TOP 3: ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের তালিকা প্রস্তুত করতে বসলে সবার প্রথমেই যাঁর নাম মাথায় আসবে টিম ইন্ডিয়ার অধিকাংশ সমর্থকের, তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। রাঁচির মেকন কলোনির কোয়ার্টার থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের মসনদ অবধি তাঁর স্বপ্নের উড়ান অনুপ্রেরণা যোগায় অনুরাগীদের। তাঁর বরফ শীতল মস্তিষ্ক, চাপের মুখে অনমনীয় মনোভাব ধোনিকে (MS Dhoni) করে তুলেছে অনন্য। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তাঁর সমকক্ষ অধিনায়ক গোটা বিশ্বেও হয়ত আর নেই। ২০০৭ সালে যখন প্রথম ভারতের টি-২০ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তখনই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি স্বতন্ত্র। তরুণ এক দলকে সঙ্গে করে জিতেছিলেন ২০০৭ এর টি-২০ বিশ্বকাপ। এরপর একে একে জিতেছেন একদিনের বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে আইসিসি আয়োজিত সীমিত ওভারের সবক’টি টুর্নামেন্ট জয়ের কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটের পাশাপাশি টেস্টেও ধোনির (MS Dhoni) সাফল্য রীতিমত নজর কাড়া। পরিসংখ্যানের দিক থেকে ভারতের দ্বিতীয় সফলতম টেস্ট অধিনায়ক তিনি। অনিল কুম্বলের (Anil Kumble) হাত থেকে দায়িত্ব পান ২০০৮ সালে। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মাঝপথে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝপথেই নিজে সরে গিয়ে নেতার দায়িত্ব তুলে দেন বিরাট কোহলির (Virat Kohli) কাঁধে। মাঝের ছয় বছরে ৬০টি টেস্টে ভারতের নীল ব্লেজার গায়ে টস করতে নেমেছেন তিনি। জিতেছেন ২৭টি ম্যাচ, পরাজয়ের মুখ দেখেছেন ১৮ ম্যাচে। এবং ড্র হয়েছে ১৫টি ম্যাচ। ধোনি জমানায় ভারতের স্মরণীয় ৩টি টেস্ট জয়ের কথা রইলো এই প্রতিবেদনে।
Read More: Ashes 2023: লর্ডসে ইংল্যান্ড সমর্থকদের সাথে বিবাদ অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের, ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলো কর্তৃপক্ষ !!
বনাম নিউজিল্যান্ড, হ্যামিল্টন, ২০০৯-
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বরাবরই টেস্ট ম্যাচে সমস্যায় পড়তে দেখা গিয়েছে ভারতীয় দলকে। নিউজিল্যান্ডের মাঠগুলিতে সাধারণত বেশ জোরে হাওয়া বয়, যার ফলে বল অতিরিক্ত স্যুইং করে। এই স্যুইং মোকাবিলা করতে সমস্যায় পড়তে দেখা যায় ভারতীয় ব্যাটারদের। নতুন শতকের শুরুতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) অধিনায়কত্বে ভারত একবার গিয়েছিলো নিউজিল্যান্ডে। স্টিফেন ফ্লেমিং-এর দলের বিরুদ্ধে ‘মেন ইন ব্লু’র হেরেছিলো ২-০ ফলাফলে। তার আগে ১৯৮৯-৯০ এবং ১৯৯৩-৯৪ মরসুমেও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জেতা হয় নি ভারতের। একবার জুটেছিলো হার, আর একবার এক টেস্টের সিরিজে ড্র করতে পেরেছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া।’ এই ধারার পরিবর্তন আসে মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) হাত ধরেই।
