World Cup 2023: অবশেষে জয়ের সরণিতে ফিরলো নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের (ICC World Cup 2023) শুরুটা কিউইবাহিনী করেছিলো দুরন্ত গতিতে। পরপর চার ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলো তারা। জায়গা করে নিয়েছিলো লীগ তালিকার শীর্ষে। এরপর শুরু হয় পদস্থলন। একটানা চার ম্যাচ হেরে শীর্ষস্থান থেকে নিউজিল্যান্ড নেমে এসেছিলো চতুর্থ স্থানে। ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিলো পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মত দলগুলি। অনেক যদি-কিন্তুর গেরো কাটিয়ে সেমিফাইনালে পা রাখতে হলে আজ বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয় একান্ত প্রয়োজনীয় ছিলো নিউজিল্যান্ডের কাছে। কুশল মেন্ডিস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজদের পাশাপাশি তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত আবহাওয়াও। ৮০ শতাংশ বর্ষণের সম্ভাবনা ছিলো। শেষমেশ অবশ্য তেমন কিছু হয় নি। দাপটের সাথেই জিতে সেমিফাইনালের দিকে এগিয়ে গেলো কেন উইলিয়ামসন অ্যান্ড কোং।
প্রথমে বোলিং বেছে নিয়েছিলো নিউজিল্যান্ড। কুশল পেরেরা ঝড়ের গতিতে শুরুটা করেছিলেন। কিন্তু অপর প্রান্তে পরপর উইকেট পড়তে থাকায় তাঁর ইনিংস বিশেষ দাম পেলো না আজ। বোল্ট, সাউদী, স্যান্টনারদের সুবাদে ১২৮ রানের মধ্যে ৯ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। মহেশ তীক্ষণা এবং দিলশান মাদুশাঙ্কা দশম উইকেটের জুটিতে যোগ করেন ৪৩ রান। শ্রীলঙ্কা থামে ১৭১ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড এগোয় দ্রুত। রান পেলেন ডেভন কনওয়ে এবং রচিন রবীন্দ্র। একই সাথে মিডল অর্ডারেও কার্যকরী ইনিংস খেলতে দেখা গেলো ড্যারিল মিচেলকে। গ্লেন ফিলিপসের ক্যামিও’র সুবাদে ২৩.২ ওভারের মধ্যে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কিউইরা। ৫ উইকেটের বিনিময়ে জিতে তারা বিশ্বকাপের (ICC World Cup 2023) শেষ চার প্রায় নিশ্চিত করে ফেললো। সবকিছু ঠিক থাকলে মুম্বইতে আগামী ১৫ নভেম্বর ভারতের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল খেলবে নিউজিল্যান্ড।
Read More: World Cup 2023: শ্রীলঙ্কাকে দুরমুশ করে সেমিফাইনালে এক পা নিউজিল্যান্ডের, সেমিতে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা !!
১) শুরুতেই বেকায়দায় শ্রীলঙ্কা-

টসে হারার পর ব্যাটিং করতে হবে শুনে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলতে শোনা গিয়েছিলো। ইনিংসের গোড়া থেকে সেই দুর্ভাগ্যই তাড়া করে বেড়ালো তাদের। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে টিম সাউদীর বলে যখন আউট হন পাথুম নিশাঙ্কা, স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ৩ রান। প্রথম উইকেটের পতনের পর মাঠে নেমেছিলেন অধিনায়ক মেন্ডিস। পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হয়ে ফেরেন তিনিও। সংগ্রহে মাত্র ৬ রান। চলতি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটারের নাম সাদিরা সমরাবিক্রমা। আজকের ম্যাচে ব্যর্থ তিনিও। ২ বলে ১ রান করেন তিনি। ট্রেন্ট বোল্টের বলেই ক্যাচ তুলে দেন ড্যারিল মিচেলের হাতে।
২) দ্রুততম অর্ধশতক কুশল পেরেরা’র-

এক প্রান্তে যখন পরপর উইকেট পড়ছে, তখন অন্যপ্রান্তে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে দেখা গেলো কুশল পেরেরাকে। গোটা বিশ্বকাপে বিশেষ রানের মধ্যে ছিলেন না কুশল। আজ শেষবেলায় জাত চেনালেন তিনি। তাঁর ব্যাটিং মনে করালো ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। ২০২৩ বিশ্বকাপের দ্রুততম অর্ধশতরান আজ এলো কুশল পেরেরা’র ব্যাটে। মাত্র ২২ বলে অর্ধশতকের গণ্ডী পেরোন। তবে এরপর আর ইনিংসকে দীর্ঘায়িত করতে পারেন নি তিনি। ২৮ বলে ৫১ রান করে আউট হন লকি ফার্গুসনের বলে। তাঁর ক্যাচ ধরেন মিচেল স্যান্টনার।
৩) শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং-এর দৈন্যদশা স্পষ্ট-

