শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত টি-২০ সিরিজে পরীক্ষানিরীক্ষার পথে গিয়েছিলো ভারত। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের বাইরে রেখে জায়গা করে দেওয়া হয়েছিলো শিভম মাভি, শুভমান গিলদের মত নতুন মুখদের। একই সাথে স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলেন বাংলার মুকেশ কুমারও (Mukesh Kumar)। সিরিজে একাধিক নয়া মুখকে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যায়। শিভম মাভি (Shivam Mavi), শুভমান গিল, রাহুল ত্রিপাঠীদের (Rahul Tripathi) হাতে টি-২০ দলের টুপি তুলে দেয় ভারত। স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় বাংলার পেসারের। হর্ষল, অর্শদীপরা ছন্দ হারালেও জায়গা হয় নি মুকেশের। তিন ম্যাচের একটিতেও ভারতের নীল জার্সিতে দেখা যায় নি তাঁকে। ভারত-এ দলের হয়ে নিয়মিত ভালো পারফর্ম করলেও ভাবা হয় নি মুকেশের (Mukesh Kumar) কথা। ভারত ২-১ ফলে সিরিজ জিতলেও অভিষেক না করার অতৃপ্তি নিয়েই ঘরে ফিরতে হয়েছে তাঁকে। তবে এই না পাওয়ার যন্ত্রণাকে জেদে পরিবর্তন যে ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন বাংলার পেসার, তা বরোদার বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফি ম্যাচে বুঝিয়ে দিলেন তিনি। আগুনে বোলিং করে মুকেশ বুঝিয়ে দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বেশীদিন দূরে রাখা যাবে না তাঁকে।
আগুনে বোলিং মুকেশ কুমারের, বেকায়দায় বরোদা-

জন্ম বিহারের গোপালগঞ্জে হলেও বাংলার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar)। অল্প বয়সে ক্রিকেটের টানে পাশের রাজ্য থেকে এসেছিলেন কলকাতায়। তারপর ‘সিটি অফ জয়’-ই এখন তাঁর ঘরবাড়ি। বাংলার হয়ে খেলেই ভারত-এ দলের প্রতিনধিত্ব করেছেন তিনি। বর্তমানে কড়া নাড়ছেন সিনিয়র জাতীয় দলের দরজায়। রঞ্জি ট্রফির এলিট পর্বের গ্রুপ-এ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বরোদা এবং বাংলা। ভারতীয় দল থেকে ফিরেই খেলায় নেমে পড়েছেন মুকেশ। শুধু খেলছেন না, বল হাতে রীতিমত আগুন ঝরাচ্ছেন তিনি। বরোদা ইনিংসের শুরুতেই প্রত্যূষ কুমারকে শূন্য রানে আউট করেন তিনি। ক্যাচ তালুবন্দী করেন তরুণ উইকেটরক্ষক অভিষেক পোড়েল (Abhishek Porel)। এরপর বরোদা অধিনায়ক বিষ্ণু সোলাঙ্কিকেও (Vishnu Solanki) আউট করেন তিনি। ফিরিয়ে দেন শাশ্বত রাওয়াতকেও। তিন স্তম্ভকে হারিয়ে রীতিমত চাপে পড়ে যায় বরোদা। ইনিংসের শুরুতেই মুকেশ যে আঘাত দিয়েছিলেন তা সামলাতে না পারায় ২৬৯ রানেই শেষ হয়ে যায় তাদের ইনিংস।
অটো ড্রাইভারের সন্তান থেকে IPL-এর উড়ান মুকেশের-

মুকেশ কুমারের (Mukesh Kumar) বাবা পেশায় একজন অটো ড্রাইভার। ক্রিকেটের পাশাপাশি ঘর চালানোর জন্য একটা চাকরি খুঁজতে বিহার ছেড়ে কলকাতায় এসেছিলেন মুকেশ। আর এখন তিনি কোটিপতি ক্রিকেট লীগের সদস্য। বাংলা দলের ট্রায়ালে মুকেশকে মনে ধরেছিলো কোচ রণদেব বোসের। তাঁর হাত ধরেই উত্থান এই ডান হাতি পেসারের। ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলা দলের জার্সিতে রঞ্জি ফাইনাল খেলেছেন তিনি। ২০১৫ সালে অভিষেক হয় তাঁর। এখনও অব্দি ৩৩ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ১২৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ঘরোয়া টি-২০ তে ২৩ ম্যাচে রয়েছে ২৫ উইকেট। ইকোনমিও বেশ ভালো। মাত্র ৭.২০। সুযোগ পেয়েছেন ভারতের ‘এ’ দলেও। গত মরসুমে তিনিও দিল্লী ক্যাপিটালসের (DC) নেট বোলার হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে দেখে কর্তৃপক্ষের যে বেশ মনে ধরেছিলো তা বেশ বোঝা গেলো গত ২৩ ডিসেম্বরের মিনি নিলামে। মুকেশের (Mukesh Kumar) বেস প্রাইস ছিলো মাত্র ২০ লাখ। সেখান থেকে ৫.৫ কোটিতে দিল্লী দলে সই করলেন তিনি। মুকেশকে দলে নিতে লড়াইতে ছিলো চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) এবং পাঞ্জাব কিংসও(PBKS)। দুই কিংস দলকে হারিয়ে শেষ হাসি অবশ্য ক্যাপিটালসদেরই।