে পাল্টানোর দক্ষতা তাঁর নেই বলেই মনে করছেন পাকিস্তানের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে পাওয়ার প্লে’তে তাঁর মন্থর স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা উঠেছে বহুদিন আগে থেকেই। ভারত বনাম ইংল্যান্ড সেমিফাইনালের পর টেন স্পোর্টসের স্টুডিয়োতে বসে বাবর’কে আক্রমণ করেছিলেন শোয়েব মালিক (Shoaib Malik)। আধুনিক টি-২০’তে আদৌ তিনি কতটা মানানসই, প্রশ্ন তুলেছিলেন তা নিয়ে। শোয়েব জানান, “আমাদের সেরা ক্রিকেটার বাবর আজম। কিন্তু ও কি বিশ্বের সেরা যে টি-২০ দলগুলো রয়েছে, সেখানে জায়গা করে নিতে পারবে? ভারত, ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার একাদশে কি ও সুযোগ পাবে? উত্তর হলো না।”
Shoaib Malik 🗣️:#BabarAzam cant be fitted in any top international side like India, Australia, England etc. He further said, even Nepal will not pick Babar Azam in their team. #PakistanCricket #T20WorldCup pic.twitter.com/D9rVL1Wind
— विवेक सिंह नेताजी (@INCVivekSingh) July 1, 2024
শোয়েবের পর বাবরকে (Babar Azam) একহাত নিলেন আরেক প্রাক্তন পাক অধিনায়ক শাহীদ আফ্রিদি (Shahid Afridi)। সংবাদসংস্থা PTI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাবরের অধিনায়কত্ব নিয়ে কাটাছেঁড়া করেন তিনি। বলেন, “একজন নেতার ভূমিকা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়কের শরীরী ভাষাই দলের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। নেতাকে উদাহরণ তৈরি করতে হয়। রোহিতকেই দেখুন। ওর খেলার ধরণ দেখুন। লোয়ার অর্ডারের ব্যাটাররাও আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামতে পারে কারণ ওদের অধিনায়ক আগ্রাসী, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। আমি সবসময় মনে করি যে নেতার ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।” টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর বাবর আজম জানিয়েছিলেন যে বেশ কিছু পদে রদবদল দেখা যেতে পারে। সেই প্রসঙ্গে আফ্রিদি’র মন্তব্য, “আমি ইতিবাচক কিছু বদলের আশা করছি।”
বদলের অপেক্ষায় রয়েছেন শাহীদ আফ্রিদি-
টি-২০ বিশ্বকাপ চলাকালীন সামা টিভি’কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বোমা ফাটিয়েছিলেন শাহীদ আফ্রিদি (Shahid Afridi)। তখনও দলের হতাশাজনক পারফর্ম্যান্সের দায় তিনি বাবরের কাঁধেই চাপিয়েছিলেন। বলেন, “একজন অধিনায়কের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়। অধিনায়ক হয় দলকে তৈরি করে দেয়, অথবা তাকে ধ্বংস করে দেয়। কোচের ভূমিকা এখন গৌণ। আসল ক্ষমতা থাকে অধিনায়কের হাতেই।” যেভাবে মাত্র একটি সিরিজে হারের পরেই শাহীন শাহ আফ্রিদিকে সরিয়ে ফের টি-২০ নেতৃত্বে ফেরানো হয়েছিলো বাবর’কে (Babar Azam), তারও সমালোচনা করেন তিনি। শাহীন সম্পর্কে তাঁর জামাই, তাই বিশদে না গেলেও আফ্রিদি জানান, “আমি মুখ খুলতে চাই না। শাহীনের সাথে আমার যা সম্পর্ক, কিছু বললেই সবাই ভাববে জামাইয়ের পক্ষে কথা বলছি। কিন্তু সত্যিটা তা নয়। আমার ছেলে, মেয়ে, জামাই যেই হোক না কেন, ভুলটা ভুলই থাকে।“
সেদিনের সাক্ষাৎকারে পিসিবি’র পর্দা ফাঁস করার কথা জানিয়েছিলেন আফ্রিদি (Shahid Afridi)। যদিও PTI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তেমন কিছু বলেন নি। বরং জানান, “আমি জানি না পিসিবি চেয়ারম্যানের ভাবনায় কি রয়েছে। আমি মুখিয়ে আছি কি বদল আসে তা দেখতে। আমি সবসময় দলকে সমর্থন করেছি। ভবিষ্যতেও করে চলবো। কিন্তু কি বদল আসে তা দেখতে চাই। একটা ইতিবাচক পরিবর্তন অবশ্যই করা প্রয়োজন। কেবলমাত্র বাহ্যিক পরিবর্তনে কিছু হবে না। সমস্যার মূল নিহিত রয়েছে তৃণমূল স্তরে। আমাদের পণ্য’টা দূর্বল তৃণমূল স্তরে। যদি সেখানে বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে ভালো খেলোয়াড়রা নিশ্চয়ই উঠে আসবে।” আগামী বছরে রয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আয়োজন করার কথা পাকিস্তানেরই। ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বাবর’রা? সকলের মতই উত্তরের আশায় রয়েছেন আফ্রিদিও।