IPL 2024: আগামী ২২ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (IPL)। জমজমাট ক্রিকেটের অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন সকলে। ২০১২ ও ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) ২০২৪-এ মাঠে নামতে চলেছে তৃতীয় খেতাবের সন্ধানে। গত দশ বছরে বিশেষ সাফল্য ধরা দেয় নি তাদের হাতের মুঠোয়। ২০২১ সালে ফাইনাল খেলা ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য পারফর্ম্যান্স চোখে পড়ে নি কোনো। ব্যর্থতার এই ধারাবাহিক চিত্রে খানিক বদল আনতে এবার মরিয়া বেগুনি-সোনালী শিবির। হাল ফেরাতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক শাহরুখ খান (Shah Rukh Khan),জুহি চাওলারা। নিলামে ২৪.৭৫ কোটি খরচ করে মিচেল স্টার্ক’কে (Mitchell Starc) দলে সামিল করতেও পিছপা হন নি তাঁরা। মেন্টর হিসেবে দলের সাথে যুক্ত করেছেন জোড়া ট্রফি জয়ী অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরকে (Gautam Gambhir)।
গত দুই বছর লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস দলের মেন্টর ছিলেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। দুই মরসুমেই সুপারজায়ান্টসদের নিয়ে গিয়েছেন প্লে-অফে। এই বছর যোগ দিয়েছেন নাইট শিবিরে। ‘ঘরে’ ফিরে তিনি যে উচ্ছ্বসিত তা দিনকয়েক আগে একটি অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করেছিলেন গম্ভীর। ইতিমধ্যে ২০২৪ মরসুমের দল গঠনে গম্ভীরের (Gautam Gambhir) পরিকল্পনার ছাপ চোখে পড়েছে। মিচেল স্টার্কের (Mitchell Starc) মত মহাতারকাকে স্কোয়াডে সামিল করেছেন তিনি। সাথে নিয়েছেন অঙ্গকৃষ রঘুবংশী, চেতন সাকারিয়া, শাকিব হুসেনের মত তরুণ প্রতিভাদের। গত মরসুমে দশ দলের লীগে সাত নম্বরে শেষ করেছিলো কলকাতা। ধারাবাহিকতার অভাব ভুগিয়েছিলো নাইট রাইডার্স শিবিরকে। ব্যর্থতার অন্ধকারের মাঝে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হিসেবে ছিলেন কেবল রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। ২০২৪-এ গম্ভীরের তত্ত্বাবধানে আরও ক্ষুরধার হয়ে উঠবেন রিঙ্কু, আশায় অনুরাগীরা।
Read More: IPL 2024: আইপিএল থেকে ‘ছুটি’ হয়ে যাচ্ছে আম্পায়ারদের, এবার সব সিদ্ধান্ত নেবে এই বিশেষ প্রযুক্তি !!
