IPL 2024: ২০২৪-এর আইপিএলে (IPL) বাকি আর কেবলমাত্র একটি ম্যাচ। আগামী রবিবার খেতাবী যুদ্ধে চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) মুখোমুখি হতে চলেছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH)। গত মরসুমে কলকাতা ও হায়দ্রাবাদ-দুই দলই দেখে নি প্লে-অফের মুখ। নাইট রাইডার্স লীগ পর্ব শেষ করেছিলো সপ্তম হয়ে। তাদের ঝুলিতে ছিলো ১২ পয়েন্ট। সানরাইজার্সের অবস্থা ছিলো আরও খারাপ। দশ দলের লীগে তারা ছিলো সবার শেষে। ঝুলিতে মাত্র ৪টি জয়-সহ ছিলো কেবল আট পয়েন্ট। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মাত্র এক মরসুমের মধ্যে ফাইনালে জায়গা করে নেওয়াকে অসামান্য কৃতিত্ব বলে মেনে নিচ্ছে ক্রিকেটমহল।
গত আইপিএলে (IPL) আশানুরূপ পারফর্ম্যান্স না হওয়ার পরে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিলো সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ কর্মকর্তাদের। একাধিক বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কর্ণধার কাব্য মারান। ১৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ‘মিনি’ নিলাম থেকে কেনা হ্যারি ব্রুক’কে (Harry Brook) দল থেকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এছাড়াও ইংল্যান্ডের তারকা স্পিনার আদিল রশিদ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকেল হোসেনকেও বাদ দেওয়ার পথে হাঁটে ‘অরেঞ্জ আর্মি।’ বাদ পড়েন বিভ্রান্ত শর্মা, কার্তিক ত্যাগীরাও। রদবদল করা হয় কোচের পদেও। ব্রায়ান লারা’র (Brian Lara) মত কিংবদন্তিকে সরিয়ে দেওয়ার আগেও দু’বার ভাবেন নি কাব্য। দায়িত্ব দেওয়া হয় ড্যানিয়েল ভেত্তরিকে। নয়া উদ্যমে ২০২৪ মরসুমের মিনি নিলামে অংশ নিয়েছিলো সানরাইজার্স। কাব্য’র (Kavya Maran) মাস্টারস্ট্রোকে নিলামেও সফলতা পায় হায়দ্রাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজি।
Read More: ডিভোর্স হচ্ছেই হার্দিকের, আইনি টানাপোড়েনের আশঙ্কায় ক্রিকেটতারকা !!
কামিন্সের অন্তর্ভুক্তি গড়ে দিয়েছে তফাৎ-
নিলামের আগেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু থেকে ট্রেডিং পদ্ধতিতে মায়াঙ্ক ডাগরের বিনিময়ে শাহবাজ আহমেদকে (Shahbaz Ahmed) দলে নিয়েছিলো সানরাইজার্স। ১৯ ডিসেম্বরের নিলামে তাদের হাতে ছিলো ৩৪ কোটি টাকা। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ট্র্যাভিস হেড, জয়দেব উনাদকাটদের দলে সামিল করে তারা। কিন্তু হেডলাইন কেড়ে নিয়ে যান প্যাট কামিন্স (Pat Cummins)। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ও ওডিআই বিশ্বকাপ (ODI World Cup) জয়ী অধিনায়কের জন্য অল-আউট ঝাঁপিয়েছিলেন কাব্য মারান (Kavya Maran)। প্রবল দড়ি টানাটানিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে নিলামে ২০ কোটির গণ্ডী ছাড়ান কামিন্স। শেষমেশ ২০.৫০ কোটি টাকায় তাঁকে দলে নিতে সক্ষম হয় সানরাইজার্স।
সেই সময় অনেকে এই বিশাল অঙ্ক খরচের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্যাট কামিন্সকে (Pat Cummins) টেস্ট, ওয়ান ডে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেগে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গিয়েছিলো অনেকের মধ্যে। কিন্তু যত টুর্নামেন্ট এগিয়েছে দলের এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন কামিন্সই। এইডেন মার্করামকে সরিয়ে নেতৃত্বভার তুলে দেওয়া হয়েছিলো কামিন্সের কাঁধে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের (SRH) মালিকানাধীন SA20 দল সানরাইজার্স ইস্টার্ণ কেপ’কে টানা দুই বছর নেতা হিসেবে খেতাব জিতিয়েছেন মার্করাম (Aiden Markram)। আইপিএলে (IPL) তাঁকে আরও একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ ছিলো কিনা সেই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন অনেকে। মরসুমের প্রথম ম্যাচেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছিলো কামিন্সের (Pat Cummins) সানরাইজার্স। জটিলতা বাড়ে তার পর।
প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের পরেও ভেঙে পড়ে নি দল। সতীর্থদের নিয়মিত ভরসা যুগিয়ে গিয়েছেন অধিনায়ক। চেয়েছেন ইতিবাচক খেলতে। গত মরসুমে ভুবনেশ্বর কুমারকে পাওয়া যায় নি চেনা ছন্দে। এবার কামিন্স (Pat Cummins) নিয়মিত তাঁকে কঠিন সময়ে বোলিং-এর দায়িত্ব সঁপেছেন। অধিনায়কের ভরসা পেয়ে ফের আগুন ঝরিয়েছেন ভুবি (Bhuvneshwar Kumar)। নটরাজনকেও নতুন করে আবিষ্কার করেছেন ক্যাপ্টেন কামিন্স। ক্লাসেন, হেডের মত আন্তর্জাতিক তারকাদের ভীড়ে কামিন্সের হাত ধরে আলাদা করে নিজেদের চিনিয়েছেন অভিষেক শর্মা (Abhishek Sharma), শাহবাজ আহমেদরাও। মরসুমে ১৭ উইকেট নিয়েছেন কামিন্স (Pat Cummins) নিজে, ব্যাট হাতেও প্রয়োজনের সময় নিয়েছেন কার্যকরী ভূমিকা। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আদায় করে নিয়েছেন ক্রিকেটবোদ্ধাদের কুর্নিশ। মাঠে কামিন্সের পারফর্ম্যান্সের যখন জয়জয়কার, তখন গ্যালারিতে চওড়া হাসি কাব্য মারানের মুখে।