২০০৯ সালে তিন টেস্টের সিরিজের প্রথম ম্যাচে হ্যামিল্টনে কিউইদের মুখোমুখি হয়েছিলো ধোনির (MS Dhoni) ভারত।। টসে জিতে প্রথম কিউইদের ব্যাটিং-এর আমন্ত্রণ জানায় ‘টিম ইন্ডিয়া’। প্রথম ইনিংসে ২৭৯ রান করে নিউজিল্যান্ড। ৪ উইকেট পান ঈশান্ত শর্মা (Ishant Sharma)। উইকেটের পিছনে অনবদ্য ধোনি নেন ৩টি ক্যাচ, এছাড়াও ইয়ান ও’ ব্রায়ানকে স্টাম্পিং’ও করেন তিনি। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শচীন তেন্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) ১৬০ এবং গৌতম গম্ভীর এবং রাহুল দ্রাবিড়ের অর্ধশতরানের সৌজন্যে ৫২০ রান তোলে ভারত। ধোনি করেন ৪৭ রান।
টিম ইন্ডিয়ার বিশাল লিডের তলায় নিজেদের দেশের মাঠেই চাপা পড়ে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের ভাঙেন হরভজন সিং (Harbhajan Singh)। নেন ৬ উইকেট। ফের ২৭৯ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। চতুর্থ ইনিংসে কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৯ রান তুলে নেয় ভারত। জয় আসে ১০ উইকেটে। সেই সফরের বাকি দুই টেস্ট ড্র হওয়ায় ১-০ ফলেই সিরিজ জেতে ভারত। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এখনও অবধি সেটাই ভারতের শেষ টেস্ট সিরিজ জয়। এরপর ২০১৩-১৪ এবং ২০১৯-২০ মরসুমে ভারত কিউদের দেশে গেলেও দুইবারই হারতে হয়েছে যথাক্রমে ১-০ এবং ২-০ ফলে।
বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, কলকাতা, ২০১০-
২০১০ সালে গ্রেম স্মিথের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা দল এসেছিলো ভারত সফরে। নাগপুরের জামথা স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে ভারত হারে এক ইনিংস এবং ৬ রানের ব্যবধানে। ঘরের মাঠে এই অপ্রত্যাশিত হার খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া’কে। মানরক্ষার জন্য ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন গার্ডেন্সে জিততেই হত ভারতকে। হাইকভোল্টেজ এই ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে জয় হাসিল করে নেয় ‘মেন ইন ব্লু’। সমতা ফেরে সিরিজের। চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটারদের বিরুদ্ধে যেভাবে স্পিনের ফাঁস চেপে রেখেছিলেন ধোনি (MS Dhoni), তা তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্কের পরিচায়ক। হরভজন সিং-এর ঘূর্ণিতে দেশের মাঠে সিরিজ হারের লজ্জা থেকে উদ্ধার পাইয় ভারতীয় দল।
টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় প্রোটিয়ারা। অ্যালভিরো পিটারসেন এবং হাসিম আমলার (Hashim Amla) জোড়া শতরানের সুবাদে তারা স্কোরবোর্ডে তোলে ২৯৬ রান। জাহির খান ৪টি এবং হরভজন সিং ৩ উইকেট নেন। উইকেটের পিছনে দুটি ক্যাচ এবং একটি স্টাম্পিং করছিলেন ধোনি। ইডেনের বাইশ গজে ব্যাট করতে নেমে রানের পাহাড় গড়ে ভারতীয় দল। বীরেন্দ্র শেহবাগ (Virender Sehwag) করেন ১৬৫, শচীন তেন্ডুলকর (Sachin Tendulkar) করেন ১০৬, ভিভিএস লক্ষ্মণ (VVS Laxman) পয়া ইডেনে অপরাজিত থাকেন ১৪৩ রান করে। আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা ধোনিও (MS Dhoni) ঝোড়ো ১৩২* রানের ইনিংস খেলেন ১২টি চার এবং ৩ ছক্কার সৌজন্যে। প্রথম ইনিংসের শেষে ভারতের স্কোর ছিলো ৬ উইকেটের বিনিময়ে ৬৪৩।
