ভারতীয় ক্রিকেটমহলে ‘লর্ড’ নামে পরিচিত শার্দুল ঠাকুর (Shardul Thakur)। মুম্বইয়ের ক্রিকেটার টিম ইন্ডিয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ২০১৭ সালে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনি ১০ নম্বর জার্সি গায়ে মাঠে নামায় সৃষ্টি হয়েছিলো বিতর্ক। পরে অবশ্য জার্সি নম্বর বদলে ফেলেন তিনি। ২০১৮ সালে হয় টেস্ট ও টি-২০ অভিষেক। এখনও অবধি ১১ টেস্ট ম্যাচে ৩১টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ওয়ান ডে খেলেছেন ৪৭টি। উইকেট সংখ্যা ৬৫। টি-২০তে ২৫ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৩৩টি উইকেট। সাধারণত পেস বোলার হিসেবেই তাঁকে দেখা যায় মাঠে। কিন্তু মাঝেমধ্যে ব্যাট হাতেও দলের হাল ধরতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। গত বছর ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) আসরে পিছিয়ে পড়া ভারতের হয়ে তাঁর লড়াকু অর্ধশতক এখনও উজ্জ্বল সমর্থকদের মনে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তেমন একটি ইনিংস শার্দুল (Shardul Thakur)খেলেছেন ২০২৩-২৪ রঞ্জি মরসুমে।
Read More: নেতৃত্বের দৌড়ে নেই কেএল রাহুল, আরও একবার অধিনায়ক করা হচ্ছে হার্দিককে !!
ম্যাচ জেতানো শতরান শার্দুল ঠাকুরের-
রঞ্জি ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে গত মার্চ মাসে শক্তিশালী তামিলনাড়ূর মুখোমুখি হয়েছিলো মুম্বই। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করছিলো তারা। একমাত্র মুশির খানের (Musheer Khan) ৫৫ ছাড়া রান পান নি টপ-অর্ডারের কোনো ব্যাটারই। সাই কিশোর, কুলদীপ সেনদের দাপটে ভেঙে পড়েছিলো মুম্বই মিডল অর্ডার। নয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ঢাল হয়ে দাঁড়ান শার্দুল ঠাকুর (Shardul Thakur)। প্রধানত ফাস্ট বোলার হিসেবে খে্লেন তিনি। কিন্তু ব্যাট হাতেও যে প্রয়োজনে নিতে পারেন কার্যকরী ভূমিকা তা আরও একবার প্রমাণ করে দেন তিনি। তনুষ কোটিয়ানকে সাথে নিয়ে প্রত্যাঘাত শুরু করেন তিনি। যে বাইশ গজে প্রতিথযশা ব্যাটাররা কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না, সেখানেই যেন ‘বাজবল’ মোডে ব্যাটিং করতে দেখা যায় তাঁকে। কুলদীপ সেনের বলে নারায়ন জগদীশনের হাতে ধরা পড়ার আগে করেন ১০৯ রান। ১০৫ বলের ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায়।
লোয়ার অর্ডারের সৌজন্যে ফাইনালে মুম্বই-
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথম ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তামিলনাড়ু। বড়সড় ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় তারা। সাই সুদর্শন, নারায়ন জগদীশন, প্রদোষ রঞ্জন পাল, ওয়াশিংটন সুন্দরদের মত তারকারা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪৬ রানে। তুষার দেশপাণ্ডে ৩টি উইকেট পান ও মুশির খান, তনুষ কোটিয়ান (Tanish Kotian) এবং শার্দুল ঠাকুর (Shardul Thakur) তুলে নেন ২টি করে সাফল্য। রান তাড়া করতে নেমে ঘোর সমস্যায় পড়েছিলো মুম্বই’ও। ১০৬ রানের মধ্যে ৭ উইকেট খুইয়ে বসেছিলো তারাও। কিন্তু হাল ধরেন শার্দুল ও তনুষ (৮৯)। দুজনের জুটির সৌজন্যেই ৩৭৮ রানে পৌঁচায় ইনিংস। ২৩২ রানে এগিয়ে যায় মুম্বই। তৃতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারে নি তামিলনাড়ু। তারা গুটিয়ে যায় ১৬২ রানে। ইনিংস ও ৭০ রানের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে ফাইনালে পা রাখে মুম্বই।
টিম ইন্ডিয়ার বাইরে রয়েছেন শার্দুল-
গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শেষ টেস্ট খেলেছেন শার্দুল ঠাকুর (Shardul Thakur)। একদিনের ক্রিকেটে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন আরও আগে। ওডিআই বিশ্বকাপ চলাকালীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। টি-২০তে ২০২২-এর পর আর ভারতের হয়ে দেখা যায় নি তাঁকে। ফর্মের ওঠানামাই তাঁর কেরিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে গত কয়েক মাসে। অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসও দিয়েছেন শার্দুল। রঞ্জিতে মুম্বইকে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। পায়ের চোট বেশ কিছু দিন ভোগাচ্ছিলো তাঁকে। লন্ডনে গত জুন মাসে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর। এখনও চলছে রিহ্যাব। নতুন উদ্যমে মাঠে ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটার। ভারতীয় দলের নয়া কোচ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন গৌতম গম্ভীর। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফর্ম্যান্স করলে ফের যে খুলবে জাতীয় দলের দরজা, তা জানেন শার্দুল।