WTC Final: ভারতীয় ক্রিকেটে অন্ধকার সময় চলছেই। ২০১৩ সালে শেষবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিলো দল। এরপর থেকে বারবার আইসিসি প্রতিযোগিতায় ফিরতে হয়ে শূন্য হাতেই। গত ৭ থেকে ১১ জুন ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে ফের একটা সুযোগ এসেছিলো ট্রফি জয়ের। কিন্তু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হেরে সেই সুযোগ হারিয়েছে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ একই ছবি দেখা গিয়েছিলো ২০২১ সালেও। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাউদাম্পটনের মাঠে ৮ উইকেট হেরে টেস্টের বিশ্বখেতাব খুইয়েছিলো ভারতীয় দল। দুই বছর আগের হারের চেয়েও এবারের পরাজয়কে বেশী হৃদয়বিদারক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গতবারের বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে দীর্ঘ সময় সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছিলো ভারত। কিন্তু এবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যেভাবে ম্যাচ খোয়ালো, তাকে অসহায় আত্মসমর্পণ ব্যতীত অন্য কিছু বলতে রাজী নন ক্রিকেটবোদ্ধারা। ব্যাটিং হোক বা বোলিং-প্রতিপক্ষের ধারেকাছে আসতে পারেন নি বিরাট কোহলি (Virat Kohli), মহম্মদ শামি (Mohammed Shami), রোহিত শর্মারা (Rohit Sharma)। ২০৯ রানে হেরে মাঠ ছেড়েছে ‘মেন ইন ব্লু।’ অস্ট্রেলিয়া যখন প্রথম দল হিসেবে সবকটি আইসিসি ট্রফি জয়ের নজির গড়েছে,তখন ভারতীয় শিবির ঢেকেছে হতাশার অন্ধকারে।
Read More: রোহিত শর্মার ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা, BCCI-এর শাস্তির মুখে পড়ে হারাচ্ছেন অধিনায়কত্ব !!
WTC ফাইনালে সমালোচিত অধিনায়ক রোহিত-

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতীয় দলের হারের অন্যতম কারণ হিসেবে দলের মধ্যে আগ্রাসনের অভাবকে দায়ী করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। আগুনে মেজাজের অজিদের বিরুদ্ধে আগাগোড়া যেন গুটিয়ে থেকেছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচে যত সময় এগিয়েছে, ততই জাঁকিয়ে বসেছে ‘ব্যাগি গ্রিন’ বাহিনী। ‘টিম ইন্ডিয়া’র আগ্রাসনের অভাবের জন্য অধিনায়ক রোহিতের (Rohit Sharma) অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজিকেই দায়ী করছে ক্রিকেটবিশ্ব। টসে জিতে প্রথমে বোলিং বেছে নিয়েছিলেন রোহিত (Rohit Sharma)। বুধবার সকালের মেঘলা আবহাওয়ায় ব্যাট হাতে অজি পেসারদের মুখোমুখি হতে চান নি তিনি। এই সিদ্ধান্ত শেষে ব্যুমেরাং হয়ে ফেরে তাঁর দলের দিকেই। খেলা যত এগোয় মেঘ কেটে আকাশ ভরে ঝলমলে রোদে। ব্যাটিং সহজ হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার সামনে। ওভালের বাইশ গজে স্টিভ স্মিথ (Steve Smith) এবং ট্র্যাভিস হেডের (Travis Head) জোড়া শতরানের সুবাদে রানের পাহাড় গড়ে তারা। সেই রানের পাহাড়ের তলাতেই চাপা পড়লো ভারতের টেস্ট খেতাব জয়ের স্বপ্ন।
