T20 World Cup: আইপিএলের (IPL) দৌলতে স্কোরবোর্ডে ২০০-২৫০ রানও বর্তমানে টি-২০ ক্রিকেটে রীতিমত সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনকয়েক আগেই ইডেন গার্ডেন্সে ২৬২ করেও হারতে হয়েছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (KKR)। ব্যাটিং সর্বস্ব হয়ে ওঠা টি-২০র আসরে এক ভিন্ন স্বাদের ম্যাচ আজ দর্শকদের উপহার দিলো নিউ ইয়র্কের নাসাও কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। চার-ছক্কা’র আস্ফালন নয়, বরং বোলিং-এর কারিকুরি ঠিক করে দিলো ম্যাচের ভবিষ্যৎ। নিউ ইয়র্কের পিচ নিয়ে বিস্তর চর্চা চলছে গত কয়েকদিন ধরে। আজ ভারত-পাক ম্যাচেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখলো বাইশ গজ। রান হয়ত উঠলো না বেশী, কিন্তু এক জমজমাট ম্যাচ নিঃসন্দেহে উপভোগ করতে পারলেন মাঠে উপস্থিত ৩৪০০০ দর্শক। একই সাথে বাড়ির ড্রয়িংরুমে টিভির পর্দায় চোখ রেখেও জমজমাট থ্রিলার উপভোগ করলেন কোটি কোটি ক্রিকেট অনুরাগী।
টসে জিতে আজ প্রথমে বোলিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো পাকিস্তান। ব্যাট করতে নেমে নাসিম শাহ, শাহীন আফ্রিদিদের আক্রমণে একটা সময় দিশাহারা অবস্থা হয়েছিলো টিম ইন্ডিয়ার। বিরাট, রোহিত, সূর্য, হার্দিক-তারকার অভাব ছিলো না ব্যাটিং লাইন আপে। কিন্তু রান পান নি কেউই। ঋষভ পন্থের লড়াকু ইনিংসের ভর করে ১১৯ তোলে ‘মেন ইন ব্লু।’ একটা সময় মনে হয়েছিলো টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) আসরে ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় জয় বুঝি পেতে চলেছে পাকিস্তান। কিন্তু অন্য ভাবনা ছিলো ভারতীয় বোলারদের। ২০২২-এর টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup) বাবরদের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো কোহলির ব্যাট, এবার বল হাতে সেই একই ভূমিকা নিলেন বুমরাহ, পান্ডিয়া, আর্শদীপরা। ১১৩ রানের বেশী এগোতেই পারলো না পাকিস্তান। টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে এখন বিদায়ের মুখে তারা।
Read More: “বিশ্বকাপের আসা ছেড়ে দাও…” পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১১৯ রানে শেষ হলো ভারতের ব্যাটিং, সমাজ মাধ্যমে উঠলো নিন্দার ঝড় !!
