IND vs ENG: হায়দ্রাবাদে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ২৮ রানে হেরে খানিক ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলো টিম ইন্ডিয়া (Team India)। ঘুরে দাঁড়াতে অবশ্য বেশী সময় নেয় নি দল। বিশাখাপত্তনমে দ্বিতীয় টেস্টে ১০৬ রানের ব্যবধানে জিতে সমতা ফিরিয়েছিলেন রোহিত শর্মা’রা। প্রতিপক্ষকে পিছনে ফেলে সিরিজ জয়ের দিকে এক পা এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প নিয়েই রাজকোটে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচে মাঠে নেমেছিলো ভারত। বিরাট কোহলি (Virat Kohli), শ্রেয়স আইয়ার, কে এল রাহুলের (KL Rahul) মত একঝাঁক তারকা ছিলেন না ভারতীয় একাদশে। ম্যাচের মাঝপথে ব্যক্তিগত কারণে সরে দাঁড়িয়েছিলেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন’ও (Ravichandran Ashwin)। চ্যালেঞ্জ কঠিন হলেও তাতে সসম্মানেই উত্তীর্ণ হলো ভারত। নেপথ্যে সরফরাজ খান, যশস্বী জয়সওয়ালদের মত তরুণ তুর্কিরা। ব্যাটে-বলে দুরন্ত পারফর্ম্যান্স করে ইংল্যান্ডকে ৪৩৪ রানের ব্যবধানে হারালো ‘মেন ইন ব্লু।’
এর আগে হায়দ্রাবাদ ও বিশাখাপত্তনমে প্রথম দুটি টেস্ট চলে নি চার দিনের বেশী। রাজকোটের নিরঞ্জন শাহ স্টেডিয়ামেও বদলালো না চিত্রটা। এই ম্যাচে ইতিহাস গড়লো ভারত। তাদের টেস্ট ইতিহাসে এর আগে এত বেশী রানের ব্যবধানে কোনো দলকে হারাতে পারে নি টিম ইন্ডিয়া। রাজকোট টেস্ট স্থান করে নিয়েছে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসেও। ১৯৩৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওভালে ৫৬২ রানের ব্যবধানে হেরেছিলো তারা। এরপর এটাই ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে হার। নজির গড়লেন যশস্বী জয়সওয়াল’ও (Yashasvi Jaiswal)। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও বিনোদ কাম্বলির পর তৃতীয় কনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে জোড়া দ্বিশতকের মালিক হন তিনি। একইসাথে টেস্টের ইতিহাসে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ডেও ভাগ বসান তিনি। পিছিয়ে পড়েও ২-১ এগিয়ে যাওয়ায় আপাতত বসন্তের বাতাস ভারতীয় শিবিরে। আগামী রাঁচী টেস্টে একাদশ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করার পথে দল।
Read More: IND vs ENG: “ও তো একদিনেই…” যশস্বী জয়সওয়ালের ধুন্ধুমার ব্যাটিং-এর প্রশংসায় ইংল্যান্ড কিংবদন্তি অ্যালিস্টার কুক !!
