আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup) কারা গায়ে চাপাবেন ভারতীয় জার্সি? আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রিকেটজনতার মনে। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার কে হবেন তা নিয়ে নিঃসন্দেহে রয়েছে সবচেয়ে বেশী কৌতূহল। দৌড়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে চলতি আইপিএলের (IPL) পারফর্ম্যান্স বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই মতামত প্রথম একাদশে নিজের জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছেন দিল্লী ক্যাপিটালস অধিনায়ক ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি কাটিয়ে ১৪ মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন তিনি। আর প্রত্যাবর্তন মধুর করে রেখেছেন ব্যাট হাতে। দিল্লী আপাতত রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। তবে পন্থ ঝড়ে বিপর্যস্ত বিপক্ষ বোলাররা।
আপাতত ৮টি ম্যাচ খেলেছেন ঋষভ (Rishabh Pant)। এর মধ্যেই তিনটি অর্ধশতক এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। মোট রান ৩৪২। স্ট্রাইক রেট ১৬১.৩২। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সবার উপরে রয়েছেন বিরাট কোহলি। তার ঠিক পরেই রয়েছেন ঋষভ (Rishabh Pant)। এর আগেও বেশ কয়েকটি চমকপ্রদ ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু গতকাল গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ঋষভের ব্যাটিং সন্দেহ দূর করেছে টি-২০ বিশ্বকাপে তাঁর নির্বাচন নিয়ে। মাত্র ৪৩ বলে ৮৮* রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন তিনি। ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞ মোহিত শর্মা’কে (Mohit Sharma) শেষ ওভারে ৩১ রান খরচে বাধ্য করে ঋষভ বুঝিয়ে দিয়েছেন আসন্ন টুর্নামেন্টের জন্য তিনি প্রস্তুত। তাঁর ব্যাটিং বিস্ফোরণ অবশ্য বিশ্বকাপের দরজা বন্ধ করেছে চার উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের সামনে।
Read More: আইপিএলের মাঝপথেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর প্রাক্তন অধিনায়কের, স্তম্ভিত ক্রিকেটদুনিয়া !!
কে এল রাহুল-

২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) পরেই কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে জাতীয় দলের জার্সি আর গায়ে চাপানোর সুযোগ হয় নি কে এল রাহুলের (KL Rahul)। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের সাথে সাথে তাঁকেও মাঠের বাইরেই রাখার নীতি নিয়েছিলো বিসিসিআই। টি-২০ বিশ্বকাপের আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কোহলি (Virat Kohli), রোহিতদের দলে ফেরানো হলেও সুযোগ পান নি রাহুল (KL Rahul)। কর্ণাটকের ক্রিকেটার অবশ্য বুঝেছিলেন যে উইকেটরক্ষক ব্যাটারের জায়গায় চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে চলেছে টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) দল বাছাইয়ের সময়। সেই কারণেই আইপিএলকে নিজের প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন তিনি।
দলে ক্যুইন্টন ডি ককের (Quinton De Kock) মত পরীক্ষিত উইকেটরক্ষক থাকা সত্ত্বেও আইপিএলে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের (LSG) হয়ে দস্তানা হাতে তুলে নিয়েছেন রাহুল’ই। বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশই একমত যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানে জায়গা করে নিতেই উইকেটের পিছনে দাঁড়াচ্ছেন রাহুল (KL Rahul)। চলতি আইপিএলে তাঁর পারফর্ম্যান্স ব্যাট হাতে ভালোই। ৮ ম্যাচে ৩০২ রান করেছেন তিনি। রয়েছে ২ অর্ধশতকও। কিন্তু স্ট্রাইক রেটের কারণে পিছিয়ে পড়েছেন আপাতত রাহুল। গত টি-২০ বিশ্বকাপেও রাহুলের স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা উঠেছিলো। এবারও যে গতিতে ইনিংস সাজাচ্ছেন তিনি, তা বিশ্বমঞ্চের জন্য আদর্শ নয় বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
ঈশান কিষণ-

নতুন বছরের গোড়া থেকেই বিতর্কের সম্মুখীন ঈশান কিষণ (Ishan Kishan)। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর চলাকালীন মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির দোহাই দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ঝাড়খণ্ডের তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। এরপর তাঁর কর্মকাণ্ড ভালো চোখে দেখে নি দেশের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। বোর্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার নির্দেশ অমান্য করেও বিতর্কে জড়ান ঈশান (Ishan Kishan)। শাস্তিস্বরূপ কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে ব্যাড দেওয়া হয় ঈশানকে। অন্ধকারের মুখে পড়েছিলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার। এত কিছুর পরেও কোচ রাহুল দ্রাবিড় জানিয়েছিলেন যে টি-২০ বিশ্বকাপের সম্ভাব্যদের তালিকায় রয়েছেন ঈশান। আইপিএল (IPL) পারফর্ম্যান্স তাঁকে ফেরাতে পারত দলে। কিন্তু আপাতত সেই সম্ভাবনা ক্ষীণই।
চলতি মরসুমে ঈশান কিষণের (Ishan Kishan) ব্যাটিং-এ ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট হয়েছে। তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৬৮-এর কাছাকাছি হলেও ৮ ম্যাচ খেলে ঈশান ২৪ গড়ে করেছেন ১৯২ রান। যা বিশ্বকাপের জন্য যথেষ্ট নয় বলেই ধারণা ক্রিকেটমহলের। একই সাথে ঈশানকে সুযোগ দিলে তিনি কোথায় ব্যাটিং করবেন তা নিয়েও রয়েছে ধাঁধা। আপাতত মনে করা হচ্ছে রোহিত শর্মা’র সাথে যশস্বী জয়সওয়াল’ই হতে চলেছেন ওপেনিং জুটি হিসেবে প্রথম পছন্দ। অনেকে রোহিত-বিরাট জুটির কথাও বলছেন। রয়েছেন শুভমান গিল’ও। ঈশানের পক্ষে তাই ওপেনার হিসেবে খেলা কঠিন। মিডল অর্ডারে তিনি বিশেষ কার্যকরী নয়। সেই কারণেই টিম কম্বিনেশনের কথা ভেবে হয়ত ব্যাড পড়বেন তিনি।
জিতেশ শর্মা-