দুই স্পিনার ও তিন পেসারের চেনা ছকের বাইরে হেঁটে একমাত্র স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার (Ravindra Jadeja) সাথে চার পেসার- মহম্মদ সিরাজ, মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব এবং শার্দূল ঠাকুরকে জুড়ে দিয়েছিলো ভারত। বাদ পড়েছিলেন টেস্ট র্যাঙ্কিং-এ এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর বোলার রবিচন্দ্রণ অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। কেনিংটন ওভালের বাইশ গজে খেলা যত গড়াবে স্পিনারদের ভূমিকা ততই বাড়বে বলে জানিয়েছিলেন সুনীল গাওস্কর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, হরভজন সিং-এর মত প্রাক্তনীরা। অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে তাঁদের কথা। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট নিয়ে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja)। অজিদের হয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে ভাঙেন নাথান লিয়ঁ (Nathan Lyon)। প্রথম একাদশ নিয়ে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) পরিকল্পনা দেখে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক রিকি পন্টিং বলেন, “মনে হচ্ছে ভারত কেবল প্রথম দিনের জন্য দল সাজিয়েছিলো, তবে টেস্ট তো পাঁচ দিনের হয়।”
‘ক্যাপ্টেন কোহলি’র অভাব অনুভব করেছে ভারত-

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারতের শোচনীয় পরাজয় দেখে আক্ষেপ সমর্থকদের। বছর খানেক আগেও যে দল অস্ট্রেলিয়ার কঠিন পরিস্থিতিতে সিরিজ জিতে আসে, চোট-আঘাতকে না ডরিয়ে ৩২ বছর পর অজিদের দুর্ভেদ্য গাব্বা দুর্গের মিনারে উড়িয়ে আসে তিরঙা নিশান, যে দল ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ ড্র রেখে আসে, বা দক্ষিণ আফ্রিকার চোখে চোখ রেখে লড়াই করে, তাদের হঠাৎ এহেন অধঃপতন কেনো? উঠছে প্রশ্ন। তবে জবাব খুঁজে পেতে বিশেষ সময় নেন নি বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ সমর্থক কেউই। অধিনায়কের নাম বিরাট কোহলি (Virat Kohli) না হওয়াই আসলে টেস্টে ভারতের খেলার মানের পতনের কারণ বলে মনে করছেন সকলে। কোহলি যখন নেতা ছিলেন তখন পাঁচ বছর ভারতকে বিশ্ব র্যাঙ্কিং-এ এক নম্বরে রেখেছিলেন। প্রথম এশীয় অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জেতেন তিনি। এছাড়াও কোভিডে স্থগিত হওয়ার আগে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের জায়গায় ছিলো ভারত। পরে অন্তিম টেস্টটি যখন আয়োজিত হয় তখন নেতৃত্ব ছেড়েছেন তিনি। জসপ্রীত বুমরাহ’র (Jasprit Bumrah) অধিনায়কত্বে হেরে ২-২ সিরিজ ড্র করে ভারত।
কোহলির সহজাত আগ্রাসন মাঠে ‘মিস’ করছে ভারত, মত বিশেষজ্ঞদের। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে (Sourav Ganguly) বলতে শোনা গিয়েছে যে কোহলি একজন অত্যন্ত সফল অধিনায়ক। এমনকি ইংল্যান্ডের প্রাক্তন নেতা ইয়ন মর্গ্যান (Eoin Morgan) অবধি বলেছেন “কোহলি নেতা না থাকা মানে ক্ষতি আসলে টেস্ট ক্রিকেটের।” যেভাবে বিরাটকে (Virat Kohli) নেতৃত্ব থেকে সরানো হয়, তা সঠিক ছিলো না বলে মত প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার (Justin Langer)। নেতা হিসেবে বরাবর বিদেশে পেস আক্রমণকে ধারালো রাখতে চেয়েছেন বিরাট। ‘বিপক্ষের ২০ উইকেট তুলতে পারলে তবেই আসবে জয়’-বলতেন কোহলি। ওভালে ভারতীয় বোলাররা যখন মাথা কুটে মরছেন উইকেটের জন্য, তখন ‘ক্যাপ্টেন কোহলি’র অভাব অনুধাবন করতে পারছিলেন সকলেই।