মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni), ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে নিঃসন্দেহে উপরের দিকেই নাম থাকবে তাঁর। ২০০৪ থেকে ২০১৯-টানা দেড় দশক জাতীয় দলের নীল জার্সিতে মাঠে নেমেছেন তিনি। লম্বা কেরিয়ারে ৯০ টেস্টে করেছেন ৪৮৭৬ রান, ৩৫০টি একদিনের ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ ১০৭৭৩ রান। কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে ৯৮ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬১৭ রান। আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শুরুটা করেছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শূন্য রান করে। কিন্তু সেই সাময়িক ব্যর্থতা’কে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে দেন নি তিনি। বরং পরিণত করেছেন সাফল্যের সিঁড়িতে। মাত্র ৩২ ইনিংস খেলে আইসিসি ওডিআই র্যাঙ্কিং-এ শীর্ষস্থানে পৌঁছন তিনি। যা আজও বিশ্বকরেকর্ড। ব্যাটিং, উইকেটকিপিং-এর পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবেও তিনি জায়গা করে নিয়েছেন সর্বকালের সেরাদের তালিকায়।
ভারতীয় ক্রিকেটে সাফল্যের ভগীরথ বলা যেতে পারে মহেন্দ্র সিং ধোনি’কে (MS Dhoni)। ঝাড়খণ্ডের রাঁচীর মেকন কলোনি থেকে উঠে আসা ধোনি’র (MS Dhoni) হাত ধরে একের পর এক শৃঙ্গ জয় করেছে টিম ইন্ডিয়া। ২০০৭ সালের ওডিআই বিশ্বকাপের ব্যর্থতার পর সিনিয়র’রা যখন টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়ান, তখন ধোনির হাতে নেতৃত্বের ব্যাটন তুলে দেয় বিসিসিআই। তাঁর দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। ধোনির হাত ধরে টি-২০ বিশ্বকাপ জেতে ভারতীয় দল। এরপর স্থায়ীভাবে তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয় অধিনায়কত্ব। ‘ক্যাপ্টেন’ ধোনির আমলে ২০১১-এর ওডিআই বিশ্বকাপ, ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে আইসিসি আয়োজিত তিনটি সাদা বলের ট্রফি জয়ের নজির রয়েছে তাঁর। আন্তর্জাতিক আঙিনার পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটেও ধোনির গুরুত্ব অপরিসীম, সম্প্রতি জানালেন তাঁর প্রাক্তন সতীর্থ সৌরভ তিওয়ারি (Saurabh Tiwary)।
Read More: WPL 2024, UP-W vs GG-W, Match 8: হাইভোল্টেজ ম্যাচে গুজরাটকে ৬ উইকেটে পরাজিত করে পয়েন্টস টেবিলে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেল UP !!
ধোনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ সৌরভ তিওয়ারি-
মালয়েশিয়াতে ২০০৮ সালে ভারতের যে অনুর্দ্ধ-১৯ দল বিশ্বকাপ জেতে, সেখানে বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজাদের মত ভবিষ্যতের সুপারস্টারদের পাশাপাশি ছিলেন সৌরভ তিওয়ারিও। জামশেদপুরের সৌরভের (Saurabh Tiwary) লম্বা চুলের কারণে তাঁকে বাম হাতি মহেন্দ্র সিং ধোনি’ও বলতে শুরু করেছিলেন অনেকে। প্রতিভাবান সৌরভকে জাতীয় দলে নিয়মিত দেখতে চেয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে লম্বা হয় নি তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ার। মাত্র ৩টি একদিনের ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝাড়খণ্ডের হয়ে নিয়মিত রান করে গেলেও জাতীয় দলের রেডারে তাঁর না থাকা নিয়ে অনেক সময়ই সরব হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আঙুল উঠেছে তৎকালীন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) দিকেও। তিনি বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছিলেন, তেমন নাকি দাঁড়ান নি সৌরভের পাশে। ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট থেকে দ্বিতীয় কোনো তারকা যাতে ভারতীয় ক্রিকেটের আঙিনায় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে না পারেন, তা রুখতেই নাকি ধোনি দলে সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবেন নি সৌরভকে। এমনও অভিযোগও উঠেছে মাঝেমধ্যে।
সম্প্রতি ৩৪ বছর বয়সে ক্রিকেটের বাইশ গজকে বিদায় জানালেন সৌরভ তিওয়ারি (Saurabh Tiwary)। ১১৪ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৮০০৪ রান। গড় ৪৭.৯২। শতরানের সংখ্যা ২২, অর্ধশতরান ৩৪টি। এছাড়া লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৪৬.৫৫ গড়ে ১১৬ ম্যাচে তিনি করেছেন ৪০৫০ রান। শতরানের সংখ্যা ৬, অর্ধশতক ২৮টি। টি-২০তে মোট ১৮১ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ১৫৫ ইনিংসে প্রায় ৩০ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৩৪৫৪ রান। শতরান না থাকলেও রয়েছে ১৬ টি অর্ধশতক। লম্বা কেরিয়ারে দাঁড়ি টেনে মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) প্রতি কোনো রকম উষ্মা বা ক্ষোভ প্রকাশ করেন নি তিনি। বরং সদ্যপ্রাক্তন ক্রিকেটার ধোনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। ঝাড়খণ্ড ক্রিকেটারদের কাছে ধোনি যে আদর্শ, তা স্পষ্ট করেছেন সৌরভ (Saurabh Tiwary)। স্পোর্টস তক’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “এম এস ধোনি ঝাড়খণ্ড ক্রিকেটের ভগবান।”