IPL 2024: লীগ টেবিলের ‘লাস্ট বয়’ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI) বিরুদ্ধে গত ম্যাচে হেরে বসেছিলো সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH)। আচমকাই তাদের প্লে-অফের স্বপ্নের সামনে দেখা গিয়েছিলো প্রশ্নচিহ্ন। সেই ব্যর্থতার রেশ কাটিয়ে আজ ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর সংকল্প নিয়েছিলো ‘অরেঞ্জ আর্মি।’ অধিনায়ক কামিন্সের (Pat Cummins) জন্মদিনে নিজেদের সংকল্পে অবিচল থাকলেন তাঁর সতীর্থরা। হেলায় প্রতিপক্ষ লক্ষ্ণৌকে উড়িয়ে দিয়ে প্লে-অফের দিকে একধাপ এগিয়ে গেলো হায়দ্রাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজি (SRH)। ১২ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট দাঁড়ালো ১৪। পক্ষান্তরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে হতশ্রী পরাজয়ের পর সাফল্যের সন্ধানে ছিলো কে এল রাহুলের লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস’ও (LSG)। খালি হাতেই মাঠ ছাড়তে হলো তাদের।
আজ টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো লক্ষ্ণৌ। কিন্তু ব্যুমেরাং হয়ে ফেরে তা। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় তারা। অধিনায়ক রাহুল-সহ সুপারজায়ান্টস টপ-অর্ডার দাগ কাটতে পারেন নি আজ। ফেরেন ডি কক, স্টয়িনিসরাও। তবে আয়ুষ বাদোনি ও নিকোলাস পুরানের জোড়া অর্ধশতকের সুবাদে শেষমেশ ৪ উইকেটে ১৬৫ রানে শেষ করে লক্ষ্ণৌ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ঝড় তোলেন ট্র্যাভিস হেড ও ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামা অভিষেক শর্মা। দুজনের জোড়া অর্ধশতকে খড়কুটোর মত উড়ে গেলো আজ লক্ষ্ণৌ বোলিং। ১০.২ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ পকেটে ভরে নেয় সানরাইজার্স। ১০ উইকেটের ব্যবধানে ছিনিয়ে নেয় জয়।
Read More: IPL 2024: ঝড়ঝাপ্টা সামলে রুখে দাঁড়ালেন পুরান-বাদোনি, হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে লক্ষ্ণৌর স্কোরবোর্ডে ১৬৫ রান !!
পুরান-বাদোনির ব্যাটে মানরক্ষা লক্ষ্ণৌর-
প্রথম ব্যাটিং করতে নেমে ঘোর সঙ্কটে পড়েছিলো লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস। চোট সারিয়ে দলে ফেরা ক্যুইন্টন ডি কক ফেরেন মাত্র ২ রান করে। পাঁচ বল খেলে ভুবনেশ্বর কুমারের শিকার হন তিনি। অভিজ্ঞ পেসার এরপর ফেরান মার্কাস স্টয়নিসকে। তিনি ৩ রানের বেশী এগোতে পারেন নি আজ। দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটারকে হারানোর পর সুপারজায়ান্টস শিবির প্রতিরোধের রসদ খুঁজেছিলো কে এল রাহুল ও ক্রুণাল পাণ্ডিয়ার ব্যাটে। আরও একবার চাপের মুখে দলকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ রাহুল। আজকের পর ফের প্রশ্ন উঠবে তাঁর স্ট্রাইক রেট নিয়ে। ৩৩ বলে ২৯ করে প্যাট কামিন্সের বলে আউট হন তিনি। ২২ করে রান-আউট হন ক্রুণাল। দলকে আরও একটি সাফল্য এনে দেন ক্যাপ্টেন কামিন্স’ই।
৬৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে একটা সময় রীতিমত ধুঁকছিলো লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস ইনিংস। ডুবতে থাকা নৌকার হাল ধরেন আয়ুষ বাদোনি ও নিকোলাস পুরান। ক্যারিবিয়ান তারকাকে ফিনিশারের ভূমিকায় নেমে ধুন্ধুমার ইনিংস খেলতে প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু আজ শুরুতে খানিক সময় নিতে হয় তাঁকেও। উল্টোদিকে আয়ূষ বাদোনি অবশ্য ছিলেন বেশ সাবলীল। ৯ টি চারের সাহায্যে ৩০ বলে ৫৫ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২৬ বলে ৪৮ করে অপরাজিত থাকেন নিকোলাস পুরান’ও। তাঁদের অবিচ্ছেদ্য ৯৯ রানের জুটি লক্ষ্ণৌকে পৌঁছে দেয় ১৬৫ রানে। পরিসংখ্যান বলছে স্কোরবোর্ডে ১৬০-এর বেশী রান থাকলে অধিকাংশ সময়েই তা রক্ষা করতে পেরেছে সুপারজায়ান্টসরা। পুরান-বাদোনির জুটি আশার আলো জ্বালিয়েছিলো সমর্থকদের মনে।
হেড-অভিষেকের তাণ্ডবে ধ্বংস লক্ষ্ণৌর প্রতিরোধ-
শুধু জয় নয়, সাথে নেট রান রেটের কথা মাথায় রেখেও যেন খেলতে নেমেছিলো সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। ইনিংসের প্রথম ওভার থেকেই ফিফথ গিয়ারে ব্যাটিং করতে দেখা গেলো ট্র্যাভিস হেড’কে। পিছিয়ে রইলেন না ভারতীয় তরুণ অভিষেক শর্মা’ও। আজ প্রথম একাদশে ছিলেন না তিনি। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে ব্যাটিং-এর সময় তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় দলের। ব্যাট হাতে উপ্পলের বাইশ গজে নিঃসন্দেহে ‘ইমপ্যাক্ট’ বা প্রভাব রেখে গেলেন পাঞ্জাবের তরুণ। হেড-অভিষেকের দাপুটে জুটির সুবাদে ৬২ বল বাকি থাকতেই ১৬৬ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে গেলো হায়দ্রাবাদ। জয় ছিনিয়ে নিলো ১০ উইকেটের ব্যবধানে।
দুই ওপেনারের ধ্বংসযজ্ঞের পরিচয় মিলবে পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই। অস্ট্রেলীয় তারকা হেড ৮৯ রান করতে খরচ করেছেন কেবল ৩০ বল। স্ট্রাইক রেট ২৯৬.৬৭। মেরেছেন ৮টি চার ও ৮টি ছক্কা। অর্থাৎ তাঁর ৮৯ রানের মধ্যে ৮০ রান কেবল এসেছে বাউন্ডারি থেকেই। অন্য দিকে অভিষেক শর্মা’র অপরাজিত ৭৫ রানের ইনিংস এসেছে কেবল ২৮ বলে। ৮ টি চারের সাথে ৬টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ বাউন্ডারি থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন ৬৮ রান। এই অভাবনীর ব্যাটিং তাণ্ডবের মুখে পরে লক্ষ্ণৌ’র প্লে-অফ সম্ভাবনা এখন বিশ বাঁও জলে। ১২ পয়েন্টেই আটকে রইলো তারা। সামনে দিল্লী ও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচ। রাস্তা নিঃসন্দেহে কন্টকময় হতে চলেছে কে এল রাহুলদের জন্য।