IPL 2024: চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আজ আইপিএলের (IPL) ফাইনাল। দুই মাস ব্যপী টি-২০’র উৎসবে যবনিকা পড়তে চলেছে আজ। মুখোমুখি কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ (SRH)। লীগ পর্বের শেষে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা দুই দলই সম্মুখসমরে নেমেছে খেতাবী যুদ্ধেও। দিনকয়েক আগে প্রথম কোয়ালিফায়ারে সানরাইজার্সকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছিলো নাইটরা। প্রাথমিক ধাক্কার পর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রাজস্থানের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে নিয়ে আজ ট্রফির সন্ধানে ‘অরেঞ্জ আর্মি।’ আহমেদাবাদের পরাজয়ের বদলা নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্যাট কামিন্সবাহিনী আজ মাঠে নামলেও আপাতত খেলার গতিপ্রকৃতি যা তাতে বলা যায় ‘অ্যাডভান্টেজ কলকাতা’ই।
বঙ্গপোসাগরে তৈরি হয়েছে রেমাল ঘূর্ণিঝড়। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তা আছড়ে পড়ার কথা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে। কিন্তু রেমালের আগেই চেন্নাইয়ের উপকূলে কলকাতার গতির ঝড় আছড়ে পড়লো আজ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নিয়েছিলো সানরাইজার্স। কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্সের পেসারদের দাপটে মুখ থুবড়ে পড়তে হলো তাদের। শুরুটা করেছিলেন মিচেল স্টার্ক। ২৪.৭৫ কোটি টাকার পেসার আইপিএলের (IPL) শুরুটা ভালো করতে পারেন নি। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ গুলিতে দুরন্ত পারফর্ম্যান্সে জাত চেনালেন। এছাড়াও হর্ষিত রাণা, বৈভব আরোরা, আন্দ্রে রাসেলদের সামলাতেও কালঘাম ছুটলো হায়দ্রাবাদের। উইকেট পেয়েছেন নারাইন, বরুণ চক্রবর্তীরাও। ১৮.৩ ওভারে ১১৩ রানেই শেষ হায়দ্রাবাদের ইনিংস।
Read More: IPL 2024, Final: নাইটদের দাপটে ছত্রভঙ্গ সানরাইজার্স, উইকেট পড়তেই উদ্বেল জাহ্নবী কাপুর !!
বিধ্বংসী স্টার্কে মুখ থুবড়ে পড়ে হায়দ্রাবাদ-
দিনকয়েক আগে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে দুরন্ত আউটস্যুইং-এ ট্র্যাভিস হেডের অফ ও মিডল স্টাম্প উড়িয়ে দিয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক। আজ মাঠে নামার সময় নিশ্চয়ই তা মাথায় ছিলো অজি তারকার। জাতীয় দলের সতীর্থের হাতে নতুন বল দেখে স্ট্রাইকই নিলেন না তিনি। পাঠালেন তরুণ তুর্কি অভিষেক শর্মা’কে। ম্যাচের প্রথম তিনটি বল অভিষেকের শরীর থেকে খানিক দূরত্বে রেখেছিলেন স্টার্ক। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ফাঁদে ফেললেন তরুণ ওপেনারকে। চতুর্থ বলটিকে পিচ করার গুড লেন্থে। অফ ড্রাইভের জন্য ব্যাট বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু দুরন্ত আউট স্যুইং ব্যাটের নাগাল এড়িয়ে যেন চুমু খেয়ে গেলো অভিষেকের অফ স্টাম্পে। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা বলে প্রথম উইকেট তুলে নেন অস্ট্রেলীয় পেসার।
২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট খোয়ানোর পর সানরাইজার্স তাকিয়ে ছিলো ট্র্যাভিস হেডের দিকে। আজ স্টার্ককে এড়াতে পারলেও ব্যর্থতা এড়াতে পারলেন না বাম হাতি ওপেনার। বৈভব আরোরার ওভারের প্রথম বলেই উইকেটরক্ষক রহমানুল্লাহ গুরবাজের হাতে খোঁচা দিয়ে বসেন তিনি। শেষ চার ম্যাচে এই নিয়ে তৃতীয়বার শূন্য রান করে সাজঘরে ফিরলেন হেড। মার্করাম ও রাহুল ত্রিপাঠীর ব্যাটে প্রত্যাঘাতের প্রত্যাশায় ছিলো হায়দ্রাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজি। কিন্তু সেই সম্ভাবনাও অঙ্কুরেই বিনষ্ট করেন স্টার্ক। তাঁর অতিরিক্ত গতির সাথে যুঝতে পারেন নি ত্রিপাঠী। ব্যাটের উপরের দিকে লেগে আকাশে উঠে যায় বল। ক্যাচ তালুবন্দী করতে কোনো ভুল করেন নি রমনদীপ সিং। প্রথম স্পেলে তিন ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন স্টার্ক।
ব্যাটিং বিপর্যয়ে ব্যাকফুটে সানরাইজার্স-
পাওয়ার প্লে’তে আজ সানরাইজার্স ৩ উইকেট খুইয়ে স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে কেবল ৪০ রান। তারপরেও তাদের ব্যাটিং দুরবস্থার বিশেষ উন্নতি হয় নি আজ। হর্ষিত রাণাকে চার মেরে স্বাগত জানিয়েছিলেন বটে নীতিশ রেড্ডি। কিন্তু সপ্তম ওভারের শেষ বলেই শেষ হয় তাঁর ইনিংস। লেট স্যুইং-এর জাদুতে হায়দ্রাবাদের তরুণ অলরাউন্ডারকে সাজঘরে ফেরান হর্ষিত। ১০ বলে ১৩-র বেশী এগোতে পারেন নি নীতিশ। এরপরে উইকেট হারান এইডেন মার্করাম। একপ্রান্ত ধরে রেখে দলকে সুরক্ষিত অবস্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন প্রোটিয়া তারকা। কিন্তু আন্দ্রে রাসেলের বলে লং অনে মিচেল স্টার্কের হাতে ধরা পড়ে থামতে হয় তাঁকেও। ২৩ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলে ফেরেন মার্করাম। ৬২ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় হায়দ্রাবাদ।
গত ম্যাচে সেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কার পেয়েছিলেন বাংলার শাহবাজ আহমেদ। আজ অবশ্য ব্যাট হাতে দাগ কাটতে পারলেন না তিনি। শুরু থেকেই ছিলেন নড়বড়ে। বরুণ চক্রবর্তীর বলে ক্যাচ দিয়ে বসেন সুনীল নারাইনের হাতে। করেন মাত্র ৭ রান। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নেমেছিলেন আব্দুল সামাদ। কিন্তু কাশ্মীরের ক্রিকেটারও আজ ৪ বলে ৪ রানের বেশী এগোতেই পারেন নি। তাঁকে ফেরান রাসেল। হর্ষিত রাণার দ্বিতীয় শিকার হয়ে এরপর ফেরেন হেনরিখ ক্লাসেন। ব্যক্তিগত ১৬ রানের মাথায় যখন তিনি আউট হন, তখন সানরাইজার্সের স্কোর ৯০। এরপর ‘অরেঞ্জ আর্মি’ যে ১০০ পেরোলো, তার সিংহভাগ কৃতিত্ব প্যাট কামিন্সের। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ২৪ রান করে যান তিনি। রাসেলের বলে তিনি ফিরতেই ১১৩ রানে গুটিয়ে যায় সানরাইজার্স ইনিংস।