সীমান্তের ওপারে ক্রিকেটীয় অচলাবস্থা কাটার কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না এখনই। বিশ্বকাপের পরে দলের খোলনলচে বদলে ফেলার কথা ভেবেছিলো পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। মিকি আর্থার, মর্ণি মর্কেলদের মত বিদেশী কোচিং স্টাফদের ছেঁটে ফেলা হয়েছিলো। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো পাকিস্তানের প্রাক্তনীদেরই। হেড কোচের পদে বসেছিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ হাফিজ। ক্রিকেট সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম সামলানোর জন্য ডায়রেক্টর অফ ক্রিকেট পদ তৈরি করা হয়েছিলো। সেই দায়িত্ব’ও দেওয়া হয়েছিলো হাফিজকেই। এছাড়াও বোলিং পরামর্শদাতা হিসেবে দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন উমর গুল ও সঈদ আজমল। ইনজামাম-উল-হক সরে যাওয়ার পর প্রধান নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো প্রাক্তন পেসার ওয়াহাব রিয়াজকে।
কোচিং স্টাফ, নির্বাচক পদে রদবদলের পাশাপাশি রদবদল হয়েছিলো অধিনায়কত্বেও। এশিয়া কাপ, ওডিআই বিশ্বকাপে হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের পর নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিলো বাবর আজমকে (Babar Azam)। টেস্টে নতুন নেতা বেছে নেওয়া হয়েছিলো শান মাসুদ’কে (Shan Masood)। একই সাথে টি-২০’র অধিনায়ক হিসেবে ঘোষিত হয়েছিলো শাহীন শাহ আফ্রিদি’র (Shaheen Shah Afridi) নাম। গঠনতন্ত্র প্রায় সম্পূর্ণ বদলে ফেলেও অবশ্য সাফল্যের মুখ দেখতে ব্যর্থ পাক শিবির। অস্ট্রেলিয়াতে টেস্টের আসরে তারা ৩-০ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে টি-২০ সিরিজেও তাদের পারফর্ম্যান্স আদৌ আশাপ্রদ নয়। টানা ৪ ম্যাচ হেরেছে তারা। শেষ ১৬ ম্যাচে পাকিস্তানের পরাজয় ১৪টিতে। খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তান ক্রিকেট আরও বড় সঙ্কটের সম্মুখীন হলো আজ। আচমকাই পদ ছাড়লেন খোদ পিসিবি চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ (Zaka Ashraf)।
Read More: “আম্বানির মুখে সপাটে চড়…” রোহিতের ব্যাটিং দেখে পাকিস্তানি ভক্ত দিলেন এই প্রতিক্রিয়া, সমাজ মাধ্যমে নিমেষে ভাইরাল !!
দায়িত্ব ছাড়লেন জাকা আশরাফ-
২০২২-এর ডিসেম্বরে পাকিস্তান বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রাক্তন ক্রিকেটার রামিজ রাজা’কে (Ramiz Raja)। তাঁর ভারত বিরোধী আগ্রাসী মন্তব্য পাকিস্তানকে কোণঠাসা করছিলো বিশ্ব ক্রিকেটে। ফলত তাঁকে সরানো ছাড়া উপায় ছিলো না বোর্ডের। রামিজের পর পদে এসেছিলেন নাজম শেঠি (Najam Sethi)। ভারতের সাথে তীব্র দড়ি টানাটানির পর এশিয়া কাপের চারটি ম্যাচ দেশের মাটিতে আয়োজনের নিশ্চয়তা আদার করতে সক্ষম হন তিনি। কিন্তু ২১ জুন আচমকাই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ট্যুইটবার্তায় জানিয়েছিলেন নাজম। কারণ হিসেবে লিখেছিলেন যে তিনি বোর্ডের অন্দরে দুই দলের ক্ষমতা দখলের দড়ি টানাটানির মধ্যে জড়াতে চান না।
নাজম শেঠি (Najam Sethi) সরে যাওয়ার পর জুলাইতে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন জাকা আশরাফ (Zaka Ashraf)। তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের হস্তক্ষেপেই বোর্ডের হাল ধরার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো জাকা আশরাফ’কে (Zaka Ashraf)। জাকা আশরাফের আমলেই পাকিস্তান ২০২৩-এর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) খেলে। তাঁর উদ্যোগেই দীর্ঘ সময় পর পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখেছিলো বিসিসিআই-এর প্রতিনিধি দল’ও। অগস্টে এশিয়া কাপ চলাকালীন পাকিস্তানে গিয়েছিলেন ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট রজার বিনি (Roger Binny), সহ-সভাপতি রাজীব শুক্ল’ও (Rajeev Shukla)।
এর আগে ২০১১ থেকে ১৩ পিসিবি চেয়ারম্যান ছিলেন জাকা (Zaka Ashraf)। অনেকেই ভেবেছিলেন যে দ্বিতীয় ইনিংসেও লম্বা সময় দায়িত্বে থাকবেন তিনি। কিন্তু সকলকে অবাক করে শুক্রবার লাহোরে পিসিবি’র ম্যানেজিং কমিটির একটি বৈঠকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান জানিয়ে দেন তিনি। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের তরফে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে যে, “জাকা আশরাফ বৈঠক শেষে ঘোষণা করেছেন যে তিনি চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিতে চান। তিনি আমাদের পৃষ্ঠপোষক ও দেশের কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক-কাকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।”
দেখুন PCB-র বিজ্ঞপ্তি’টি-
Mr Zaka Ashraf chaired the fourth meeting of the Pakistan Cricket Board’s Management Committee on Friday at the National Cricket Academy in Lahore.
More details ➡️ https://t.co/ltZXKL8BYp pic.twitter.com/7OoGdUOZEj
— Pakistan Cricket (@TheRealPCB) January 19, 2024
কেন সরতে হলো জাকা’কে ?
আচমকাই কেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন জাকা আশরাফ (Zaka Ashraf)? এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারছে না পাকিস্তানের ক্রিকেটমহল। তবে বাতাসে ভাসছে বেশ কিছু সম্ভাবনার কথা। অনেকেই মনে করছেন জাকা’র (Zaka Ahsraf) শিক্ষাগত যোগ্যতা তাঁকে পিসিবি চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে। জানা গিয়েছে তিনি স্নাতক নন। গত বছরের জুলাই মাসে তাঁকে যখন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো, তখন তাঁর কার্যকাল স্থির করা হয়েছিলো তিন মাস। নভেম্বরে জাকা’র দায়িত্বের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও তিন মাস। সেই হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে তাঁর দায়িত্ব শেষ হতই। সরতে যে হবেই, সেই দেওয়াল লিখন সম্ভবত পড়তে পেরেছিলেন খোদ জাকা আশরাফ। সেই কারণেই হয়ত জানুয়ারিতেই বিদায় নিলেন তিনি।