World Cup 2023: দুর্বার গতিতে ছুটছে টিম ইন্ডিয়া। চেন্নাইয়ের এম এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপে (ICC World Cup 2023) যাত্রা শুরু হয়েছিলো ভারতীয় দলের। এরপর গ্রুপ পর্বে সকল প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে তারা জায়গা করে নিয়েছিলো সেমিফাইনালে। শেষ চারের দ্বৈরথে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিলো নিউজিল্যান্ড। কিউইরা নক-আউট ম্যাচে বরাবরই শক্ত গাঁট ভারতের। কিন্তু মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে স্নায়ুর চাপ সামলে দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে নেয় টিম ইন্ডিয়া। ৭০ রানের ব্যবধানে জিতে পা রাখে খেতাবী যুদ্ধে। রবিবার অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ট্রফি জিতে বৃত্ত সম্পূর্ণ করার সুযোগ থাকছে ভারতীয় দলের সামনে।
সিনিয়র ও জুনিয়রদের দুর্দান্ত ভারসাম্য রয়েছে এই ভারতীয় দলে। ব্যক্তিগত অর্জনকে পিছনে রেখে দলগত সাফল্যের দিকেই ঝুঁকছেন সকলে। রোহিত শর্মাকে (Rohit Sharma) দেখা যাচ্ছে প্রতি ম্যাচেই ঝোড়ো ইনিংস খেলে দলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দিতে। বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ফর্ম সমস্যা কাটিয়ে ফের দেখা দিয়েছেন রান মেশিন অবতারে। প্রথম চার ম্যাচে খেলারই সুযোগ পান নি মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। ফিরে এসে অবিশ্বাস্য বোলিং করে হয়ে উঠেছেন টিম ইন্ডিয়ার সাফল্যের অন্যতম কারণ। তরুণ শ্রেয়স আইয়ার, শুভমান গিল’রাও ব্যাট হাতে ভরসা যুগিয়েছেন দলকে। রোহিত-বিরাট-শামিদের ঘিরে হাজার ফ্ল্যাশবাল্বের আলো রয়েছে বর্তমানে। যার ফলে দারুণ পারফর্ম্যান্স করেও যেন খানিক আড়ালেই থেকে গিয়েছেন কে এল রাহুল (KL Rahul)। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনাল অবধি সফরে রাহুলের অবদান’ও নেহাত কম নয়।
Read More: World Cup 2023: চক দে’র ‘কবির খান’ হবেন রাহুল দ্রাবিড়, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে করবেন প্রায়শ্চিত্ত !!
ধোনির জুতোয় পা গলিয়েছেন কে এল রাহুল-

মাসখানেক আগে অবধিও অফ ফর্মের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছিলো কে এল রাহুলকে (KL Rahul)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হোক বা আইপিএল, সাফল্যের মুখ দেখছিলেন না তিনি। জোরালো হচ্ছিলো তাঁকে বাদ দেওয়ার দাবী। এমনকি আইপিএল খেলতে গিয়ে চোটের কবলেও পড়েন তিনি। ছিটকে যান ক্রিকেটের বাইশ গজ থেকে। এরপর অস্ত্রোপচার, রিহ্যাব সেরে মাঠে ফিরতে পারেন গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়। এশিয়া কাপের (Asia Cup 2023) সুপার ফোর পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলো দল। শেষ মুহূর্তে শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer) চোট পাওয়ায় সুযোগ মেলে রাহুলের। অনবদ্য শতরান করে সেইদিনই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সেরা ফর্মকে সঙ্গী করেই ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন তিনি।
