IPL 2024: আইপিএলের (IPL) ইতিহাসে অন্যতম সফল দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI)। টুর্নামেন্টের প্রথম পাঁচ মরসুমে খেতাব আসে নি তাদের ঝুলিতে। কিন্তু তারপর সফলতার শৃঙ্গ আরোহণ করে তারা। ২০১৩ সালে আসে প্রথম ট্রফি। এরপর ২০২০ সালের মধ্যে আরও চার বার খেতাব জেতে তারা। ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২০ সালেও ট্রফি ঢোকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI) ক্যাবিনেটে। প্রথম দল হিসেবে পাঁচবার আইপিএল (IPL) জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো মুকেশ আম্বানির দল। টুর্নামেন্টের সফলতম ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলো নিজেদের।
২০১৩ মরসুমের মাঝপথে রিকি পন্টিং সরে দাঁড়ানোর পর দায়িত্ব দেওয়া হয় তরুণ তুর্কি রোহিত শর্মা’কে (Rohit Sharma)। সেই সিদ্ধান্তই পরবর্তী বছরগুলোতে দেখা দেয় ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবে। অসাধারণ নেতৃত্বগুণে দলকে পাঁচবার আইপিএলের (IPL) সেরার শিরোপা এনে দেন রোহিত। এবারের টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নেতৃত্ব বদলের স্ট্র্যাটেজি আরও একবার গ্রহণ করে দেখতে চেয়েছিলেন আম্বানিরা। গত বছর দলকে প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন করিয়েছিলেন রোহিত। তার পরেও সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। গুজরাত টাইটান্স থেকে দলে ফেরা হার্দিক পান্ডিয়াকে (Hardik Pandya) করা হয় অধিনায়ক। কিন্তু এগারো বছর আগে যে সিদ্ধান্ত সুপারহিট হয়েছিলো, এবার সেই একই সিদ্ধান্ত ফিরেছে ব্যুমেরাং হয়ে।
Read More: “লোক হাসাতেই খেলতে নামে…” ১২ বছর পর ওয়ানখেড়েতে KKR’এর কাছে পরাস্ত হতেই ট্রোলের মুখে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স !!
ব্যর্থ নেতা হার্দিক, বিদায় নিলো মুম্বই-
২০২২ সালের আইপিএলের (IPL) আগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ছেড়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি যোগ দিয়েছিলেন গুজরাত টাইটান্স শিবিরে। নেতা হিসেবে সেখানেই তাঁর পথ চলার শুরু। প্রথম বছরেই অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি জিতে চমকে দিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে খেতাব ধরে রাখতে না পারলেও ফাইনালে গিয়েছিলেন গুজরাত জার্সিতে। তাঁর আগ্রাসী ব্র্যান্ডের অধিনায়কত্ব আলাদা করে নজর কেড়ে নিয়েছিলো।
সেই কারণেই ২০২৪ আইপিএলের ঠিক আগে বিপুল অর্থ খরচ করে ট্রেডিং পদ্ধতিতে হার্দিককে দলে ফেরায় মুম্বই। পরিকল্পনা ছিলো দীর্ঘ সময়ের জন্য রোহিত শর্মার উত্তরসূরি খুঁজে নেওয়া। কিন্তু গুজরাতে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ইনিংসে যতটা সফল হয়েছিলেন হার্দিক, মুম্বই জার্সিতে হয়েছেন ঠিক ততটাই ব্যর্থ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে প্রথম তিনটি ম্যাচেই হেরে বসেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। বুমরাহকে সরিয়ে রেখে নিজে নতুন বল হাতে তুলে নেওয়া, ফিল্ডিং চেঞ্জ, রিভিউ-এর সিদ্ধান্ত, সবেতেই যেন মন্থর মনে হয়েছে তাঁকে। পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে রীতিমত সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে হার্দিককে।
নেতা হিসেবে সতীর্থদের আগলে রাখার বদলে প্রায়শই তাঁকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় সতীর্থদের দিকে আঙুল তুলতে দেখা গিয়েছে। দিনকয়েক আগেই হারের পর তিলক বর্মাকে দায়ী করেন তিনি। যা নিয়ে নাকি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো সাজঘর’ও। হার্দিক (Hardik Pandya) অধিনায়ক হওয়ার পর সাজঘরে যে ফাটল ধরেছিলো, তা জোড়ে নি গোটা মরসুমে। ফলও মিলেছে হাতেনাতে। এখনও অবধি মরসুমে ১১ ম্যাচ খেলেছে মুম্বই। তার মধ্যে আটটিতে হেরে প্রথম দল হিসেবে ছিটকে গিয়েছে প্লে-অফের দৌড় থেকে।
হার্দিকের ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্সও শোচনীয়-
রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) জুতোয় পা গলানোর কাজটা যে সহজ হবে না তা অনুমান করতে পেরেছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞই। মরসুম শুরুর আগে থেকেই তীব্র বিরোধীতার সম্মুখীন হতে হয়েছে হার্দিককে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI) সমর্থকদেরই একটা বড় অংশ চলে গিয়েছিলো তাঁর বিরুদ্ধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চূড়ান্ত আক্রমণের শিকার হতে হয় তাঁকে। হার্দিকের (Hardik Pandya) উদ্দেশ্যে গ্যালারি থেকেও উড়ে আসে কটুক্তি, কটাক্ষ। হোম ম্যাচ হোক বা অ্যাওয়ে ম্যাচ-নিস্তার পান নি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নবনিযুক্ত অধিনায়ক। পরিস্থিতির খানিক উন্নতি হয়ত হতে পারত যদি চেনা ছন্দে পাওয়া যেত তাঁকে। কিন্তু পারিপ্বার্শিক পরিস্থিতির চাপে হোক বা যে কোন কারণেই হার্দিককে একেবারের ফর্মে দেখা যায় নি এইবার।
চলতি আইপিএলে (IPL) এখনও ১১ ম্যাচ খেলেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI)। ১১টিতে ব্যাট করেছেন হার্দিক। এখনও অবধি ১১ ইনিংসে তিনি করেছেন ১৯৮ রান। গড় ১৯.৮০। গতকাল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) বিরুদ্ধে আউট হন ১ রান করে। চলতি মরসুমে তাঁর ব্যাট থেকে আসে নি একটিও অর্ধশতক। সর্বোচ্চ ৪৬। স্ট্রাইক রেট ১৪৮-এর কাছাকাছি হলেও অধিকাংশ ম্যাচেই ১৫ বা ২০ রানের মধ্যে আউট হয়েছেন তিনি। বল হাতেও হার্দিকের (Hardik Pandya) ফর্মের অবস্থা তথৈবচ। ১১ ম্যাচ মিলিয়ে মোট ২৭ ওভার বোলিং করেছেন তিনি। নিয়েছেন মাত্র ৮ উইকেট। বোলিং গড় ৩৮-এর কাছাকাছি। ইকোনমি ১১।