IND vs ENG: হায়দ্রাবাদে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের শুরুটা ভালো হয় নি ভারতীয় দলের। চতুর্থ ইনিংসে রেহান আহমেদ, টম হার্টলিদের (Tom Hartley) মোকাবিলা করতে না পেরে ২৮ রানে হারতে হয়েছিলো রোহিত শর্মার দলকে। অপ্রত্যাশিত এই পরাজয় বড় ধাক্কা দিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়াকে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকাতেও অনেকখানি পিছিয়ে গিয়েছিলো দল। দুই থেকে নেমে গিয়েছিলো পাঁচে। ঘুরে দাঁড়াতে বিশাখাপত্তনমে দ্বিতীয় ম্যাচে জয় ছাড়া রাস্তা খোলা ছিলো না ভারতের সামনে। কোহলি (Virat Kohli), শামি খেলবেন না, নিশ্চিতই ছিলো। চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছিলেন কে এল রাহুল, রবীন্দ্র জাদেজার (Ravindra Jadeja) মত দুই তারকা ক্রিকেটারও। শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সাফল্য ছিনিয়ে নিলো ‘মেন ইন ব্লু।’ বিশাখাপত্তনমে জিতে ফিরলো লড়াইতে।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ভারত। যশস্বী জয়সওয়ালের (Yashasvi Jaiswal) দুর্দান্ত দ্বিশতক প্রথম ইনিংসে টিম ইন্ডিয়াকে পৌঁছে দেয় ৩৯৬ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ মুখ থুবড়ে জসপ্রীত বুমরাহ’র (Jasprit Bumrah) সামনে। মাত্র ৪৫ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট তুলে নেন ভারতীয় পেসার। ইংল্যান্ড থামে ২৫৩ রানে। ১৪৩ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নামে ভারত। শুভমান গিলের (Shubman Gill) ১০৪ রানের লড়াকু ইনিংসের সৌজন্যে ২৫৫ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে সক্ষম হয় ‘মেন ইন ব্লু।’ ৩৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ড বেকায়দায় পড়ে অশ্বিন, বুমরাহদের বিপক্ষে। শেষমেশ ২৯২ রানে গুটিয়ে যায় তারা। ভারত জেতে ১০৬ রানে। বিশাখাপত্তনমে ‘বাজবল’ বিজয় ভারতীয় শিবিরকে নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে। তবুও চিন্তায় রাখছে শ্রেয়স আইয়ারের (Shreyas Iyer) অফ ফর্ম।
Read More: দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নবম বারের জন্য অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌছালো টিম ইন্ডিয়া !!
চূড়ান্ত অফ ফর্মে শ্রেয়স, কটাক্ষ জাহিরের-
গত বছর একটা লম্বা সময় পিঠের বালজিং ডিস্কের সমস্যায় ভুগেছেন শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer)। করাতে হয়েছে অস্ত্রোপচার। মাঠে ফিরে সাদা বলের ক্রিকেটে ছন্দ ফিরে পেলেও টেস্টে একবারেই ফর্মে নেই শ্রেয়স। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হতাশ করেছিলেন। ঘরের মাঠে ভারত বনাম ইংল্যান্ড (IND vs ENG) সিরিজেও ছন্দে নেই তিনি। হায়দ্রাবাদে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচে দুই ইনিংসে করেছিলেন যথাক্রমে ৩৫ ও ১৩। বিশাখাপত্তনমেও বিশেষ উন্নতি দেখা গেলো না তাঁর ব্যাটে। ফিরলেন ২৭ ও ২৯ রান করে। স্পিনের বিরুদ্ধেই ইংল্যান্ড সিরিজে বেশ নড়বড়ে লেগেছে তাঁকে। শেষ দশ টেস্ট ইনিংসে শূন্য রানে আউট হয়েছেন দুই বার। টেস্টে শেষ অর্ধশতরান করেছেন ২০২২-এর ডিসেম্বরে। রানের মধ্যে না থাকা শ্রেয়সকে সিরিজের বাকি তিন টেস্ট থেকে বাদ দেওয়ার দাবী উঠতে শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।
