ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরাদের তালিকায় নিঃসন্দেহে উপরের দিকেই জায়গা হবে মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni)। ঝাড়খণ্ডের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার দীর্ঘ দেড় দশক ধরে টিম ইন্ডিয়ার মসীহা হিসেবে থেকেছেন। কখনও ব্যাট হাতে, আবার কখনও উইকেটের পিছন থেকে কঠিন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন নিমেষেই। সর্বোপরি অধিনায়ক ধোনির (MS Dhoni) মগজাস্ত্রের জোরে ভারতীয় দল স্পর্শ করেছে সাফল্যের একের পর এক শৃঙ্গ। ২০০৭ সালে নেতা হিসেবে তার কেরিয়ারের শুরুটাই হয়েছিলো টি-২০ বিশ্বকাপ জয় দিয়ে। এরপর একে একে জিতেছেন একদিনের বিশ্বকাপ, জিতেছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। টেস্ট ক্রিকেটে ভারতকে নিয়ে গিয়েছেন আইসিসি তালিকার এক নম্বরে।
২০১৯-এর পর আর ভারতের জার্সিতে দেখা যায় নি তাঁকে। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন। শেষ করেছেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। প্রায় চার বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেললেও অনুরাগীদের মনে ধোনির আসন এখনও গ্রহণ করতে পারেন নি অন্য কেউ। আজও কঠিন পরিস্থিতিতে ‘ফিনিশার’ ধোনির (MS Dhoni) অভাব মাঠে অনুভব করেন দর্শকেরা। আইপিএল এখনও খেলছেন তিনি। চল্লিশ পেরোনো ‘মাহি’কে ব্যাট হাতে দেখতে গ্যালারি এই বছর পরিপূর্ণ ছিলো প্রত্যেক ম্যাচেই।
মগজাস্ত্রেও যে বিন্দুমাত্র মরচে পড়ে নি তা ২০২৩-এর আইপিএল জিতিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি। ধোনির পঞ্চম আইপিএল জয়ের পর থেকেই জাতীয় দলের সাথে তাঁকে জুড়ে দেওয়ার দাবী উঠছে। লাগাতার বড় প্রতিযোগিতায় মুখ থুবড়ে পড়া ভারতকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারে ধোনির (MS Dhoni) ‘মিডাস টাচ’। মনে করছেন অধিকাংশ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। তবে এই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে হইচই ফেলে দিলেন ভারতীয় প্রাক্তনী মহম্মদ কাইফ (Mohammad Kaif)। ধোনিকে টিম ইন্ডিয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
Read More: টিম ইন্ডিয়ার জন্য সুখবর, বিশ্বকাপের আগেই পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠলেন ঋষভ পন্থ !!
তোপের মুখে বর্তমান কোচ দ্রাবিড়-
অনূর্দ্ধ-১৯ দলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। সিনিয়র দলেও একই সাফল্য নিয়ে আসবেন তিনি, এই স্বপ্ন সঙ্গে করেই তাঁর হাতে কোহলি, রোহিতদের হেডস্যারের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলো বিসিসিআই। এখনও অবধি তিনটি বড় টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও দ্রাবিড়ের ভারতকে ব্যর্থই বলতে হয়। এশিয়া কাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের পর সমালোচিত হয়েছেন কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও (Rahul Dravid)। এর আগে টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে পরাজয়ের পিছনে দ্রাবিড়ের অত্যধিক রক্ষণাত্মক গেমপ্ল্যান আর প্ল্যান-বি’র অভাবকে দায়ী করা হয়েছিলো। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ হারের পিছনেও একই কারণ খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট র্যাঙ্কিং-এ এক নম্বরে থাকা রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে (Ravichandran Ashwin) না খেলিয়ে চার পেসারকে প্রথম একাদশে রেখেছিলেন দ্রাবিড়। এই পরিকল্পনা ম্যাচে ব্যুমেরাং হয়ে ফেরে। প্রতিপক্ষের নাথান লিয়ঁ যেখানে চতুর্থ ইনিংসে চার উইকেট নিয়ে ভাঙলেন টিম ইন্ডিয়ার মেরুদণ্ড, সেখানে বিশ্বের সেরা অফস্পিনারকে পাঁচ দিন কাটাতে হয়েছে রিজার্ভ বেঞ্চে। এই বিষয়ে ম্যাচ শেষে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) প্রশ্ন করেন দ্রাবিড়কে। কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি। এছাড়াও টসে জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। ভারতের স্ট্র্যাটেজি দেখে বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক রিকি পন্টিং (Ricky Ponting) অবধি বলতে বাধ্য হন, “মনে হচ্ছে ভারত প্রথম দিনের কথা ভেবে দল সাজিয়েছে। কিন্তু টেস্ট ম্যাচ তো পাঁচ দিনের।”
ধোনির প্রয়োজন নেই, বলছেন কাইফ-
কোচ হিসেবে রাহুল দ্রাবিড়ের একটানা ব্যর্থতার পর দাবী উঠেছে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে (MS Dhoni) ফেরানোর। দলে খেলোয়াড় হিসেবে না হলেও নিদেনপক্ষে মেন্টরের ভূমিকায় তাঁকে চাইছেন অধিকাংশ সমর্থক। অক্টোবরের ৫ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ। এই বছর দেশের মাঠেই বসতে চলেছে আসর। ২০১১-এর পর আবার খেতাব জয়ের জন্য ধোনির (MS Dhoni) শরণাপন্ন হতে টিম ইন্ডিয়াকে পরামর্শ দিচ্ছেন ক্রিকেট অনুরাগীরা। তাঁর অভিজ্ঞতা, বড় টুর্নামেন্টে সাফল্যের হার ‘মেন ইন ব্লু’কে সাফল্যের মুখ দেখাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ধোনিম্যানিয়ায় গা ভাসাতে রাজী নন মহম্মদ কাইফ (Mohammad Kaif)। ২০০২-এর ন্যাটওয়েস্ট ফাইনালের নায়ক ভরসা রাখছেন বর্তমান ভারতীয় কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) উপরেই।
এক সাক্ষাৎকারে কাইফ (Mohammad Kaif) বলেছেন, “ধোনি দুর্দান্ত খেলেছে। কিন্তু আমি মনে করি রোহিত শর্মার মত অধিনায়ক এবং (ভারতীয় দলের) বাকিরাও যথেষ্ট দক্ষ। রাহুল দ্রাবিড় আপনার দলের কোচ, এর থেকে বেশী কি আর চাওয়ার আছে? আইসিসি টুর্নামেন্টে ধোনির সাফল্যের হার দুর্দান্ত হওয়ায় ওর অভাব নিঃসন্দেহে অনুভূত হয়। আমি মনে করি রোহিত শর্মা এই দলকে জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ওর হাতে একঝাঁক প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছে।”