গত কয়েক মাসে ভারতের হয়ে টি-২০ ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসেবে আদর্শ বিকল্প হয়ে ওঠার আভাস দিয়েছিলেন জিতেশ শর্মা (Jitesh Sharma)। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়েই নজর কেড়েছিলেন তিনি। এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ঈশান কিষণকে রিজার্ভ বেঞ্চে রেখে জিতেশকে প্রথম একাদশে রাখার কথা ভেবেছিলেন কোচ রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। কোচের আস্থার দামও দিয়েছিলেন তিনি। অনেকেই ভেবেছিলেন জিতেশের মধ্যেই টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) উইকেটরক্ষকে খুঁজে নিয়েছেন দ্রাবিড়। কিন্তু গত কয়েক মাসে অনেকখানি বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। আইপিএলে চূড়ান্ত অফ ফর্মে জিতেশ। মুখ থুবড়ে পড়েছে তাঁর দল পাঞ্জাব’ও। সম্ভবত বাইরেই থাকতে হবে তাঁকে।
এই মুহূর্তে লীগ তালিকায় নয় নম্বরে রয়েছে পাঞ্জাব। লোয়ার অর্ডারে ফিনিশার হিসেবে নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়েছেন জিতেশ শর্মা। এখনও অবধি তিনি ৮ ম্যাচ খেলেছে ১৬ গড়ে করেছেন কেবল ১২৮ রান। একটিও অর্ধশতক আসে নি জিতেশের (Jitesh Sharma) ব্যাট থেকে। সর্বোচ্চ ২৯ রান। তাঁর স্ট্রাইক রেট’ও কেবল ১২৫.৪৯। জিতেশের উপর খোদ পাঞ্জাব ((PBKS) ফ্র্যাঞ্চাইজিও যে বিশেষ আস্থা রাখছে না তার প্রমাণও মিলেছে ইতিমধ্যে। প্রীতি জিন্টার দল মরসুমের শুরুতে তাঁকে সহ-অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করেছিলো। কিন্তু অধিনায়ক শিখর ধাওয়ান ছিটকে যাওয়ার পর নেতৃত্বভার জিতেশ নয় বরং সঁপে দেওয়া হয়েছে স্যাম কারানের কাঁধে।
সঞ্জু স্যামসন-

ভারতীয় দলে সঞ্জু স্যামসন (Sanju Samson) প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন ২০১৫ সালে। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হারারে’র মাঠে অভিষেক হয়েছিলো তাঁর। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও নিয়মিত হয়ে উঠতে আর পারেন নি কেরলের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। গত কয়েকমাসে নানা সময় তাঁকে সুযোগ দিলেও বড় টুর্নামেন্টগুলির আগে ছেঁটে ফেলার ঘটনাই বারবার চোখে পড়েছে। এশিয়া কাপে অতিরিক্ত হিসেবে ছিলেন স্কোয়াডে। কে এল রাহুল (KL Rahul)সম্পূর্ণ ফিট হয়ে দলের সাথে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ছিলেন না ওডিআই বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও। হার্দিক চোট পাওয়ার পরেও বিকল্প ক্রিকেটার হিসেবে নেওয়া হয় নি সঞ্জুকে।
সাম্প্রতিক ফর্মের নিরিখে টি-২০ বিশ্বকাপের সম্ভাব্যদের তালিকায় অবশ্য ছিলেন সঞ্জু’ও (Sanju Samson)। তাঁর নেতৃত্বাধীন রাজস্থান রয়্যালস রয়েছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। মাত্র ৮ ম্যাচের মধ্যেই ৭জয়-সহ ১৪ পয়েন্টে পৌঁছে প্লে-অফ প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে তারা। ব্যাট হাতে ভালো ছন্দেই রয়েছেন সঞ্জু নিজেও। ৮ ম্যাচে ৩১৪ রান করে ফেলেছেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ১৫৩-এর আশেপাশে। নির্বাচকদের বৈঠকে সঞ্জুর নাম যে আলোচনায় উঠবে তা একপ্রকার নিশ্চিতই। কিন্তু টপ-অর্ডার ব্যাটার হওয়ায় খানিক পিছিয়ে পড়তে পারেন তিনি। কোহলি, রোহিত, যশস্বীদের ভীড়ে তাঁর জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া সম্ভবত কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন পন্থ (Rishabh Pant)। তবে দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে স্কোয়াডের অংশ হতে পারেন সঞ্জু।