T20 World Cup: কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের লড়াইতে আজ ভারতের (Team India) মুখোমুখি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA)। নিউ ইয়র্কের উপকন্ঠে গড়ে ওঠা নাসাও কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামছে টিম ইন্ডিয়া। নবনির্মিত এই মাঠ এখনও অবধি ভারতের কাছে অত্যন্ত পয়া। আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে এখান থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলেন রোহিত শর্মা’রা। এরপর ধুন্ধুমার লড়াইতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকেও ৬ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে ভারতীয় দল। আজ আমেরিকার বিরুদ্ধেও ১০০ শতাংশ জয়ের ধারা বজায় রাখাই লক্ষ্য দলের। আয়োজক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে কানাডা ও পাকিস্তানের (PAK) বিরুদ্ধে খেলেছে ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে। আজ প্রথমবার নিউ ইয়র্কে খেলতে চলেছে তারা।
টুর্নামেন্টের অন্যতম চমক হিসেবে উঠে এসেছে হরমীত সিং, সৌরভ নেত্রাভালকার, মোনাঙ্ক প্যাটেল, কোরি অ্যান্ডারসনদের মার্কিন দল। কানাডার বিরুদ্ধে জয়ের পর তারা খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই হারিয়েছে পাকিস্তানকেও। ডালাসে সুপার ওভার অবধি বাবর আজমদের টেনে নিয়ে গিয়ে শেষমেশ হার উপহার দিয়েছে তারা। মনে করা হচ্ছে সব ঠিকঠাক থাকলে ভারতের পাশাপাশি দ্বিতীয় দল হিসেবে গ্রুপ-এ থেকে সুপার এইটে পা দিতে চলেছে তারাই। এবারের টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) মঞ্চকে ক্রিকেট জগতে মার্কিনীদের উত্থানের মঞ্চ হিসেবেও দেখছেন অনেকে। পরবর্তী পর্বে যাবে কি যাবে না তার উত্তর সময় দেবে, তবে নিউ ইয়র্কের স্টেডিয়ামে যে আজই তারা প্রথম ও শেষবার খেলছে তা নিশ্চিত। আমেরিকার ‘বিগ অ্যাপল’-এ আজই যবনিকা পড়ছে টি-২০ বিশ্বকাপের।
Read More: T20 World Cup, Match-25, IND vs USA: বাদ পড়ছেন শিবম দুবে, আমেরিকার বিরুদ্ধে ব্যাটিং অর্ডারে বদল আনছে ভারত !!
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলেছিলো নির্মাণকাজ-
টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) আমেরিকাতে অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণার পরেই ভেন্যু সন্ধান শুরু করে আইসিসি। শেষমেশ ফ্লোরিডা, ডালাসের পাশাপাশি বেছে নেওয়া হয় নিউ ইয়র্ককে। কিন্তু আমেরিকার ‘বিগ অ্যাপল’-এ যে ক্রিকেট পরিকাঠামো ছিলো এতদিন তা টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) মত বড় মাপের প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য যথেষ্ট ছিলো না। সেই জন্যই প্রয়োজন ছিলো নতুন স্টেডিয়ামের। নিউ ইয়র্কের ঠিক কোথায় ক্রিকেটের উপযুক্ত মাঠ নির্মাণ করা হবে তা নিয়ে একটা সময় প্রশ্ন উঠেছিলো। প্রথমে ব্রঙ্কস অঞ্চলের ভ্যান কোর্টল্যান্ড পার্কের কথা ভাবা হয়েছিলো। কিন্তু আপত্তি তোলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে পিছিয়ে আসতে হয় আয়োজকদের। শেষমেশ নাসাও কাউন্টির আইজেনহাওয়ার পার্ককে চিহ্নিত করা হয়।
গত বছরের ৪ অগস্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নাসাও কাউন্টিতে নতুন স্টেডিয়াম আয়োজনের। এরপর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় এগিয়েছে কাজ। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত নির্মাণ সংস্থা পপুলাস এই ভেন্যু নির্মাণের দায়িত্ব পায়। বেসবলের বিখ্যাত দল নিউ ইয়র্ক ইয়াঙ্কিজ, বাস্কেটবলের নিউ ইয়র্ক নেটসের মত দলের স্টেডিয়ামও বানিয়েছে তারা। এমনকি যুক্ত ছিলো ভারতের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজেও। ফর্মূলা ওয়ানে লাস ভেগাস গ্রা প্রিঁ’র গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের কিছু অংশ নাসাও কাউন্টি স্টেডিয়ামে ব্যবহার করা হয়েছে গ্যালারি তৈরিতে। পিচ নির্মাণ সম্ভব ছিলো না নিউ ইয়র্কে। ফলে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে তৈরি করা হয় ড্রপ-ইন পিচ। আউটফিল্ডের জন্য বেছে নেওয়া হয় কেন্টাকি ব্লু গ্রাস। শেষমেশ ২০২৪-এর ১৫ মে কিংবদন্তি অ্যাথলিট উসেইন বোল্টের হাত দয়ে উদ্বোধন করা হয় এই স্টেডিয়াম।
ভেঙে ফেলা হবে স্টেডিয়াম-
১ জুন ভারত বনাম বাংলাদেশ (IND vs BAN) ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচনা হয় নিউ ইয়র্কে। যদিও তা প্রস্তুতি ম্যাচ ছিলো। ৩ তারিখ শ্রীলঙ্কা বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (SL vs SA) ম্যাচ দিয়ে সরকারী ভাবে পথচলা শুরু করে নাসাও কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আইসিসি’র তরফে মোট আটটি ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো নিউ ইয়র্ককে। নিউ ইয়র্ক ও প্বার্শবর্তী অঞ্চলের দক্ষিণ এশীয় জনসংখ্যার কথা ভেবে ভারত-পাকের (IND vs PAK) মত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্বও দেওয়া হয় নিউ ইয়র্ককে। এছাড়াও ভারত-আয়ারল্যান্ড, কানাডা-আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস-দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা-পাকিস্তানের মত ম্যাচও আয়োজিত হয়েছে এখানে। আজ ভারত বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ দিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup) ইতি টানতে চলেছে আমেরিকার ‘বিগ অ্যাপল।’
পরিধি ও দর্শকাসনের দিক দিয়ে ভারতের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের সমকক্ষ এক ভেন্যু অতি অল্প সময়ে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তারা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে গিয়েছে পিচ ও আউটফিল্ড নিয়ে। ড্রপ-ইন পিচ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর যথেষ্ট সময় পায় নি, সেই কারণেই হয়ে উঠেছে ব্যাটারদের বধ্যভূমি। উঠেছে অভিযোগ। এছাড়াও আউটফিল্ড নরম থেকে যাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন ক্রিকেটাররা। আজকের পর অবশ্য এই সব অভাব-অভিযোগই সবই জায়গা করে নেবে ইতিহাসের পাতায়। আমেরিকায় ক্রিকেট বিশেষ জনপ্রিয় নয়, সেই কারণেই সুবিশাল এই স্টেডিয়াম রেখে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে করেছেন স্থানীয় প্রশাসন ও আইসিসি। আজকের ম্যাচ মিটলেই তা ভেঙে ফেলা হবে। প্রসঙ্গত ২০২২-এর ফিফা বিশ্বকাপের পরও এভাবেই ভেঙে ফেলা হয়েছিলো কাতারের স্টেডিয়াম ৯৭৪। একই পথে হাঁটছে মার্কিন মুলুকও।