SA vs IND: গত বছরের শেষ সপ্তাহে সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসারদের দাপটে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছিলো টিম ইন্ডিয়াকে (Team India)। রাবাডা-নান্দ্রে বার্গারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পেরে ইনিংস ও ৩২ রানের ব্যবধানে লজ্জার হারের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। বছর ঘুরতেই যেন বদলে গিয়েছে পারফর্ম্যান্সের মান’ও। আজ কেপ টাউনের নিউল্যান্ডস মাঠে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলো স্বাগতিক দেশ। বল হাতে দিনের প্রথম সেশনেই সেঞ্চুরিয়নের বদলা নিয়ে নিলো ভারত। মহম্মদ সিরাজের স্যুইং-এর হদিশ না পেয়ে নাজেহাল দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম বড় লজ্জার সম্মুখীন হলো আজ
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এশিয়া কাপের ফাইনালের স্মৃতি এখনও তাজা রয়েছে ক্রিকেটজনতার মনে। সেই ম্যাচে একার হাতে প্রতিপক্ষকে ভেঙেছিলেন মহম্মদ সিরাজ। এরপর বিশ্বকাপেও সেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই শুরুতে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে তাঁদের মুম্বইয়ের বাইশ গজ থেকে সটান আরব সাগরের জলে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন তিনি। আজ কেপ টাউনেও সেই একই রণংদেহী মূর্তিতে দেখা গেলো হায়দ্রাবাদী পেসারকে। তাঁর বোলিং জাদুতে বেসামাল হতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৯ ওভারের বোলিং স্পেলেই তছনছ করে দিলেন প্রতিপক্ষকে। পিছিয়ে রইলেন না বুমরাহ, মুকেশ কুমার’রা। ২টি করে উইকেট তাঁদের ঝুলিতেও। গতির আগুন ছুটিয়ে টিম ইন্ডিয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে বেঁধে ফেললো মাত্র ৫৫ রানে।
Read More: SA vs IND: “নিউল্যান্ডসের নবাব…” কেপ টাউনে সিরাজ ঝড়ে দিশাহারা প্রোটিয়ারা, উত্তাল হলো নেটদুনিয়া !!
অবিশ্বাস্য সিরাজ ধস নামালেন প্রোটিয়া ব্যাটিং-এ-
দিনের শুরুতে টসে হারার পর সঞ্চালক রবি শাস্ত্রীকে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা জানিয়েছিলেন প্রাণবন্ত উইকেটে কার্যকরী হবেন তাঁর দলের সিমাররা। অধিনায়কের কথা মিলিয়ে দিলেন সিরাজ-বুমরাহ’রা। প্রতিপক্ষের ব্যাটিং-এ প্রথম আঘাত হানেন সিরাজ। হায়দ্রাবাদী পেসারের বল প্রোটিয়া ওপেনার এইডেন মার্করামের ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে যশস্বী জয়সওয়ালের হাতে। কেরিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা ডিন এলগার এরপর সিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে। গত ম্যাচে ১৮৫ করলেও আজ ৮ রানের বেশী আসে নি তাঁর ব্যাট থেকে। হায়দ্রাবাদী পেসারের পরের শিকার টোনি দে জর্জি। উইকেটরক্ষক কে এল রাহুলের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
সাফল্যের স্বাদ পাওয়ার পর মরিয়া সিরাজ নিজের স্পেলকে দীর্ঘায়িত করলেন আজ। তাঁর চতুর্থ শিকার ডেভিড বেডিংহ্যাম। তিনিও ধরা পড়লেন যশস্বী জয়সওয়ালের হাতে। করলেন ১২ রান। একই ওভারে তিনি ফেরান মার্কো ইয়ানসেনকে। গত ম্যাচে ৮৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। আজ খাতাই খুলতে পারলেন না। ঠান্ডা মাথায় ছক কষে তাঁর ব্যাটের বাইরের কিনারা খুঁজে নিলেন সিরাজ। রিভিউ নিয়ে একবার জীবন ফিরে পেয়েছিলেন উইকেটরক্ষক কাইল ভেরিয়ান। শেষমেশ সিরাজ সুনামিতে তলিয়ে গেলেন তিনিও। তাঁর ক্যাচ ধরেন শুভমান গিল। প্রোটিয়াদের পক্ষে তিনিই সর্বোচ্চ ১৫ রানের ইনিংস খেলেন আজ। ৯ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৫ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নিয়ে থামলেন ভারতীয় পেসার। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটাই কোনো ভারতীয়ের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান।
ধ্বংসযজ্ঞে সঙ্গত দিলেন বুমরাহ-মুকেশ’ও-
সিরাজের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিং-এর ত্রাস হতে উঠতে দেখা গেলো জসপ্রীত বুমরাহ ও মুকেশ কুমারকেও। প্রথম স্পেলে সিরাজের সঙ্গী হিসেবে নতুন বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন বুমরাহ। ফিরিয়েছিলেন ট্রিস্টান স্টাবসকে। নিজের অভিষেক টেস্টে স্টাবস ৩ রানের বেশী করতে পারেন নি। ধরা পড়েন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মার হাতে। এরপর দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এসে বুমরাহ তুলে নেন নান্দ্রে বার্গারের উইকেট। ৮ ওভারে ২৫ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নিয়ে থামলেন তিনি।
শার্দুল ঠাকুর না খেলায় প্রথম একাদশে সুযোগ মিলেছে বাংলার মুকেশ কুমারের। সিরাজ-বুমরাহদের সাথে বল হাতে ঝড় তুললেন তিনিও। নিজের প্রথম ওভারেই তিনি আউট করেন কেশব মহারাজকে। মুকেশের শর্ট পিচ বলে পুল করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লেন্থের আন্দাজ করতে পারেন নি। ধরা পড়েন জসপ্রীত বুমরাহ’র বিশ্বস্ত হাতে। এরপর ইনিংসের ২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কাগিসো রাবাডা ফিরতেই দাঁড়ি পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ইনিংসে। ২.২ ওভারে ০ রানের বিনিময়ে ২ উইকেট নিয়ে নজির স্থাপন করলেন মুকেশ। আজ মাত্র ৫৫ রানেই থামলো দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ড। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে ষষ্ঠ সর্বনিম্ন রানের লজ্জার নজির গড়লো তারা।