কুশল মেন্ডিস ছাড়া শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং আক্রমণের সকলেই পুরোপুরি ‘ফ্লপ’ বৃহস্পতিবারের ম্যাচে। গত ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১০৮ রান করেছিলেন চরিথ আশালঙ্কা। আজ আগের দিনের থেকে পুরোপুরি ১০০ রান কম করলেন তিনি। ট্রেন্ট বোল্টের বল আছড়ে পড়ে আশালঙ্কার প্যাডে। টাইমড আউট বিতর্ককে পিছনে ফেলে রানের মধ্যে ফেরা হলো না অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজেরও। তিনি আউট হন ১৬ রান করে। ধনঞ্জয় ডি সিলভা’ও লোয়ার অর্ডারে শ্রীলঙ্কাকের ভরসা যোগাতে পারেন নি। ১৯ রানে শেষ হয় তাঁর ইনিংস। ম্যাথিউজ ও ডি সিলভা দুজনকেই আউট করেন মিচেল স্যান্টনার।
৪) প্রতিরোধের প্রচেষ্টা দেখা গেলো তীক্ষণার ব্যাটে-

কুশল পেরেরা’র পর দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান ব্যাটার হিসেবে খানিক প্রতিরোধের চেষ্টা করলেন আটে নামা মহেশ তীক্ষণা। এগারো নম্বর ব্যাটার দিলশান মাদুশাঙ্কাকে সাথে নিয়ে কিউই বোলিং-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তিনি। ৩৩তম ওভারের মধ্যে ৯ উইকেট হারিয়ে বসেছিলো শ্রীলঙ্কা। স্কোরবোর্ডে তখন ছিলো ১২৮। সেখান থেকে দিলশান মাদুশাঙ্কার সাথে প্রায় ১৫ ওভার ইনিংসকে দীর্ঘায়িত করেন তিনি। আজ তীক্ষণা করেন ৯১ বলে ৩৯*। মাদুশাঙ্কার ব্যাট থেকে এলো ১৯। রচিন রবীন্দ্রের বলে মাদুশাঙ্কা টম ল্যাথামের হাতে ধরা পড়লে ১৭১ রানে শেষ হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
৫) ধুন্ধুমার সূচনা নিউজিল্যান্ডের-

কেবল জয় নয়, নেট রান রেট বাড়ানোর দিকেও অবশ্যই খেয়াল ছিলো নিউজিল্যান্ডের। একই সাথে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় যাতে জয় পণ্ড না হয় সেই দিকেও খেয়াল রেখেছিলেন রচিন রবীন্দ্র এবং ডেভন কনওয়ে। শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিং করতে দেখা যায় দুজনকে। কনওয়ে যখন আউট হন তখন ১২.২ ওভারে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ৮৬ রান। ৪২ বলে ৪৫ করেন তিনি। দুষ্মন্ত চামিরা শ্রীলঙ্কাকে প্রথম সাফল্য এনে দেন আজ। রচিন রবীন্দ্রের স্বপ্নের ফর্ম অব্যাহত। বেঙ্গালুরুতে আগের ম্যাচে শতরান করেছিলেন। আজও ৩৪ বলে ৪২ করে দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখলেন। তাঁকে আউট করেন মহেশ তীক্ষণা।
৬) মিডল অর্ডারের ভরসাস্থল মিচেল-

কেন উইলিয়ামসন আজ বড় রান পান নি। ১৭ বলে ১৪ করে আউট হন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের বলে। নিউজিল্যান্ডকে জয়ের দোরগোড়ায় এনে দাঁড় করান ড্যারিল মিচেল। তাঁর ৩৪ বলে ৪১ রানের ইনিংসের পর যাবতীয় সম্ভাবনার প্রদীপ নিভেছিলো শ্রীলঙ্কার। আশালঙ্কার বলে আউট হন মিচেল। তাঁর পর মার্ক চাপম্যান নেমেছিলেন ঠিকই। কিন্তু ৬ বলে ৭ রান করে রান-আউট হন। শেষ পথটুকু নিউজিল্যান্ডকে পার করিয়ে দিলেন গ্লেন ফিলিপস। কিউই অলরাউন্ডার ১০ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। অপর প্রান্তে রইলেন টম ল্যাথাম (২*)। ২৬.৪ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।
৭) বাইরে শ্রীলঙ্কা, ডুবলো পাকিস্তান-

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের স্বপ্ন আগেই ভেঙেছিলো শ্রীলঙ্কার। আজকের বড় ব্যবধানে হারের পর তাদের ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার স্বপ্নও বিশ বাঁও জলে। শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি ডুবলো পাকিস্তানও। আজ নিউজিল্যান্ড হারলে শেষ চারের রাস্তা খুলতে পারত তাদের সামনে। কিন্তু তা না হওয়ায় একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়লো বাবর আজম, শাহীন আফ্রিদিদের শেষ চারে জায়গা করে নেওয়া। সমীকরণ বলছে আগামী ১১ তারিখ পাকিস্তানকে কলকাতার মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হয় ২৭৫ রানের ব্যবধানে জিততে হবে, অথবা ২.৩ ওভারের মধ্যে লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নিতে হবে। খাতায়কলমে সুযোগ থাকলেও বাস্তবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা যে প্রায় শূন্য তা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন পাক ক্রিকেটাররা।