চতুর্থ ইনিংসে ভারতের কাছে চ্যালেঞ্জ ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিরোধ ভেঙে দশ উইকেট হাসিল করা। একমাত্র হাসিম আমলা ছাড়া বাকি ব্যাটার’রা কেউই চাপে ফেলতে পারেন নি ‘টিম ইন্ডিয়ার’ দুই স্পিনার অমিত মিশ্র (Amit Mishra) এবং হরভজন সিং’কে (Harbhajan Singh)। কিন্তু দিনের শেষ সেশনে বাধা হয়ে দাঁড়ান টেল এন্ডার মর্নি মর্কেল। আমলার (Hashim Amla) সাথে জুটি বেঁধে ম্যাচ নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন মর্কেল (Morne Morkel)। শেষ মুহূর্তে হরভজনের বলে লেগ বিফোর হন তিনি। ২৯০ তে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এক ইনিংস এবং ৫৭ রানের ব্যবধানে টেস্ট জেতে ভারত। ৫ উইকেট নিয়েছিলেন হরভজন।
বনাম ইংল্যান্ড, লর্ডস, ২০১৪-
ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে টেস্ট ম্যাচ জয় বরাবরই স্মরণীয়। এই কৃতিত্ব ধোনির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল অর্জন করে দেখিয়েছিলো। এর আগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourva Ganguly) নেতৃত্বে ইংল্যান্ডে টেস্ট জিতেছিলো ভারত। ২০০৭ সালে রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) অধিনায়কত্বে টেস্ট সিরিজে জয় এসেছিলো। কিন্তু লর্ডসে জয় অধরাই রয়ে গিয়েছিলো। এই স্বাদ ভারতীয় ক্রিকেটকে এনে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনিই (MS Dhoni)। ইংল্যান্ড বনাম ভারত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অ্যালিস্টার কুকের (AN Cook) ইংল্যান্ড দলকে হারিয়ে দুরন্ত জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত।
টসে জিতে ভারতকে প্রথম ব্যাটিং-এর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো ইংল্যান্ড। স্যুইং বোলিং-এর আঘাতে মুরলী বিজয় (২৪), শিখর ধাওয়ান (৭), চেতেশ্বর পূজারা (২৮), বিরাট কোহলি (২৫)-বড় রান পান নি কেউই। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও জ্বলে ওঠে অজিঙ্কা রাহানের (Ajinkya Rahane) ব্যাট। ১০৩ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন তিনি। ভুবনেশ্বর কুমারের (Bhuvneshwar Kumar) ৩৬ এবং মহম্মদ শামির ১৯ রানের ইনিংস ভারতকে পৌঁছে দিয়েছিলো ২৯০ রানে। প্রথম ইনিংসে গ্যারি ব্যালান্সের (Gary Ballance) শতরান ২৯ রানের লিড এনে দেয় ইংল্যান্ডকে। ভুবনেশ্বর কুমারের ৬ উইকেট সত্ত্বেও ইংল্যান্ড করে ৩১৯ রান।
দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ভারত। দুই ওপেনার মুরলী বিজয় (Murali Vijay) ও শিখর ধাওয়ান (Shikhar Dhawan) যথাক্রমে ৯৫ এবং ৩১ রানের ইনিংস খেলেন। পূজারাও করেন ৪৩ রান। মিডল অর্ডার ব্যর্থ হলেও ভুবনেশ্বর কুমারকে (Bhuvneshwar Kumar) সঙ্গে করে লড়ে যান রবীন্দ্র জাদেজা (Ravindra Jadeja)। তিনি করেন ৬৮,ভুবির সংগ্রহ ৫২। ভারত তোলে ৩৪২ রান। বল হাতে চতুর্থ ইনিংসে জ্বলে ওঠেন ঈশান্ত শর্মা (Ishant Sharma)। ৭৪ রানের বিনিময়ে একাই তুলে নেন ৭ উইকেট। জো রুটের ৬৬ রানের ইনিংস সত্ত্বেও ভারতের বিরুদ্ধে ৯৫ রানে হারে ইংল্যান্ড।