নাইট রাইডার্সের অন্যতম ভরসা রিঙ্কু সিং-
নাইট রাইডার্স শিবিরে বেশ কিছু বছর ধরেই রয়েছেন রিঙ্কু সিং (Rinku Singh)। উত্তরপ্রদেশের ক্রিকেটার প্রথম দিকে বিশেষ সুযোগ পান নি। তবে ২০২২ সালে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের বিরুদ্ধে একটি চমকপ্রদ ইনিংস খেলে প্রথম নজর কাড়েন। দলে নিয়মিত হয়ে ওঠেন ২০২৩-এ। ব্যাট হাতে ধারাবাহিকভাবে নিজের প্রতিভার পরিচয় রাখেন তিনি। নাইট রাইডার্সের পারফর্ম্যান্স বিশেষ উল্লেখযোগ্য না হলেও ক্রিকেটজনতার মন কেড়ে নেন রিঙ্কু (Rinku Singh)। তাঁর উত্থানের শুরুটা হয়েছিলো গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে। আহমেদাবাদের মাঠে শেষ ওভারে ২৯ রান প্রয়োজন ছিলো কলকাতার। হার অবশ্যম্ভাবী ধরে নিয়েছিলেন কেকেআর ভক্তরা। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে আনেন রিঙ্কু। যশ দয়ালকে পরপর পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা মেরে তৈরি করেন ইতিহাস। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি তাঁকে।
গুজরাত ম্যাচের সাফল্য গোটা মরসুম জুড়েই ধরে রেখেছিলেন রিঙ্কু (Rinku Singh)। ব্যাট হাতে প্রায় ৬০ গড় ও ১৫০ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে করেন ৪৭৪ রান। মারেন ২৯টি ছক্কা। কলকাতার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও হন তিনি। এরপর সরাসরি জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। গত কয়েক মাসে দেশের জার্সিতে এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছেন। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তানের মত দেশের বিরুদ্ধে পেয়েছেন সাফল্য। আন্তর্জাতিক টি-২০তে আপাতত ১৫ ম্যাচে ৮৯ গড়ে তাঁর রানসংখ্যা ৩৫৬। স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৭৭। জুন মাস থেকে রয়েছে টি-২০ বিশ্বকাপ। ‘ফিনিশার’ হিসেবে রিঙ্কুই এগিয়ে রয়েছেন সুযোগ পাওয়ার দৌড়ে। আইপিএলে দারুণ পারফর্ম করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানে জায়গা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর রিঙ্কু। স্বপ্নপূরণের পথে তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন নাইট রাইডার্স মেন্টর গম্ভীর (Gautam Gambhir)।
রিঙ্কু’কে দক্ষতার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারেন গম্ভীর-
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্ত অবধি স্নায়ুর চাপ সামলে ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করে আসা, ডেথ ওভারে বড় শট মারার দক্ষতা যে তাঁর মধ্যে রয়েছে, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন রিঙ্কু (Rinku Singh)। আইপিএলে (IPL) গুজরাত ম্যাচের পাশাপাশি পাঁচ বা ছয় নম্বরে নেমে অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH), লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের (LSG) বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক স্তরেও ইতিমধ্যে দুটি অর্ধশতক হয়ে গিয়েছে তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯ বলে ৩১* রানের বিধ্বংসী ইনিংসও খেলেছেন। কিন্তু বড় টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এখনও অবধি ফিনিশিং-এর দায়িত্ব কাঁধে চাপে নি রিঙ্কুর (Rinku Singh)। এশিয়ান গেমস খেললেও সেখানে বেশীরভাগ দলেই দ্বিতীয় সারির ক্রিকেটাররা ছিলেন, ফলে ‘পারফর্ম্যান্স প্রেশার’ তেমন সামলাতে হয় নি রিঙ্কুকে।
এই মরসুমে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) শিবিরে রিঙ্কুকে ঘষেমেজে নিতে দেখা যাবে মেন্টর গৌতম গম্ভীরকে। বড় মঞ্চের চাপ সামলানোর টোটকা অনুজকে দিতে পারেন তিনি। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে যে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে শুরুটা দারুণ করে ভারত। সেমিফাইনাল অথবা ফাইনাল অবধি চলে যায় অনায়াসে, কিন্তু তারপর খেই হারিয়ে ফেলে দল। সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় গত বছরের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ও ওডিআই বিশ্বকাপের কথা। রিঙ্কু-কে এই সমস্যা দূর করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন গম্ভীর। ক্রিকেটীয় কেরিয়ারে নিজে অধিকাংশ সময়েই চ্যালেঞ্জের চোখে চোখে রেখে মোকাবিলা করেছেন। ২০০৭-এর টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে অনবদ্য ৭২ করেছিলেন। ২০১১-র ওডিআই বিশ্বকাপের ফাইনালে করেছিলেন ৯১। দুটি ট্রফিই জিতেছিলো টিম ইন্ডিয়া। শিষ্য রিঙ্কুকেও সাফল্যের মন্ত্রে দীক্ষিত করতে পারেন গম্ভীর।