টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) মিটতেই প্রতীক্ষা শুরু হয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (CT 2025)। আইসিস’র ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আগামী বছর বসতে চলেছে বিশ্বের সেরা আট ওডিআই দলের জমজমাট যুদ্ধের আসর। বাইশ গজের লড়াই শুরুর আগেই অবশ্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে ঘিরে মাঠের বাইরের লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। নেপথ্যে ক্রিকেটদুনিয়ার সবচেয়ে যুযুধান দুই প্রতিপক্ষ ভারত ও পাকিস্তান। ওয়াঘা সীমান্ত পেড়িয়ে কোনো মতেই ক্রিকেট খেলতে যাবেন না কোহলি, রোহিতরা, স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারতীয় বোর্ড। পাকিস্তানে খেলতে যাওয়ায় সায় নেই দেশের কেন্দ্রীয় সরকারেরও। এই কূটনৈতিক দড়ি-টানাটানির ফল সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলে মনে করছে ক্রিকেটদুনিয়া। ভারতের অবস্থানে বিরক্ত পাকিস্তানও পালটা চাল দিতে পারে বলে জানা গিয়েছে সংবাদমাধ্যম সূত্রে।
Read More: “মান টা বাঁচালো…” জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সম্মানজনক স্কোর বানিয়ে সমাজ মাধ্যমে ট্রেন্ডিং সঞ্জু স্যামসন !!
পাকিস্তান যেতে চাইছে না ভারত-
দীর্ঘ সময় পর আইসিসি আয়োজিত কোনো বড় প্রতিযোগিতা আয়োজিত হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তানের মাটিতে। বেশ খানিকটা সময় হাতে থাকলেও তাই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB)। গত ২৯ জুন টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখতে বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে হাজির ছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থার চেয়ারম্যান মহসীন নকভি (Mohsin Naqvi)। সেখানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির (CT 2025) সম্ভাব্য গ্রুপ বিন্যাস ও টুর্নামেন্ট সূচি তিনি তুলে দিয়েছেন আইসিসি’র হাতে। আটটি দলকে দুই গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম গ্রুপে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় গ্রুপে জায়গা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুনের উইন্ডোতে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় পাকিস্তান। ১৫টি ম্যাচের জন্য ভেন্যু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে লাহোর, করাচী ও রাওয়ালপিণ্ডিকে।
টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) ফাইনাল দেখার ফাঁকেই অংশগ্রহণকারী দেশগুলির থেকে পাকিস্তানে পা রাখার নিশ্চয়তা আদায়ের চেষ্টায় ছিলেন নকভি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সবুজ সংকেত মিললেও ভারতের কাছ থেকে একপ্রকার প্রত্যাখ্যাতই হয়েছেন তিনি। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত নয়, এই অভিযোগ তুলে পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) খেলতে যেতে রাজী নয় বিসিসিআই। এর আগেও একাধিকবার এই অবস্থান স্পষ্ট করেছেন সচিব জয় শাহ (Jay Shah), প্রেসিডেন্ট রজার বিনি’রা। এখনও বরফ গলে নি বলেই ধারণা ক্রিকেটমহলের। ভারতের জন্য বিশেষ সুবিধার অঙ্গীকার করেছে পাক বোর্ড। তাদের প্রতিটি গ্রুপ ম্যাচ রাখা হয়েছে লাহোরে। এমনকি সেমিফাইনালে ভারত গেলে সেই ম্যাচও করাচী বা রাওয়ালপিণ্ডি থেকে লাহোরে সরিয়ে আনা হবে বলে জানানো হয়েছে। তবুও নমনীয় হতে রাজী নয় টিম ইন্ডিয়া।
টি-২০ বিশ্বকাপ বয়কট করবে পাক বাহিনী ?
গত বছরের এশিয়া কাপের (Asia Cup 2023) সময়ও পাকিস্তান যায় নি টিম ইন্ডিয়া। বিসিসিআই-এর চাপে শেষমেশ টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয় হাইব্রিড মডেলে। পাকিস্তান আয়োজন করতে পারে কেবল ৪টি ম্যাচ। ভারতের সবক’টি খেলা ও নক-আউট পর্বের সব ম্যাচ সরে যায় শ্রীলঙ্কাতে। এবারও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য হাইব্রিড মডেলই প্রস্তাব করেছে ভারত। তারা চায় নিজেদের সবক’টি ম্যাচ কোনো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলতে। তার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহী বা শ্রীলঙ্কাই সেরা বিকল্প হতে পারে বলেও মনে করছে দেশের ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। গত এশিয়া কাপে (Asia Cup 2023) হাইব্রিড মডেল মেনে নিলেও এবার আর তা মানতে রাজী নয় পাকিস্তান। তারা সম্পূর্ণ টুর্নামেন্ট নিজেদের আয়োজন করতে মরিয়া। ক্ষমতাশালী ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক লড়াইয়ের ময়দানেও নামতে প্রস্তুত পিসিবি।
পড়শি দেশের ক্রিকেটমহল মনে করছে যে ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) খেলতেও যদি না আসে ভারত তাহলে বড়সড় পদক্ষেপ নিতে পারে মহসীন নকভি’র নেতৃত্বাধীন পাক ক্রিকেট বোর্ড। ২০২৬ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি-২০ বিশ্বকাপ (T20 World Cup) আয়োজিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই টুর্নামেন্ট বয়কট করতে পারে তারা। ২০২৩-এর এশিয়া কাপ নিয়ে দীর্ঘ দড়ি টানাটানির পরে ওডিআই বিশ্বকাপ নিয়েও একটা সময় একই অবস্থান নিয়েছিলো পাক ক্রিকেট সংস্থা। তৎকালীন বোর্ড সচিব জাকা আশরাফ জানিয়েছিলেন ভারতে আয়োজিত প্রতিযোগিতা বয়কট করতে পারেন বাবর আজম’রা। শেষমেশ অবশ্য তা হয় নি। যাবতীয় আইনি জটিলতা কাটিয়ে ভারতে ওডিআই বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিলেন পাক ক্রিকেটাররা। ২০২৬-এর টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে পাকিস্তান কি সত্যিই কড়া অবস্থান নেবে নাকি আরও একবার তাদের হুঁশিয়ারি ‘ফাঁকা বুলি’তে পরিণত হবে সেদিকেই এখন তাকিয়ে সকলে।