IPL 2024: অবশেষে দুঃস্বপ্নের মরসুমে ইতি টানলো মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI)। ২০২০ সালে শেষবার আইপিএল (IPL) জিতেছিলো তারা। এরপর টানা চার বছর ট্রফিজীনই থাকতে হলো তাদের। গত মরসুমে প্লে-অফে পা রাখলেও ছিটকে যেতে হয়েছিলো দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে গুজরাত টাইটান্সের (GT) বিরুদ্ধে হেরে। এবার প্লে-অফ দূরের কথা, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI) মরসুম শেষ করলো দশ দলের লীগে শেষতম হয়ে। এই নিয়ে গত তিন বছরের মধ্যে দুইবার লীগ তালিকার ‘লাস্ট বয়’ হলো পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। গত দশকে একটানা সাফল্যের পর এই দশকে পারফর্ম্যান্সের গ্রাফ এমন মুখ থুবড়ে পড়ায় নিশ্চয়ই চিন্তায় পড়বেন দল মালিক আম্বানিরা।
গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে হার দিয়ে আইপিএল মরসুমের শুরুটা করেছিলো মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। শেষটাও করলো পরাজয় দিয়েই। এবার প্রতিপক্ষ ছিলো লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস (LSG)। গতকাল ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে করুণ পরিণতি দিয়েই শেষ হলো মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মরসুম। টসে জিতে প্রথমে প্রতিপক্ষ লক্ষ্ণৌকে ব্যাটিং-এর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো মুম্বই। দেবদত্ত পাডিক্কাল ফেরেন ০ রান করে। তবে কে এল রাহুল (KL Rahul) ও নিকোলাস পুরানের জোড়া অর্ধশতক ২০ ওভারে লক্ষ্ণৌকে পৌঁছে দেয় ২১৪ রানে। জবাবে রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও নমন ধিরের দুর্দান্ত প্রয়াস সত্ত্বেও ১৯৬তে থামে মুম্বই। হারতে হয় ১৮ রানে। লীগ তালিকায় দশম হওয়ার লজ্জার সাথে সাথে আগামী মরসুমের জন্যও চিন্তা বাড়লো তাদের। নির্বাসনের শাস্তি পেলেন হার্দিক পান্ডিয়া।
Read More: IPL 2024: ফাইনাল খেলার আগেই আবারও ধাক্কা নাইট শিবিরে, ধোঁকা দিলো এই কোটি টাকার খেলোয়াড় !!
নির্বাসিত হার্দিক, দুশ্চিন্তায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-
২০১৫ সালের আইপিএলে (IPL) মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI) জার্সিতে প্রথম মাঠে নেমেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। এরপরের বছরগুলোয় দলের অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু মুম্বই-হার্দিক সম্পর্কে বিচ্ছেদ দেখা যায় ২০২১ সালের পর। ২০২২-এর আইপিএলে তিনি নাম লেখান গুজরাত টাইটান্সে। সেখানে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে প্রমাণ করেন নিজেকে। প্রথম মরসুমে জেতেন ট্রফি, দ্বিতীয় মরসুমে দলকে এনে দেন রানার্স-আপ শিরোপা। তবে গুজরাতেও দীর্ঘস্থায়ী হন নি তিনি। এই মরসুমের আগেই ট্রেডিং পদ্ধতিতে বিপুল অর্থের বিনিময়ে তাঁকে দলে ফেরায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। দীর্ঘদিনের অধিনায়ক রোহিত শর্মা’কে (Rohit Sharma) সরিয়ে দিয়ে হার্দিকের হাতেই তুলে দেওয়া হয় অধিনায়কত্বের ব্যাটন।
মরসুমের শুরু থেকেই অধিনায়ক হার্দিককে (Hardik Pandya) নিয়ে বিতর্ক ছিলো। মাঠের পারফর্ম্যান্স আহামরি ছিলো না তাঁর। আইপিএলের শেষটাও হার্দিকের হলো অনভিপ্রেত ভাবে। স্লো ওভার রেটের জন্য শাস্তি পেলেন তিনি। এর আগে দুইবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওভার শেষ করতে পারে নি মুম্বই ফ্র্যাঞ্চাইজি। যার ফলে যথাক্রমে ১২ ও ২৪ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিলো তাঁকে। তৃতীয়বার একই অপরাধ করে ‘কোড অফ কন্ডাক্ট’ ভেঙেছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI)। খেসারত দিতে হচ্ছে অধিনায়ককেই। ৩০ লক্ষ টাকা ও ১ ম্যাচের নির্বাসনের সাজা পেয়েছেন তিনি। আগামী মরসুমের প্রথম ম্যাচটি খেলা হবে না তাঁর। দলের বাকিদের বাকিদের ১২ লক্ষ টাকা বা ম্যাচ ফি’র ৫০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম তত টাকা জরিমানা দিতে হবে।
হতশ্রী পারফর্ম্যান্স ক্যাপ্টেন হার্দিকের-
সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে সাফল্য এনে দিতে পারলেন না হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। রোহিতের মত নক্ষত্রকে সরিয়ে তাঁর হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিলো। সেই কারণে এমনিতেই সমর্থকদের একটা বড় অংশের কাছে ‘ভিলেন’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গ্যালারি থেকে হার্দিকের উদ্দেশ্যে উড়ে এসেছে বাছাই করা সব বিশেষণ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কটুক্তির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করতে পারতেন ব্যাট বা বল হাতে নিজের পারফর্ম্যান্স দিয়ে। কিন্তু সেখানেও চূড়ান্ত ব্যর্থ তিনি। ১৪ ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ মোটে ২১৬ রান। গড় কেবল ১৮। একটিও অর্ধশতক করে উঠতে পারেন নি তিনি। বল হাতেও হালত তথৈবচ। ১৪ ম্যাচে প্রায় ১১ ইকোনমি ও ৩৬ গড়ে নিয়েছেন ১১ উইকেট।
পরিসংখ্যান বিপক্ষে যাচ্ছে হার্দিক পান্ডিয়ার (Hardik Pandya)। এছাড়াও নেতা হিসেবেও তাঁকে বিশেষ নম্বর দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। জসপ্রীত বুমরাহ’র মত বোলারকে শুরুতে ব্যবহার না করে নিজে নতুন বল হাতে তুলে নেওয়া, ব্যাটিং অর্ডারে বারবার অপ্রয়োজনীয় রদবদল করার মত নানা সিদ্ধান্তের পিছনে যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই। এছাড়াও খেলা শেষে খারাপ পারফর্ম্যান্সের দায় অনেক সময়ই নিজের উপর না নিয়ে হার্দিককে দেখা গিয়েছে সতীর্থদের কোর্টে বল ঠেকে দিতে। আদর্শ অধিনায়কের এহেন আচরণ করা উচিৎ নয় বলে সরব হয়েছেন অনেকে। হার্দিকের আচরণে অশান্তির ঝড় মুম্বই সাজঘরে, সংবাদমাধ্যম সূত্রে মিলেছে এমন তথ্য’ও। এই জটিলতা থেকে হার্দিক ও মুম্বই কি করে বেরিয়ে আসেন, নজর এখন সেদিকেই।