ঋষভ ছাড়া রান পেলেন না কেউই-
আরও একবার রোহিত শর্মা’র (Rohit Sharma) সাথে ওপেন করতে নেমেছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১ রান করার পর আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ব্যাট থেকে এলো কেবল ৪। নাসিম শাহের (Naseem Shah) বল তাঁর বাড়িয়ে দেওয়া ব্যাট স্পর্শ করে বল জমা পড়ে পয়েন্টে দাঁড়ানো উসমান খানের হাতে। অসাধারণ একটি ছক্কা মেরে শুরুটা করেছিলেন রোহিত শর্মা। কিন্তু শাহীন শাহ আফ্রিদির ওভারে থামতে হলো তাঁকেও। ফ্লিক করে বড় শট মারতে গিয়ে ধরা পড়েন হারিস রউফের (Haris Rauf) হাতে। দুই মহারথী সাজঘরে ফেরার পর টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খানিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন অক্ষর প্যাটেল (Axar Patel) ও ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। ২০ রান করে নাসিম শাহের বলে অক্ষর বোল্ড হওয়ায় পার্টনারশিপ ভাঙে তাঁদের। ৩৯ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন দুজনে।
সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav), শিবম দুবেরা আজ ক্রিজে কয়েক মুহূর্তের মেহমান হলেন নিউ ইয়র্কে। ৮ বলে ৭ ও ৯ বলে ৩ করে আউট হন দুজনেই। পালটা দিচ্ছিলেন ঋষভ। তাঁর ৩১ বলে ৪২ রানের লড়াকু ইনিংস থামতেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং। বহু যুদ্ধের নায়ক হার্দিক (Hardik Pandya) আজ করেন কেবল ৭ রান। রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja) ও জসপ্রীত বুমরাহ-দুজনেই করেন ‘গোল্ডেন ডাক।’ শেষলগ্নে আর্শদীপের ৯ ও মহম্মদ সিরাজের ৭ রানের ইনিংস ভারতকে ১৯ ওভারে ১১৯ রান অবধি পৌঁছে দেয়। নাসাও কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বোলিং বান্ধব বাইশ গজে আজ চমৎকার পারফর্ম করলেন পাক পেসাররা। নাসিম শাহ ও হারিস রউফ ৩টি করে ও মহম্মদ আমির ২ উইকেট নেন। ১টি উইকেট জমা পড়ে শাহীন শাহ আফ্রিদির ঝুলিতে।
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ হাসি ভারতের-
১২০ রান খাতায়-কলমে টি-২০ ক্রিকেটে হয়ত বিশাল বড় লক্ষ্য নয়, কিন্তু নিউ ইয়র্কের এই পিচে পাকিস্তানের পক্ষে এই রান তাড়া করা যে সহজ হবে না তা আন্দাজ করাই গিয়েছিলো। বাস্তবেও দেখা গেলো তেমনটাই। ওভারপ্রতি ৬ রান করতেই বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হলো বাবরদের (Babar Azam)। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে পাক অধিনায়ককে সাজঘরের রাস্তা দেখিয়ে প্রথম ধাক্কাটা দিয়েছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah)। ১৩ রান করে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এরপর মহম্মদ রিজওয়ান ও উসমান খানের জুটি টিম ইন্ডিয়ার হাতের মুঠো থেকে বেশ খানিকটা দূরে নিয়ে গিয়েছিলো ম্যাচ। রোহিত বাহিনী ম্যাচে ফেরে ১১তম ওভারে। নিজের স্পেলের প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন অক্ষর প্যাটেল (Axar Patel)। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে এই কৃতিত্ব অর্জন করলেন তিনি। ১৩ করে অক্ষরের শিকার হন উসমান।
চারে নামা ফখর জামানকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। ৮ বলে ১৩ রানের বেশী এগোতে পারেন নি তিনি। বুমরাহের বলে উইকেটে জমে যাওয়া মহম্মদ রিজওয়ান (৩১) বোল্ড হতেই দাঁড়িপাল্লা আবার ফিরে আসে সাম্যের অবস্থানে। এরপর শাদাব খানকেও আউট করেন হার্দিক। ১৯তম ওভারে বুমরাহ আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি বিশ্বের সেরা বোলার। গোটা ওভারে খরচ করেন কেবল তিন রান। ষষ্ঠ বলে ইফতিকার আহমেদকে ফিরিয়ে ম্যাচের রাশ তুলে দেন টিম ইন্ডিয়ার হাতে। ৪ ওভারে কেবল ১৪ রান খরচ করে ৩ উইকেট নিলেন তিনি।শেষ ওভারে বাকি ছিলো ১৮ রান। প্রথম বলেই ইমাদ ওয়াসিমকে আউট করেন আর্শদীপ (Arshdeep Singh)। এরপর নাসিম শাহের জোড়া বাউন্ডারিও যথেষ্ট হয় নি জয়ের জন্য। ৬ রানের ব্যবধানে জিতে মাঠ ছাড়লো টিম ইন্ডিয়া।