একদিনের বিশ্বকাপ, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হোক বা টি-২০ বিশ্বকাপ, আইসিসি টুর্নামেন্ট মানেই ব্যর্থতা যেন ভারতের নিত্য সঙ্গী হয়ে গিয়েছে। MS ধোনি’র (MS Dhoni) নেতৃত্বে সেই ২০১৩ সালে শেষ আইসিসি ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছিলো ভারত। এরপর থেকে জুটেছে কেবল হতাশা। ফাইনাল, বা সেমিফাইনাল থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে ‘টিম ইন্ডিয়া’কে। ২০২২-এ এসেও বদলালো না ছবিটা। অনেক আশা জাগিয়ে শুরু করেও অস্ট্রেলিয়ায় টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই হারতে হলো ভারত’কে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হারের পর আতসকাঁচের তলায় দলের পারফর্ম্যান্স। কাটা ছেঁড়া চলছে অধিনায়ক রোহিত শর্মা’র দল সামলানোর ক্ষমতা নিয়েও। দলের ওপর রোহিতের নিয়ন্ত্রণ কতটা? এই প্রশ্ন’ও তুলতে শুরু করেছেন অজয় জাদেজা’র মত অনেক প্রাক্তনী। ধারবাহিক ব্যর্থতায় ক্লান্ত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবার বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে বলে খবর। সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বড় দায়িত্ব পেয়ে দলের সাথে যোগ দিতে চলেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
ধোনির হাত ধরে সোনালি সময়-

ভারতের ক্রিকেটে ‘ক্যাপ্টেন’ কথা’টি উচ্চারিত হলে যে নাম’টি প্রথম ক্রিকেটভক্তদের মাথায় আসে তা মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০০৭ সালে একদিনের বিশ্বকাপে বিধ্বস্ত ভারতীয় টিমের সিনিয়র খেলোয়াড়’রা চান নি টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে। এক যুবা দলের অধিনায়ক হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যান ‘মাহি।’ সবাইকে অবাক করে টি-২০ বিশ্বকাপ জিতে ফেরে ভারত। সাফল্যের ধারা অক্ষুণ্ণ রেখে ২০১১ একদিনের বিশ্বকাপ’ও পকেটে পুরে ফেলে ‘মেন ইন ব্লু।’ ঘরের মাঠে ক্যাপ্টেন হিসেবে টস করতে গিয়েছিলেন ধোনি’ই। নিজের মগজাস্ত্রের দুর্দান্ত চালে ইংল্যান্ড’কে ইংল্যান্ডের মাটিতে হারিয়ে ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি’ও ভারত’কে দেন ধোনি/ সেই শেষ। তারপর আর কোনও বিশ্বমঞ্চের প্রতিযোগিতায় সাফল্য পায় নি ‘টিম ইন্ডিয়া।’ ভারতের ক্রিকেটে ধারাবাহিক হতাশা দেখে ব্যথিত সমর্থকেরা মনে করছেন গৌতম গম্ভীরের একটি উক্তি। গম্ভীর বলেছিলেন, “অধিনায়ক আসবে যাবে, কিন্তু ধোনি’র মত তিনটি আইসিসি ট্রফি আর কোনও অধিনায়ক জিতবেন না।” আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন আগেই, কিন্তু ক্রিকেট খেলা ছাড়েন নি মাহি। আগেই জানিয়েছেন যে ২০২৩ আইপিএলে চেন্নাই দলের হয়ে খেলবেন তিনি। তবে ২০২৩-এই হয় ইতি টানবেন মাহি। পুরনো সোনালি দিন ফেরানোর আশায় ধোনি’র দ্বারস্থ’ই হতে চলেছে বোর্ড, খবর এমনই।
ভারতীয় দলে কি হবে ধোনি’র দায়িত্ব?

এর আগেও ২০২১ টি-২০ বিশ্বকাপে মেন্টর হিসেবে ভারতীয় দলের সঙ্গে দুবাই গিয়েছিলেন ধোনি। স্বল্পকালীন ছিলো সেই দায়িত্ব। ভারতের পারফর্ম্যান্স’ও আহামরি কিছু ছিলো না সেই যাত্রায়। তবে দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বিসিসিআই’র অন্দরে কথা চলছে ধোনি’কে স্থায়ী দায়িত্ব দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাথে যুক্ত করার। ক্রিকেটের ৩ ফর্ম্যাটের কোচিং করানো নাকি অতিরিক্ত চাপের হয়ে যাচ্ছে বর্তমান হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের কাছে। তাই ভিন্ন ফর্ম্যাটে ভিন্ন কোচের ধারণা দানা বাঁধছে ভারতীয় বোর্ডের অন্দরে। তাই জন্য আপাতত টি-২০ ক্রিকেটে দলের সাথে যুক্ত হতে অনুরোধ করা হবে ‘মাহি’কে। এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের। কোচ হিসেবে না হলেও মেন্টর বা পরামর্শদাতা হিসেবে ধোনি’কে চাইছে বিসিসিআই। তাঁকে ডায়রেক্টর অফ টি-২০ ক্রিকেট করা হতে পারে। মাহি’র বয়স এখন ৪১। হয়ত আসন্ন ২০২৩ আইপিএল ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর শেষ প্রতিযোগিতা হতে চলেছে। তার পরেই জাতীয় দলের নীল ট্র্যাকস্যুটে ধোনি’কে দেখার আশা করতেই পারেন ক্রিকেটপ্রেমী’রা। ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে হতাশা দিয়ে। আগামী কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপ ২০২৪ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যারিবিয়ান দ্বিপপুঞ্জে। তার আগে ধোনি’র তত্ত্বাবধানে নিজেদের ঝালিয়ে নিক তরুণ প্রতিভা’রা, এমনটাই চাইছে বোর্ড। অপেক্ষা এখন শুধু ধোনি’র সম্মতির।
কোচিং বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে এপেক্স কমিটি বৈঠকে-

সত্যিই কোচিং-এর দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে কিনা বা মহেন্দ্র সিং ধোনি’কে টি-২০ দলের সাথে যুক্ত হওয়ার অনুরোধ করা হবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আগামী এপেক্স কমিটি বৈঠকে। কবে বসবে এই বৈঠক, দিনক্ষণ এখনো ঠিক না হলেও, ভারতের পারফর্ম্যান্স পর্যালোচনা করে কোচিং দায়িত্ব ভাগাভাগি’র আলোচনার সাথে সাথে ক্রিকেট অ্যাডভাইজরি কমিটি গঠন এবং নতুন নির্বাচক কমিটি গঠন সম্পর্কীত আলোচনা হতে পারে এই বৈঠকে।