IPL 2024: আইপিএলের (IPL) তৃতীয় দিনে আহমেদাবাদের মাঠে আজ মুখোমুখি হয়েছিলো গুজরাত টাইটান্স ও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। টুর্নামেন্টের ঢাকে কাঠি পড়ার বহু আগে থেকেই এই ম্যাচ নিয়ে জোর চর্চা ছিলো ক্রিকেটমহলে। নেপথ্যে হার্দিক পান্ডিয়া। গত মরসুম অবধিও গুজরাত টাইটান্সের অধিনায়ক ছিলেন হার্দিক। দলকে একবার ট্রফি জিতিয়েছেন, একবার নিয়ে গিয়েছেন ফাইনালে। ২০২৪-এর আইপিএলের আগে আচমকাই দল বদলান তিনি। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে গিয়ে কাঁধে তুলে নেন অধিনায়কের দায়িত্ব। মুম্বই নেতা হিসেবে নিজের পুরনো দলের বিরুদ্ধেই আজ অভিষেক হলো তাঁর। বাইশ গজের দ্বৈরথে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সমানে সমানে লড়োলো তাঁর দল, কিন্তু শেষ হাসি আজ আর হাসা হলো না হার্দিকের। ৬ রানের ব্যবধানে হেরেই মাঠ ছাড়তে হলো মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে।
টসে জিতে প্রথমে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিং-এর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো মুম্বই। শুরুটা ভালো করলেও জসপ্রীত বুমরাহ, জেরাল্ড ক্যুৎসিদের বোলিং-এ ম্যাচে ফিরেছিলো পাঁচ বারের আইপিএল বিজয়ীরা। শেষমেশ সাই সুদর্শন ও রাহুল তেওয়াটিয়ার সৌজন্যে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ১৬৮ রান অবধি পৌঁছতে পারে গুজরাত টাইটান্স। রান তাড়া করতে নেমে একটা সময় অবধি ম্যাচে চালকের আসনে ছিলো মুম্বই-ই। কিন্তু ধীরে ধীরে বোলারদের সৌজন্যে দুর্দান্ত কামব্যাক করে গুজরাত। রশিদ খান, উমেশ যাদব থেকে মোহিত শর্মা-দলের জয়ে অবদান রাখলেন সকলেই। ২০ ওভার শেষে মুম্বইকে থামতে হলো ৯ উইকেটের বিনিময়ে ১৬২ রানে।
Read More: IPL 2024: হার্দিকের অধিনায়কত্বে বিরক্ত বুমরাহ, মেজাজ হারালেন রোহিত’ও, আহমেদাবাদে প্রকাশ্যে মতানৈক্য !!
বল হাতে বিধ্বংসী বুমরাহ, লড়লেন সাই সুদর্শন-

গুজরাত টাইটান্সের হয়ে ওপেন করতে মাঠে নামেন ঋদ্ধিমান সাহা ও শুভমান গিল। প্রথম ওভারে বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া স্বয়ং। ইনিংসের প্রথম বলটিকেই বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে আহমেদাবাদের মাঠে তাঁকে স্বাগত জানান ঋদ্ধিমান। প্রথম ওভার থেকে আসে ৯ রান। এরপর নতুন বল হাতে অপর প্রান্ত থেকে লুক উড’কে নিয়ে আসেন অধিনায়ক হার্দিক। বুমরাহ’র মত বোলার থাকতে লুক উড কেন? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিলো তখনই। সুবিধা করতে পারেন নি সদ্য পিএসএলে ভালো পারফর্ম্যান্স করে আসা ইংল্যান্ড পেসার। বাধ্য হয়ে অবশেষে বুমরাহ’র শরণাপন্নই হতে হয় হার্দিক’কে। নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে দুর্ধর্ষ ইয়র্কারে ঋদ্ধিমান সাহা’র স্টাম্প উপড়ে দিয়ে সাফল্য এনে দেন ভারতীয় পেস তারকা। ১৯ রান করে ফিরেছিলেন ঋদ্ধিমান।