ফর্ম সমস্যার সঙ্গে যুঝতে থাকা শ্রেয়সের সমালোচনার সুর শোনা গেলো প্রাক্তনী জাহির খানের (Zaheer Khan) গলায়। যেভাবে বিশাখাপত্তনমে ক্রিজে থিতু হয়ে যাওয়ার পরেই দুই ইনিংসেই উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এলেন তিনি, তাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি জাহির। বলেন, “তোমায় বুঝতে হবে কোন মুহূর্তগুলো তোমার এবং তোমার দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা শ্রেয়সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিলো একটা।” ধৈর্য্য ধরে ব্যাটিং করলে আখেরে যে শ্রেয়সেরই (Shreyas Iyer) লাভ হত, তা বুঝিয়েছেন জাহির (Zaheer Khan)। বলেন, “অ্যান্ডারসনের স্পেল শেষের পথে ছিলো। মাত্র একজন পেসার ছিলো (ইংল্যান্ডের)। তারপরেই স্পিন ব্যবহার করতে হত। তোমার স্পিন খেলার দক্ষতা রয়েছে। তুমি একটা সুযোগ নষ্ট করলে। তুমি অতিরিক্ত দাপট দেখাতে গিয়ে উইকেট হারিয়ে এলে। যে পরিস্থিতিতে তুমি তা করলে, হয়ত এর ফল ভুগতে হবে তোমায়।”
দল নির্বাচন নিয়ে থাকছে ধোঁয়াশা-
প্রথম দুই টেস্টের জন্য দল ঘোষণা করেছিলো ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। রাজকোট, রাঁচী ও ধর্মশালা টেস্টে কারা থাকছেন স্কোয়াডে, তা এখনও জানানো হয় নি। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর দল বাছতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অজিত আগরকারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। অফ ফর্মে থাকা শ্রেয়সকে রাখা হবে নাকি বাদ দেওয়া হবে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। অনেকেই চাইছেন শ্রেয়সকে বাদ দিয়ে সরফরাজ খান’কে (Sarfaraz Khan) মিডল অর্ডারে সুযোগ দিয়ে দেখা হোক। আগরকার, সলীল আঙ্কোলা, সুব্রত ব্যানার্জিরা কোন পথে হাঁটেন, সেদিকে তাকিয়ে অনেকে। প্রশ্ন রয়েছে কে এস ভরতকে (KS Bharat) নিয়েও। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার চূড়ান্ত ব্যর্থ প্রথম দুই টেস্টে। তাঁকে রাখা হবে নাকি ঈশান কিষণকে ফেরানো হবে স্কোয়াডে, বৈঠকে সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতে পারে পারে নির্বাচকদের।
কে এল রাহুলের (KL Rahul) কোয়াড্রিসেপস পেশীর চোট গুরুতর নয়। তিনি খেলতে পারবেন আগামী টেস্টগুলি। চিন্তা রয়েছে রবীন্দ্র জাদেজাকে (Ravindra Jadeja) নিয়ে। তাঁর হ্যামস্ট্রিং-এ যে চোট লেগেছে তা সারতে চার থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। রাজকোটে তিনি যে খেলছেন না তা প্রায় নিশ্চিত। রাঁচী বা ধর্মশালাতেও খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাঁকে রেখেই স্কোয়াড ঘোষিত হয় কিনা তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা। এছাড়া মহম্মদ শামির (Mohammed Shami) গোড়ালির চোট সারে নি। কেবল ভারত বনাম ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ নয়, সম্ভবত আইপিএলের প্রথম কিছু ম্যাচেও দেখা যাবে না তাঁকে। সবচেয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন বিরাট কোহলির (Virat Kohli) খেলা নিয়ে। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের কারণে প্রথম দুই টেস্ট খেলেন নি কোহলি। তৃতীয় টেস্টে ফিরছেন মাঠে? প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।