ভারত বনাম পাকিস্তান (INDIA vs PAKISTAN), নিঃসন্দেহে বাইশ গজের দুনিয়ার সবচেয়ে চর্চিত প্রতিদ্বন্দ্বীতা। উপমহাদেশের দুই পড়শি দেশের ক্রিকেটীয় যুদ্ধ রাজনৈতিক, কূটনৈতিক দিক থেকেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। দুনিয়ার যে প্রান্তেই মুখোমুখি হোক দুই শিবির-গ্যালারিতে ফাঁকা থাকে না একটিও আসন। ২০০৮-এর পর ভারত (Team India) আর পা রাখে নি পাকিস্তানে (PAK)। ২০১২-১৩’র পর থেকে পাকিস্তানও আসে নি ভারতে। বন্ধ রয়েছে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। বর্তমানে কেবল এশিয়া কাপ, ওডিআই ও টি-২০ বিশ্বকাপের মত বহুদলীয় প্রতিযোগিতায়গুলিতেই মুখোমুখি হতে পারে ভারত (Team India) ও পাকিস্তান। তাই নিয়েও উৎসাহ থাকে চরমে। দিনকয়েক আগেই কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপে (T20 World Cup) সম্মুখসমরে নেমেছিলো দুই দেশ। সুদূর নিউ ইয়র্কেও ৩৪০০০ আসনবিশিষ্ট স্টেডিয়াম সেদিন ছিলো ‘হাউজফুল।’
ভারত-পাক দ্বৈরথের পরবর্তী অধ্যায় হওয়ার কথা ছিলো ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (CT 2025)। আইসিসি’র ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করার কথা পাকিস্তানের। নিজেদের অবস্থান খানিক নমনীয় করে দেড় দশকেরও বেশী সময় পর টিম ইন্ডিয়া (Team India) কি যাবে প্রতিবেশী দেশে? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিলো ক্রিকেটদুনিয়ায়। শোনা গিয়েছিলো যে ভারতীয় দলকে পাকিস্তানে নিয়ে আসতে সর্বোচ্চ চেষ্টা নাকি করবে পিসিবি। আইসিসি’র কাছে এই মর্মে দরবারও করতে পারেন মহসীন নকভি’রা। এমনকি ইতিমধ্যেই এই মেগা ম্যাচের জন্য লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামকে চূড়ান্তও করা হয়েছিলো। কিন্তু পাকিস্তানী পেসার হারিস রউফের (Haris Rauf) একটি কাজই যাবতীয় উদ্যোগে সম্ভবত জল ঢেলে দিলো। একই সাথে ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার সুযোগও হয়ত হারালেন বাবর আজম’রা।
Read More: BCCI’র কড়া প্রশ্নে নাজেহাল গৌতম গম্ভীর, ৪০ মিনিটের ইন্টারভিউয়ের পেপার হলো ফাঁস
ভক্ত’কে ‘ভারতীয়’ ভেবে মারতে যান হারিস রউফ-
সাম্প্রতিক ভারত-পাক (INDIA vs PAKISTAN) ক্রিকেটীয় দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে রয়েছে একটি ভিডিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিওতে মেজাজ হারাতে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার হারিস রউফ’কে (Haris Rauf)। ঘটনাস্থল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্ত্রী’কে নিয়ে হেঁটে আসছিলেন হারিস রউফ। তখনই পাশ থেকে সম্ভবত তাঁকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলেন জনৈক ক্রিকেটভক্ত। তাতেই ক্ষেপে ওঠেন তিনি। ক্ষোভের বশে সেই ব্যক্তিকে রীতিমত তাড়া করতে দেখা যায় হারিসকে। চেষ্টা করেও তাঁকে রুখতে পারেন নি তাঁর স্ত্রী। পা থেকে জুতো খুলে নিয়ে ঐ ব্যক্তিকে মারতে উদ্যত হয়েছিলেন পাক তারকা। কোনোক্রমে তাঁকে সামলান ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরও কিছু পাকিস্তানী ভক্ত।
হাতাহাতির পরিস্থিতি এড়ানো গেলেও এরপর কথার লড়াইতে জড়ায় দুইপক্ষ। ঐ ব্যক্তি বলেন, “একটা ছবিই তো চেয়েছিলাম।” এরপর রীতিমত শাসিয়ে হারিস’কে বলতে শোনা গিয়েছে, “এটা তোর ভারত নয়।” ক্ষুব্ধ ঐ ভক্ত’ও চিৎকার করে বলেন, “আমি পাকিস্তানী।” এরপরেও দুই পক্ষের তরফেই চলে গালিগালাজ। সবকিছুই স্পষ্ট শোনা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার কিছুক্ষণ পর নিজের এক্স-প্রোফাইলে একটি কৈফিয়ত পোস্ট করেন হারিস (Haris Rauf)। জানান ঐ ব্যক্তি নাকি তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে অকথ্য গালিগালাজ করেছিলেন। সেই কারনেই রেগে উঠেছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত পরিসরে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ চান না তিনি। স্পষ্ট করেন পাক তারকা। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর সতীর্থ’রা। কিন্তু তারপরেও বিতর্ক কমে নি একবিন্দুও।
হারিসের ‘ঘৃণাভাষণে’ অনিশ্চিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি-
ক্রিকেটার বা যে কোনো সেলিব্রেটির গোপনীয়তা রক্ষা ও ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ তা মেনে নিয়েছেন ওয়াঘা সীমান্তের পূর্ব পাড়ের নেটিজেনরাও। কিন্তু হারিসের (Haris Rauf) প্রতিক্রিয়া নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। যে ব্যক্তি উত্যক্ত করেছিলেন হারিসকে, তাঁকে যেভাবে “এটা তোর ভারত নয়” বলেছেন তিনি, তা ‘ঘৃণাভাষণ’ বা ‘হেট স্পিচ’-এর সমতুল্য বলেই মনে করছেন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। পাক জনতার মধ্যে পড়শি দেশ সম্পর্কে যে ঘৃণা বা অসম্মান নিহিত রয়েছে তাই ফুটে উঠেছে ঘটনার আকস্মিকতায়, এমনটাই উঠছে দাবী। এশিয়া কাপ (Asia Cup) বা বিশ্বকাপের (ICC World Cup) আসরে কোহলি (Virat Kohli), রোহিতদের সাথে হাসিঠাট্টা করতে দেখা গিয়েছিলো শাদাব (Shadab Khan), বাবরদের। তা আসলে মেকি বলে অভিযোগ করছেন অনেকে।
পাকিস্তানে ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) খেলতে যাওয়ার সম্ভাবনা এমনিই কম ছিলো। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানিয়ে দিয়েছিলেন যে কোনো মূল্যেই ওয়াঘা পেরোবেন না কোহলি, রোহিত’রা। তবুও গত বছর রজার বিনি (Roger Binny), রাজীব শুক্লা’রা এশিয়া কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাকিস্তান যাওয়ায় ক্ষীণ এক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো বিভেদ ঘোচার, কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় যেন জল ঢেলে দিলো হারিসের ভিডিও। ‘ভারতীয়’ শব্দটি যেখানে অপমান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেখানে ক্রিকেটাররা আদৌ সুরক্ষিত কিনা সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এখনই। আইসিসি’তে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিসিসিআই। তা কাজে লাগিয়ে চ্যাপিয়ন্স ট্রফি সরিয়ে দেওয়ার সর্বত প্রচেষ্টা যে জয় শাহ’রা (Jay Shah) করবেন তা গতকালের ঘটনার পর জলের মত পরিষ্কার।