Hardik Pandya
Hardik Pandya | Image: Getty Images

দীর্ঘ অন্ধকার কেটে শেষমেশ ভারতীয় ক্রিকেটের সূর্যোদয় দেখা গেলো বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে। টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) খেতাব অবশেষে এলো নাগালে। ২০১৩-র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর থেকে খালি হাতে একের পর এক আইসিসি টুর্নামেন্ট থেকে ফিরতে হয়েছিলো টিম ইন্ডিয়াকে (Team India)। কখনও সেমিফাইনাল, কখনও আবার ফাইনালে গিয়ে থমকে গিয়েছিলো মেন ইন ব্লু’র জয়রথ। শেষমেশ অন্তিম হার্ডলটুকুও পেরিয়ে যেতে সক্ষম হলো তারা। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে একটা সময় এগিয়ে গিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকাই। হেনরিখ ক্লাসেনের (Heinrich Klaasen) তাণ্ডবে ভারতের ব্যর্থতার ইতিহাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে চলেছে, এমনটা ধরে নিয়েছিলেন ক্রিকেটজনতার সিংহভাগ। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে ভাগ্যের চাকা নিজেদের দিকে ঘোরাতে সক্ষম হন রোহিত, বিরাটরা।

সতেরো বছরের ব্যবধানে ভারত যে দ্বিতীয় টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) জিতলো তার জন্য অনেকখানি কৃতিত্ব দাবী করতে পারেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। গোটা টুর্নামেন্টে তিনি নিয়েছেন ১১টি উইকেট। ব্যাট হাতেও যখন প্রয়োজন পড়েছে, দাঁড়িয়েছেন বুক চিতিয়ে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অর্ধশতক, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঝোড়ো ২৭ রান টুর্নামেন্টে টিম ইন্ডিয়ার জন্য সোনার চেয়েও দামী। গতকালও ম্যাচের মোড় ঘোরালেন তিনিই। গতির তারতম্য করে হেনরিখ ক্লাসেনকে (Heinrich Klaasen) আউট না করতে পারলে ম্যাচের ফলাফল যে উলটো হত সে ব্যপারে নিশ্চিত সকলেই। শেষ ওভারেও জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে প্রোটিয়াদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন চুরমার করেন হার্দিকই (Hardik Pandya)। পেশাদার ও ব্যক্তিগত জীবনে গত কয়েকটা মাস খুব কঠিন কেটেছে হার্দিকের। দেশকে ট্রফি জিতিয়ে তাই আবেগ চেপে রাখতে পারলেন না তারকা অলরাউন্ডার।

Read More: “তোমায় মিস করবো গুরু…” শিরোপা জিতে অবসরের ঘোষণা দিলেন রোহিত শর্মা, সমাজ মাধ্যম জুড়ে শোকের ছায়া !!

চাপমুক্তির আনন্দে কেঁদে ফেললেন হার্দিক-

Team India Celebrating T20 World Cup Win | Image: Getty Images
Team India Celebrating T20 World Cup Win | Image: Getty Images

গত ছয় মাস কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। ওডিআই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিজের বোলিং-এর ফলো থ্রু’তে ফিল্ডিং করতে গিয়ে গোড়ালিতে চোট পান। ছিটকে যান টুর্নামেন্ট থেকেই। এরপর মাঠের বাইরে লম্বা সময় কাটাতে হয়েছিলো। চেয়েছিলেন আইপিএলে (IPL) স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন ঘটাতে। কিন্তু গুজরাত (GT)  থেকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে (MI) ফেরার পর সময়টা ভালো কাটে নি তাঁর। রোহিতের (Rohit Sharma) হাত থেকে নেতৃত্ব কেড়ে তাঁর হাতে দেওয়া মানতে পারেন নি সমর্থকদের একটা বড় অংশ। অফ ফর্ম আরও জটিল করেছিলো পরিস্থিতি। মাঠ ও মাঠের বাইরে কটাক্ষ, কটূক্তি শুনতে হয়েছে অনেকে। তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া দেন নি হার্দিক (Hardik Pandya)। মুখ বুজে সহ্য করেছেন যাবতীয় অপমান। এরমধ্যে শোনা গিয়েছিলো স্ত্রী নাতাশার সাথে ডিভোর্সের গুঞ্জন’ও।

টি-২০ বিশ্বকাপের (T20 World Cup) স্কোয়াডে হার্দিকের নাম দেখে ভ্রু কুঁচকেছিলেন অনেকে। সেই হার্দিকই কিনা আজ ভারতের খেতাব জয়ের অন্যতম কারিগর। গোটা টুর্নামেন্টে ব্যাট হোক বা বল-দুই বিভাগেই নিজের সেরাটা দিয়েছেন তিনি। ফাইনালেও শেষ ওভারে মাথা ঠাণ্ডা রেখে এনে দিয়েছেন জয়। নিয়েছেন ৩ উইকেট। ট্রফি জয়ের পর এতদিনের জমে থাকা অভিমান যেন ফেটে বেরোলো হার্দিকের (Hardik Pandya) সাক্ষাৎকারে। অশ্রুভেজা চোখে মনের কথা জানালেন তারকা অলরাউন্ডার। জয়ের মুহূর্তে অনুভূতি বিশ্লেষণ করে বলেন, “শেষ ছয়টা মাস আমার যেমন কেটেছে, সেই অভিজ্ঞতাগুলো যেন ফিরে ফিরে আসছিলো। আমি অনেক সহ্য করেছি। যখন কান্না পেয়েছি, কাঁদিনি। লোকজন’কে দেখাতে চাই নি ভেতরের কষ্ট’টা।”

এরপরেই নিন্দুকদের একহাত নিয়েছেন তিনি। জানান, “আমার কঠিন সময়ে যাঁরা খুশি হচ্ছিলেন, (কেঁদে) তাঁদের আরও আনন্দ দিতে চাই নি। সেটা আমি কখনও দেবোও না। যেভাবে ছয়টা মাস কেটেছিলো… দেখুন ঈশ্বরের কি অশেষ করুণা, একটা অসামান্য সুযোগ আমার সামনে এনে দিলেন। শেষ ওভারে এমন একটা পরিস্থিতি, যেটা আমি কল্পনাও করতে পারি না। ব্যস আর কি বলতে পারি? আমি ভাষা হারিয়েছি।” টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) শেষের পর সম্ভবত আরও বড় পুরষ্কারও পেতে চলেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। গতকাল ট্রফি জয়ের পরেই রোহিত শর্মা জানিয়ে দিয়েছেন যে টি-২০ ফর্ম্যাটে আর দেশের জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামবেন না তিনি। এর আগে রোহিতের অবর্তমানে হার্দিকই (Hardik Pandya) সামলেছেন দায়িত্ব। এবার হয়ত পাকাপাকিভাবে টি-২০ অধিনায়ক হতে চলেছেন তিনিই।

দেখে নিন সাক্ষাৎকারের ভিডিও-

Also Read: T20 World Cup: “কিছু বলার ভাষা নেই…” অবিশ্বাস্য পারফর্ম্যান্সের সুবাদে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলেন জসপ্রীত বুমরাহ !!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *