T20 World Cup: আফগানিস্তানকে প্রথম সেমিফাইনালে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ইতিমধ্যেই টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা (SA)। শনিবারের খেতাবী যুদ্ধে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত (Team India) না ইংল্যান্ড (ENG)? প্রশ্নের উত্তর মিলবে আজ গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে। ২০২২-এর চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড মরিয়া নিজেদের খেতাব রক্ষা করতে। আজ জয়ের জন্য সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা চালাবে তারা। অন্যদিকে ভারতকে বাড়তি উদ্যম যোগাচ্ছে গত টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জস বাটলারদের(Jos Buttler) বিরুদ্ধে ১০ উইকেটের ব্যবধানে বিশাল পরাজয়। আজ দুরন্ত জয় ছিনিয়ে নিয়ে অ্যাডিলেডের সেই হতাশাজনক রাতের ক্ষতে খানিক প্রলেপ দিতে মরিয়া ‘মেন ইন ব্লু।’
টসে জিতে আজ প্রথম টিম ইন্ডিয়াকেই ব্যাটিং-এর আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইংল্যান্ড। বৃষ্টির বাধা রয়েছে পদে পদে। খেলা শুরু হতে দেরী হয়েছে এক ঘন্টা। ভারতের ইনিংস চলাকালীনও আবহাওয়ার জন্য লম্বা সময় বন্ধ ছিলো ম্যাচ। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলো ভারতীয় দল। ওপেনার বিরাট কোহলি (Virat Kohli) আজও চূড়ান্ত ব্যর্থ। আজ রান পান নি ছন্দে থাকা ঋষভ পন্থ’ও। জোড়া উইকেট হারানো ভারতকে এরপর দিশা দেখান রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। সূর্যকুমার যাদবের (Suryakumar Yadav) সাথে জুটি গড়ে এগিয়ে নিয়ে চলেন ইনিংসকে। টানা দ্বিতীয় অর্ধশতকের পর তিনি যখন আউট হন, তখন সুবিধাজনক পরিস্থিতিতেই ছিলো দল। এরপর ম্যাচে ফেরে ইংল্যান্ড। পরপর বেশ কিছু উইকেট তুলে নেয় তারা। শেষমেশ ২০ ওভারে টিম ইন্ডিয়া থেমেছে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ১৭১ রানে।
উজ্জ্বল রোহিতের ব্যাট, সঙ্গত সূর্যের-
বিরাট কোহলিকে (Virat Kohli) ওপেনার হিসেবে খেলানো এই টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup) ভারতের ‘ঐতিহাসিক ভুল’ প্রমাণিত হবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে, তবে আপাতত মনে হচ্ছে তেমনটাই। এর আগে কুড়ি-বিশের বিশ্বমঞ্চে যতগুলি সেমিফাইনাল খেলেছেন তিনি, প্রতিটিতেই ছিলো অর্ধশতক। কিন্তু এবার গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই যেন ধরা দিয়েছেন অচেনা বিরাট (Virat Kohli)। শুরু থেকেই অহেতুক তাড়াহুড়ো দেখা গেলো তাঁর ব্যাটিং-এ। রিস টপলিকে মিড অনের উপর দিয়ে একটি দুর্দান্ত ছক্কা মারলেন বটে, কিন্তু এরপর ভারতীয় তারকার ব্যাট থেকে আর কোনো চার-ছক্কার আতসবাজি চোখে পড়লো না। বরং ৯ বলে মাত্র ৯ করেই ফিরলেন সাজঘরে। টপলিকেই এগিয়ে এসে মারতে গিয়েছিলেন। বল ব্যাটের নাগাল এড়িয়ে আছড়ে পড়ে স্টাম্পে। ১৯ রানের মাথায় ভাঙে ওপেনিং জুটি।
কোহলি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে ফেরেন ঋষভ পন্থ’ও (Rishabh Pant)। স্যাম কারানের বলে মাত্র ৪ রান করে উইকেট হারান তিনি। তবে জোড়া ধাক্কার পর সামলে ওঠে ভারত। সূর্যকুমার যাদব ও রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) জুটি আজ শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করায় দলের ইনিংসকে। ২০২২-এ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৮ বলে ২৭ রানের মন্থর ইনিংস খেলেছিলেন রোহিত। আজ যেন তার প্রায়শ্চিত্তের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন তিনি। দুটি চোখধাঁধানো ছক্কা এলো তাঁর ব্যাট থেকে। মারন ছয়টি চার’ও। আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও করেন অর্ধশতক। ৫৭ রানের মাথায় আক্রমণাত্মক মনোভাব বজায় রাখতে গিয়েই উইকেট হারিয়ে বসেন তিনি। আদিল রশিদের গুগলি স্টাম্প ভেঙে দেয় তাঁর। সূর্যকুমারের সাথে ভারতীয় স্কোরবোর্ডে ৭৩ রান যোগ করেন তিনি।
ভাঙন সামলে লড়াকু স্কোর ভারতের-
রোহিতের সঙ্গে জুটি বেঁধে ভালোই খেলছিলেন সূর্যকুমার যাদব (Suryakmar Yadav)। বড় টুর্নামেন্টে টি-২০ মায়েস্ত্রো’র ব্যাট শান্ত হয়ে যায়, এই অপবাদ ঘোচানোর চেষ্টা পুরোদস্তুর আজ করতে দেখা গেলো তাঁকে। শুরুটাই করেছিলেন স্কুপে ছক্কা হাঁকিয়ে। এরপর কাট, পুলের মত ধ্রুপদী শট’ও আজ বেরিয়েছে সূর্যের তূণ থেকে। গায়ানার মেঘলা আকাশের নীচে প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে ক্ষণে ক্ষণে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সূর্যের ব্যাটিং-এর আলোয়। কিন্তু অধিনায়ক ফেরার পর বেশীক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকতে পারেন নি তিনি। জোফ্রা আর্চারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। ৩৬ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে আজ তাঁর সংগ্রহ ৪৬ রান। ১২৪ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেটটি হারায় টিম ইন্ডিয়া।
পাঁচে আজ নেমেছিলেন হার্দিক (Hardik Pandya)। ১৩ বলে ২৩ রানের ক্যামিও এলো তাঁর ব্যাট থেকে। ক্রিস জর্ডান আউট করেন তাঁকে। আরও একবার ব্যর্থ শিবম দুবে। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বড় শট নয়, বরং ‘গোল্ডেন ডাক’ করে ফেরেন তিনি। ৬ বলে ১০ করে এরপর আউট হন অক্ষর প্যাটেল। গোটা টি-২০ বিশ্বকাপে (T20 World Cup)নিষ্প্রভ ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja)। শেষমেশ আজ ৯ বলে অপরাজিত ১৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস এলো তাঁর ব্যাট থেকে। তাঁর সাথে ১ রানে অপরাজিত রইলেন আর্শদীপ সিং। ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার ক্রিস জর্ডান। নিয়েছেন ৩টি উইকেট। ১টি করে উইকেট জমা পড়েছে টপলি, আর্চার, রশিদ ও কারানের ঝুলিতে। ১৭২-এর লক্ষ্য তারকাখচিত ইংল্যান্ড ব্যাটিং-এর কাছে বিশেষ কঠিন যে নয়, তা মানছেন বিশেষজ্ঞরা। নজর আরও একবার বুমরাহ, আর্শদীপ, কুলদীপদের দিকে।