বিশ্রাম পেতে পারেন বুমরাহ, নজর বিকল্পে-
আপাতত ২-১ এগিয়ে রয়েছে ভারতীয় দল। আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে রাঁচীতে শুরু হতে চলেছে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ। জয়ের জন্য নিঃসন্দেহে ঝাঁপাবে দল, কিন্তু একইসাথে ক্রিকেটারদের ওয়ার্কলোড নিয়েও ভাবতে হচ্ছে কোচ রাহুল দ্রাবিড় ও টিম ম্যানেজমেন্টের অন্যান্য সদস্যদের। জুন মাসে রয়েছে টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup 2024)। দলের সেরা ক্রিকেটারদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত হতে চলা প্রতিযোগিতার জন্য তরতাজা রাখাই লক্ষ্য দলের। সেই কারণেই সম্ভবত বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে জসপ্রীত বুমরাহকে (Jasprit Bumrah)। তৃতীয় টেস্টেই বুমরাহকে বিশ্রাম দেওয়ার কথা উঠেছিলো, কিন্তু শেষমেশ সেই পথে হাঁটে নি দল। সিরাজের সাথে পেস বিভাগ সামলাতে দেখা গিয়েছে বুমরাহকেই। তবে ক্রিকবাজ সূত্রে খবর রাঁচীতে তাঁকে বাইরে রেখে মাঠে নামার সাহসী সিদ্ধান্ত নিতেই হচ্ছে দলকে।
পিঠের চোটের ২০২২-এর জুলাই থেকে ২০২৩-এর অগস্ট মাস অবধি মাঠের বাইরে ছিলেন জসপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah)। মাঠে ফিরে গত কয়েক মাসে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলেছেন। তিনটি টেস্ট খেলেছেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। আবার সামনে রয়েছে আইপিএল। অতিরিক্ত ক্রিকেটের ধকলে কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপে দলের সেরা পেস অস্ত্র হাতছাড়া যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টায় রয়েছে ভারত। এর আগে বিশাখাপত্তনমে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিলো মহম্মদ সিরাজকেও। যদিও তিনি খেলেছেন রাজকোটে। আগামী শুক্রবার রাঁচীতেও প্রথম একাদশে সিরাজের থাকার সম্ভাবনা। বুমরাহ না খেললে বদলি হিসেবে মাঠে নামতে পারেন মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar)। অথবা অভিষেক হতে পারে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভালো পারফর্ম করা বাংলার আকাশ দীপের (Akash Deep)।
চমৎকার ফর্মে রয়েছেন জসপ্রীত বুমরাহ-
চোটের জন্য একটা বছর বহু বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে জসপ্রীত বুমরাহ’কে (Jasprit Bumrah)। অনেক প্রশ্নও উঠেছে তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে। কিন্তু মাঠে ফিরে নিন্দুকদের বল হাতেই চুপ করিয়ে দিয়েছেন ডান হাতি পেসার। নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ ও গতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে নজর কেড়েছেন তিনি। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তন সিরিজেই সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জেতেন। এরপর এশিয়া কাপে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বোলিং বিভাগকে। বিশ্বকাপে মহম্মদ শামির অসামান্য বোলিং লাইমলাইটের অনেকটা কেড়ে নিলেও নেপথ্য নায়ক হিসেবে থেকে যান বুমরাহ’ও (Jasprit Bumrah)। ১১ ম্যাচে ১৮.৬৫ গড়ে তিনি তুলে নেন ২০ উইকেট। হন টুর্নামেন্টের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী।
সাদা বলের পাশাপাশি লাল বলের ফর্ম্যাটেও অনবদ্য প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন বুমরাহ (Jasprit Bumrah)। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কেপ টাউনে দুই ইনিংস মিলিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ৬ উইকেটের স্পেলের সৌজন্যেই প্রোটিয়াদের তাদের ঘরের মাঠে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো ভারত। ডিন এলগারের সাথে যৌথ ভাবে সিরিজ সেরার পুরষ্কার পান। এরপর দেশের মাটিতে ভারত বনাম ইংল্যান্ড (IND vs ENG) সিরিজেও বজায় রয়েছে বুমরাহ’র (Jasprit Bumrah) বিক্রম। হায়দ্রাবাদের স্পিন সহায়ক পিচে অসামান্য বোলিং করে প্রথম ইনিংসে ২টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪টি উইকেট তুলে নেন। এরপর বিশাখাপত্তনমে প্রথম ইনিংসে ৬টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩টি উইকেট নেন। একইসাথে আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিং-এ উঠে আসেন এক নম্বরে। প্রথম বোলার হিসেবে তিন ফর্ম্যাটেই শীর্ষস্থান দখলের রেকর্ড গড়েন তিনি।