এরপর এশিয়া কাপের বাকি ম্যাচগুলিতে ভারতীয় মিডল অর্ডারের স্তম্ভ হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে রাহুলকে। বিশ্বকাপেও তিনিই ‘ফার্স্ট চয়েজ।’ তাঁর পছন্দের জায়গা ওপেনিং। কিন্তু টিম কম্বিনেশনের জন্য খেলতে হচ্ছে পাঁচে। দলের প্রয়োজনে হাতে তুলে নিয়েছেন কিপিং দস্তানাও। বিশেষজ্ঞ কিপার না হয়েও স্রেফ অধ্যবসায় এবং ফিটনেসকে পুঁজি করে উইকেটের পিছনে নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছেন রাহুল। যেভাবে নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ডেভন কনওয়েকে দস্তানাবন্দী করলেন, তা দেখে নিঃসন্দেহে খুশি হবেন স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনিও (MS Dhoni)। বিশ্বকাপে (ICC World Cup 2023) এখনও অবধি ১৫টি ক্যাচ এবং ১টি স্টাম্পিং রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। একমাত্র ক্যুইন্টন ডি কক ছাড়া তাঁর থেকে বেশী শিকার নেই কোনো উইকেটেরক্ষকের ঝুলিতেই। কিপিং-এর পাশাপাশি নিজের ব্যাটিং মাহাত্ম্যেও বিশ্বকাপকে রঙিন করে তুলেছেন রাহুল (KL Rahul)। ৭৭ গড়ে করেছেন ৩৮৬ রান।
DRS-এ নিখুঁত রাহুল, কাজ সহজ করছেন রোহিতের-

বর্তমান ক্রিকেটে দলগুলির অন্যতম অস্ত্র ডিআরএস বা ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম। মাঠের আম্পায়ারের ভুলত্রুটি থাকলে প্রযুক্তির সাহায্যে সেই সমস্যার সমাধান হতে পারে ডিআরএসের মাধ্যমে। মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni) যতদিন ছিলেন ডিআরএস-এর সঠিক ব্যবহার নিয়ে বিশেষ চিন্তিত হতে হত না টিম ইন্ডিয়াকে। নিখুঁত রেফারেল ব্যবহারের জন্য ডিআরএস-কে অনেকেই ডাকতেন ধোনি রিভিউ সিস্টেম নামে। কিন্তু উইকেটের পিছন থেকে সাত নম্বর জার্সিধারীর বিদায়ের পর এই নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা গিয়েছিলো। রাহুল (KL Rahul) দস্তানার দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার পর সেই চিন্তা অনেকটাই মিটেছে। চলতি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যেভাবে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে দুষ্মন্ত চামিরা’কে সাজঘরে পাঠান রাহুল, তার পর অধিনায়ক রোহিত জানাতে বাধ্য হয়েছেন যে তিনি ডিআরএস সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত রাহুল এবং বোলারদের কাঁধে ন্যস্ত করেছেন।
কেন রিভিউ’তে এতখানি নিখুঁত রাহুল (KL Rahul)? প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন প্রাক্তন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার দীপ দাশগুপ্ত (Deep Dasgupta)। তাঁর মতে রাহুলের সাফল্যের প্রধান কারণ উইকেটের পিছনে তাঁর ফুটওয়ার্ক। সবসময় তৎপর থাকেন কর্ণাটকের ক্রিকেটার, যা ডিআরএসের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা করে রাহুলকে। দীপ আরও বলেন, “ডিআরএস পুরোপুরি উইকেটরক্ষকের সিদ্ধান্ত হয় না। বলের ইমপ্যাক্ট (বল পিচে কোথায় পড়েছে) এবং উচ্চতা অনুমান করা উইকেটরক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়। সাধারণত ইমপ্যাক্ট কোথায় হয়েছে তা বোলার অথবা মিড অন, মিড অফে দাঁড়ানো অধিনায়ক খেয়াল রাখেন। স্কোয়ার লেগ আম্পায়ারের পাশে দাঁড়ানো ফিল্ডারের কাজ উচ্চতার খেয়াল রাখা। উইকেটরক্ষক অনুমান করতে পারেন যে বলটা কোথায় গিয়ে থামতে পারে। ধোনি এই কাজটা খুব ভালো পারতেন বলেই এত সফল।”