এরপর উইকেট হারান শুভমান গিল। গত মরসুমের কমলা টুপি বিজয়ী এই বছর প্রথম ম্যাচে করলেন ৩১ রান। পীয়ূষ চাওলা’র বলে উইকেট হারান তিনি। এরপর আফগান অলরাউন্ডার আজমাতুল্লাহ ওমরজাই ঝোড়ো ইনিংসের ইঙ্গিত দিয়েও থামলেন ১১ বলে ১৭ রান করে। প্রোটিয়া পেসার জেরাল্ড ক্যুৎসি থামান তাঁকে। ডেভিড মিলার, বিজয় শঙ্কর-রান পান নি কেউই। একটা সময় মনে হচ্ছিলো ১৪০ থেকে ১৫০ রানের মধ্যেই আটকে থাকবে গুজরাত ইনিংস। শেষলগ্নে তাদের বাড়তি কিছু রান এনে দেন রাহুল তেওয়াটিয়া। ১৫ বলে ২২ রানের ক্যামিও আসে তাঁর ব্যাট থেকে। ব্যাট হাতে শুভমান, মিলারের মত রথী-মহারথীরা তেমন সুবিধা করতে না পারলেও লড়াই করেন সাই সুদর্শন। তামিলনাড়ুর তরুণ করেন ৪৫। ১৪ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে নজর কাড়লেন বুমরাহ।
হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে বাজিমাত গুজরাতের-
নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬৮ রান করেছিলো গুজরাত। ১৬৯-এর লক্ষ্য তাড়া করতে রোহিত শর্মা’র সাথে ওপেনার হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন ঈশান কিষণ। লম্বা সময় ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন ঝাড়খণ্ডের তরুণ ব্যাটার। আজ আহমেদাবাদে ছন্দ খুঁজে নিতে ব্যর্থ তিনি। আজমাতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বাইরের দিকে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে ধরা পড়লেন উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা’র দস্তানায়। তিন নম্বরে নমন ধীর’কে ব্যাট করতে নামিয়েছিলো মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ১০ বলে ২০ রানের বিস্ফোরক ক্যামিও তিনি খেললেন ঠিকই। কিন্তু ফিরলেন আজমাতুল্লাহ’র বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়ে। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে মাঠে নামা ডিওয়াল্ড ব্রেভিসকে সাথে নিয়ে এরপর ইনিংসের হাল ধরেন রোহিত শর্মা। ৭৭ রানের জুটি গড়েন দুজনে। ব্যক্তিগত ৪৩ রানের মাথায় রোহিত যখন আউট হন,মুম্বইয়ের স্কোর তখন ১০৭ রান।
চেষ্টা করলেন ব্রেভিস। ‘বেবি এবি’র ব্যাট থেকে এলো ৪৬। ১৯ বলে ২৫ রান করেন তিলক বর্মা’ও। এরপরেই ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যেতে থাকে মুম্বই। টিম ডেভিড’কে ছয় নম্বরে নামিয়েছিলেন কোচ মার্ক বাউচার। কিন্তু অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার ১০ বলে ১১ রান করে আউট হন। বল হাতে উইকেট পান নি হার্দিক, ব্যাটার হিসেবেও আহমেদাবাদ প্রত্যাবর্তন সুখের হলো না তাঁর। চার-ছক্কা হাঁকিয়ে আশার সঞ্চার করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ৪ বলে ১১-এর বেশী এগোনো সম্ভব হয় নি তাঁর পক্ষেও। স্পেন্সার জনসনের বলে বাউন্ডারি লাইনের কাছেই ধরা পড়েন অভিনব মনোহরের হাতে। এরপর ‘মিরাকল’ ছাড়া জয় এক প্রকার অসম্ভবই ছিলো মুম্বইয়ের সামনে। পীয়ূষ চাওলা, জসপ্রীত বুমরাহদের ব্যাটে আসে নি সাফল্য। ১৬২তে থামতে হয় মুম্বইকে। ৬ রানে জয় টাইটান্সদের।