২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক চলাকালীন সংবাদমাধ্যমের চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নিয়েছিলেন স্প্রিন্টার অস্কার পিস্টোরিয়াস (Oscar Pretorius)। মাত্র ১১ মাস বয়সে দুই পা বাদ পড়েছিলো তাঁর। প্রস্থেটিক পা লাগিয়ে তাঁর দৌড় চমকে দিয়েছিলো বিশ্বকে। প্যারালিম্পিকের দুনিয়ায় ২০১২ সালের আগেই পরিচিত নাম ছিলেন অস্কার (Oscar Pretorius)। অ্যাথেন্স, বেজিং-এ সোনা জিতেছিলেন। কিন্তু ২০১২ সালে প্রথম অ্যাম্পুটি হিসেবে সাধারণ অলিম্পিকে অংশ নেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ৪X১০০ রিলে রেসে’ও অংশ নিয়েছিলেন। পদক না জিতলেও তাঁর লড়াই নজর কেড়ে নিয়েছিলো। ‘ব্লেড রানার’ নামে গোটা বিশ্বে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।
নায়ক থেকে খলনায়ক হতে অবশ্য বিশেষ সময় লাগে নি তাঁর। ২০১৩ সালের ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র দিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা নিজের বাড়িতে প্রেমিকা রিভা স্টিনক্যাম্পকে (Reeva Steencamp) গুলি চালিয়ে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অস্কার প্রিটোরিয়াস পুলিশী জেরার মুখে পড়ে জানান টয়লেটে থাকা অবস্থায় বাইরে আওয়াজ শুনে আত্মরক্ষার খাতিরেই চারবার গুলি চালিয়েছিলেন। রিভা’কে (Reeva Steencamp) হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিলো না তাঁর। দরজা ভেদ করে গুলি লাগে অস্কারের প্রেমিকার শরীরে। মৃত্যু হয় তাঁর। প্রিটোরিয়া হাইকোর্টে ২০১৪ সালের ৩ মার্চ থেকে এই ঘটনার শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে ১৩ বছর ৫ মাসের জেল হেফাজতের সাজা হয় তাঁর।
Read More: ক্রিকেটমহলে চলছে জোর আলোচনা, রোহিতকে সরিয়ে টেস্ট দলের নেতা ফের বিরাট কোহলি !!
দীর্ঘ সময় পর জেলের বাইরে অস্কার-
২০১৩ সালের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় এগারো বছর। জেলেও প্রায় দশ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন অস্কার প্রিটরিয়াস। রিভা স্টিনক্যাম্প (Reeva Steencamp) হত্যার এগারো বছর পর প্যারোলে মুক্ত হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ব্লেড রানার।’ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার সংশোধন বিভাগের তরফ থেকে অস্কারের মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। প্রিটোরিয়ার অ্যাটারিজভিল সংশোধনাগার থেকে অস্কারের বাইরে আসার খবর ব্যতীত অন্য কোনো তথ্য অবশ্য বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় নি। গত নভেম্বরে মাসে তাঁর প্যারোলের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছিলো আদালতের তরফ থেকে। ছাড়া ছাড়ে পেতে আরও প্রায় দুই মাস লেগে গেলো তাঁর। প্রথমে মনে করা হয়েছিলো প্রিটোরিয়ার ওয়াটারক্লুফ অঞ্চলে কাকা’র বাড়িতে থাকবেন অস্কার। সেই ঠিকানায় একটি পুলিশ ভ্যানকেও দেখা গিয়েছিলো।
ওয়াটারক্লুফ অঞ্চলে থাকেন নি অস্কার (Oscar Pretorius)। নিজের বাড়িতেই ফিরেছেন তিনি। ২০২৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সাজার মেয়াদ ফুরোচ্ছে অস্কারের। ততদিন প্যারোলে জেলের বাইরে থাকলেও কর্তৃপক্ষের কড়া নজর থাকবে তাঁর উপর। রিভার মা জুন স্টিনক্যাম্প অস্কারের প্যারোলে মুক্তি পাওয়া নিয়ে আপত্তি জানান নি। তিনি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “রিভা কি সুবিচার পেয়েছে? আপনার প্রিয়জন যদি ফিরে না আসে তাহলে কোনো অবস্থাতেই সুবিচার মেলে না। কোনো জেলের সাজাই তো রিভাকে ফেরত আনবে না। আমরা যাঁরা রয়ে গিয়েছি, আমরাই যাবজ্জীবন সাজা কাটাচ্ছি। অস্কার প্রিটোরিয়াস প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর আমার একমাত্র ইচ্ছা জীবনের বাকি বছরগুলো শান্তিতে রিভা রেবেকা স্টিনক্যাম্প ফাউন্ডেশনের কাজে আত্মনিয়োগ করে কাটাতে। তাতেই রিভার উত্তরাধিকার বেঁচে থাকবে।”