সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত হেরে গেলেও গোটা টুর্নামেন্টে নজর কেড়ে নিয়েছে তাদের পারফর্ম্যান্স। ব্যাটিং পাওয়ারহাউস নামে সর্বজনবিদিত টিম ইন্ডিয়ার বোলিং-ও মন মাতিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। জসপ্রী ত বুমরাহ (Jasprit Bumrah), মহম্মদ শামি’রা একের পর এক ম্যাচে ভারতের জয়ের কারিগর হয়েছেন। দুই অভিজ্ঞ পেসারের পাশাপাশি জাত চিনিয়েছেন মহম্মদ সিরাজ’ও। স্যুইং-এ ধ্বংস করেছেন প্রতিপক্ষকে। ‘মেন ইন ব্লু’র স্পিন বিভাগও পিছিয়ে ছিলো না বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছেন কুলদীপ যাদব (Kuldeep yadav)। দক্ষিণ আফ্রিকার মত কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট তুলে ভারতের জয়ের পথ সহজ করে দিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। আহমেদাবাদে অস্ট্রেলিয়া যতই বিশ্বকাপ জিতুক নিঃসন্দেহে টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং ইউনিটের তকমা আদায় করে নিয়েছে ভারত।
‘মেন ইন ব্লু’ শিবিরের বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জসপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah)। চোট সারিয়ে ফিরে বিশ্বকাপের ১১টি ম্যাচেই খেলেছেন তিনি। স্যুইং, নিয়ন্ত্রণের জাদুকরীতে বারবার বিপদে ফেলেছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। ১১ ম্যাচে ১৮.৬৫ বোলিং গড়ে নিয়েছেন ২০ উইকেট। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীদের তালিকায় তিনি ছিলেন পাঁচ নম্বরে। নতুন বল হোক বা পুরনো বল, ম্যাচের যে কোনো পরিস্থিতিতেই অধিনায়ক রোহিতের মুশকিল আসান হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে বুমরাহ’র বোলিং যদি শিল্পীর তুলির আঁচড় হয়, তাহলে মহম্মদ শামি (Mohammed Shami) ছিলেন ভয়ঙ্কর সুন্দর। প্রথম ৪ ম্যাচ সুযোগই পান নি। ফিরে এসে ৭ ম্যাচে তুলে নেন ২৪ উইকেট। মাত্র ১০.৭১ গড়ে প্রায় অসম্ভব’এক সম্ভব করেছেন তিনি। হয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী। বিশ্বকাপের এক মাস পর টিম ইন্ডিয়ার দুই ‘তুরুপের তাস’-এর বোলিং বিশ্লেষণ করতে বসলেন প্রশিক্ষক পরশ মামব্রে (Paras Mhambrey)।
Read More: IPL 2024: এই ৩ তুখোড় খেলোয়াড়কে ছেড়ে দিয়ে বড় ভুল করে ফেললো দিল্লি ক্যাপিটালস, ট্রফি জয়ের স্বপ্নের ঘটবে সলীল সমাধি !!
শামিতে মজে পরশ মামব্রে-
মহম্মদ শামি’র (Mohammed Shami) সাথে ভারতীয় বোলিং কোচ পরশ মামব্রে’র (Paras Mhambrey) সম্পর্ক বেশ ভালো। বিশ্বকাপে উইকেট নিয়ে নিজের মাথার দিকে ইঙ্গিত করে এক বিশেষ ভঙ্গিতে উদযাপন করতে দেখা গিয়েছিলো শামি’কে (Mohammed Shami)। পরে শুভমান গিল জানান ঐ বিশেষ ‘সেলিব্রেশন’ ছিলো বোলিং কোচের জন্যই। প্রিয় ছাত্রের প্রশংসায় মাতলেন গুরু’ও। মুম্বইতে পিটিআই’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যদি আমি বলি যে কোনো কোচ শামির মত বোলার তৈরি করতে পারেন, তাহলে আমি মিথ্যা বলবো। যদি কোনো বোলার শামির মত সিম সোজা রেখে বল’কে ল্যান্ড করাতে পারে, তাহলে সকলেই তো শামি হয়ে যাবে।”
সিম পজিশনিং-এর ক্ষেত্রে নিজের দলের সতীর্থদের থেকেও যে বাংলার পেসার অনেকখানি এগিয়ে তা ইঙ্গিতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন মামব্রে (Paras Mhambrey)। ভারতীয় বোলিং-এর ‘বড়ে নবাব’কে নিয়ে উচ্ছ্বসিত মামব্রে। তিনি জানান, “এই দক্ষতাটা শামির অবিরাম পরিশ্রমের ফসল। ও নিজেই নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলেছে। লাগাতার অমন নিখুঁত কবজির পজিশন রেখে সিমের উপর বল ল্যান্ড করানো এবং তাকে দুই দিকে নড়াচড়া করানোর দক্ষতা খুবই বিরল। অনেক বোলার সিমের উপর বলকে ল্যান্ড করাতে পারলেও আমরা দেখি যে বল পিচে পড়ার পর সোজা থেকে যায় (স্যুইং করে না)।“
বুমরাহ’র জন্যও প্রশংসার ডালি সাজালেন পরশ-
দলের আরেক পেসার জসপ্রীত বুমরাহ’কেও (Jasprit Bumrah) শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বোলিং কোচ। চোট সারিয়ে ফিরে এসে যেভাবে দলের বোলিং বিভাগকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন পরশ মামব্রে (Paras Mhambrey)। পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শামির (Mohammed Shami) সাথে তুলনা টেনে এনেই ভারতের বোলিং কোচ বলেন, “(জসপ্রীত) বুমরাহ’ও নিজের স্বতন্ত্র বোলিং অ্যাকশনের সৌজন্যে বল’কে ভেতরের দিকে বা বাইরের দিকে নিয়ে যেতে পারে অ্যাকশনে কোনোরকম বদল ছাড়াই। এটা একটা শিল্প। এর উপর দক্ষতা অর্জন করতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়।”
সামনের ১৪ মাসে সাদা বলের ক্রিকেটের চেয়ে ঢের বেশী টেস্ট ম্যাচ খেলতে হবে টিম ইন্ডিয়াকে। সেই বিষয়টি মাথায় রয়েছে পরশ মামব্রে’র (Paras Mhmabrey)। টেস্টে শামি-বুমরাহ জুটির সাথে একই আসনে তিনি রেখেছেন ঈশান্ত শর্মাকে। সাক্ষাৎকারে জানান, “আমার মনে হয় টেস্টে আমাদের হাতে (জসপ্রীত) বুমরাহ, (মহম্মদ) শামি ও ঈশান্ত (শর্মা) ছিলো। যারা এমন জাদু সৃষ্টি করত।” ভারতীয় বোলিং বিভাগের সাফল্য অভাবনীয়। জানিয়েছেন গর্বিত কোচ। সাক্ষাৎকারের একদম শেষে তিনি বলেন, “আপনি যদি আমায় জিজ্ঞাসা করেন আমি এই দাপট আশা করেছিলাম কিনা, তাহলে বলবো যে স্বপ্নেও এতটা আশা করি নি।”