২০২৪-এর আইপিএলের (IPL) অন্যতম হাইভোল্টেজ দ্বৈরথ ছিলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) বনাম চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) ম্যাচ’টি। লীগ তালিকার ৬৮তম ম্যাচ ছিলো সেটি। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে লীগ তালিকায় চার নম্বরে ছিলো মহেন্দ্র সিং ধোনি’র (MS Dhoni) চেন্নাই। আর ১২ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে ছিলো বেঙ্গালুরু। সূক্ষ্ম সুতোয় ঝুলছিলো প্লে-অফে পা রাখার বিষয়টি। ম্যাচ হারলেও নেট রান রেটে এগিয়ে থাকার সৌজন্যে শেষ যাওয়ার সুযোগ ছিলো সিএসকে-র সামনে। ব্যবধান যাতে ১৮ রানের বেশী না হয়, নজর রাখতে হত তা। অন্য দিকে বিরাট কোহলি, ফাফ দু প্লেসিদের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের জন্য কেবল জয় যথেষ্ট ছিলো না। প্রয়োজন ছিলো অন্তত ঐ ১৮ রানের ব্যবধান’ও। রোমহর্ষক মোকাবিলা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছিলো চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। সেই উত্তাপ ছড়িয়েছিলো ক্রিকেটারদের মধ্যেও।
Read More: চক্রান্তের জাল বুনেছিলেন ‘টাইগার রবি’? চমকে দেবে বাংলাদেশী ‘সুপারফ্যান’-এর কীর্তিকলাপ !!
অবিশ্বাস্য কামব্যাক সম্পূর্ণ করে RCB-
টসে জিতে সেদিন প্রথমে বেঙ্গালুরুকেই ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছিলেন চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) অধিনায়ক ঋতুরাজ গায়কোয়াড় (Ruturaj Gaikwad)। স্কোরবোর্ডে বড় রান যে প্রয়োজন তা বুঝেছিলেন কোহলিরা। তাই শুরু থেকেই ছিলেন মারমুখী। ৩ ওভার খেলা হওয়ার পর তা স্থগিত হয়ে যায় বৃষ্টির জন্য। কিছুক্ষণ পর ফের শুরু হয় বাইশ গজের দ্বৈরথ। ২৯ বলে ৪৭ করে উইকেট হারান বিরাট। অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসির (Faf du Plessis) ব্যাট থেকে আসে লড়াকু ৫৪ রান। ২৩ বলে ৪১ করেন রজত পতিদার’ও। ডেথ ওভারে জ্বলে ওঠেন ক্যামেরন গ্রিন (Cameron Green)। অজি অলরাউন্ডারের ১৭ বলে ৩৮* রানের ইনিংস রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সকে পৌঁছে দেয় ২১৮ রানে। দীনেশ কার্তিক ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল’ও যথাক্রমে ৬ বলে ১৪ ও ৫ বলে ১৬ রানের কার্যকরী ক্যামিও উপহার দেন।
প্লে-অফে পৌঁছতে গেলে ২০১ করলেই চলত চেন্নাইয়ের। কিন্তু ইনিংসের প্রথম বলেই ঋতুরাজ গায়কোয়াড় আউট হওয়ায় চাপে পড়েছিলো তারা। তিনে নামা ড্যারিল মিচেল’ও সুবিধা করতে পারেন নি। জোড়া উইকেট হারানোর পর তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো রচিন রবীন্দ্র (Rachin Ravindra) ও অজিঙ্কা রাহানের ব্যাটে। রচিন ৬১ ও রাহানে ৩৩ করে আউট হওয়ার পর ফের ৫০-৫০ হয়ে পড়েছিলো ম্যাচ। বেঙ্গালুরু বোলিং এই সময় চাপ বাড়ায় চেন্নাই সুপার কিংস ব্যাটিং-এর উপর। ডেথ ওভারে রবীন্দ্র জাদেজা অপরাজিত ৪২ ও মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni) ঝোড়ো ২৩ রান করলেও শেষরক্ষা হয় নি। যশ দয়ালের অনবদ্য ২০তম ওভার চেন্নাইকে আটকে দেয় ১৯১ রানে। ২৭ রানে হেরে ছিটকে যাত তারা। মরসুমের প্রথম আট ম্যাচের মধ্যে ৭টি হেরেছিলো বেঙ্গালুরু (RCB)। এরপর টানা ছয়টি জয় ছিনিয়ে নিয়ে তারা পা রাখে প্লে-অফে।
মেজাজ হারিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি-
কিংবদন্তি মহেন্দ্র সিং ধোনি’কে সাধারণত ঠাণ্ডা মাথার মানুষ বলেই চেনে ক্রিকেটবিশ্ব। যখন অধিনায়ক ছিলেন তখন চাপের মুখেও স্নায়ুর উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারতেন তিনি। সেই কারণেই অনুরাগীরা ডাকেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ বলে। মাঠে মেজাজ হারাতে তাঁকে বড় একটা দেখা যায় না। কিন্তু ২০২৪-এর আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে নাকি ঘটেছিলো সেই বিরল ঘটনাই। বিতর্কের সূত্রপাত খেলা শেষ হওয়ার একদম পরেই। ক্রিকেটীয় সৌজন্যের খাতিরে প্রতিটি ম্যাচ শেষেই বিজয়ী ক্রিকেটাররা হাত মেলান বিজিত দলের খেলোয়াড়দের সাথে। পরাজয়ের পর যখন মাঠ ছাড়ছিলেন ধোনি (MS Dhoni), তখন তিনি অপেক্ষা করেছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ক্রিকেটারদের জন্য। কিন্তু হাত মেলাতে কেউই এগিয়ে আসেন নি তাঁর দিকে। সকলেই ব্যস্ত ছিলেন সেলিব্রেশনে। কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকার পর মাঠ ছাড়েন ‘বিরক্ত’ তারকা।
হ্যান্ডশেক নিয়ে বিতর্কের খবর প্রকাশিত হয়েছিলো গত ২০ মে, অর্থাৎ ম্যাচের পরের দিনই। কিন্তু এর পরেও যে বিতর্কিত ঘটনা বেশ কিছু ঘটেছে তা এতদিন ছিলো আড়ালে। অবশেষে মিলেছে তার সন্ধান। একটি ক্রীড়া সংস্থার অনুষ্ঠানে দাবী করা হয়েছে যে সেদিন এতটাই রেগেছিলেন ধোনি (MS Dhoni) যে সাজঘরে ফেরার পথে দেওয়ালে মুষ্টাঘাত অবধি করেন। একইসাথে তিনি একটি চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের একটি টিভি’ও রাগের মাথায় ভেঙে ফেলেন বলে দাবী করা হয়েছে। এই খবর নাকি সামনে এসেছে প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং সূত্রে, এমনটাই শোনা গিয়েছে ঐ ভিডিও’তে। আইপিএলে (IPL) এর আগে একবার আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অখুশি ধোনি (MS Dhoni) ডাগ-আউট থেকে মাঠে নেমে এসেছিলেন, পড়েছিলেন শাস্তির মুখে। টিভি ভাঙার ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা, নজর থাকবে সেদিকে।
দেখে নিন ঐ ভিডিও’টি-
Captain Cool dhobi 😭😭😂pic.twitter.com/kor3OjpGgL
— Abhishek (@down_the_leg) September 29, 2024